মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপজেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটি শ্রীমঙ্গল সদস্যদের ২দিন ব্যাপী সতেজকারক(রিফ্রেশার) প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
গত শনিবার (১৫জুলাই) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস মিলনায়তনে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রকল্প’-এর আওতায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও ক্রিশ্চিয়ান এইড’র কারিগরি সহযোগিতায় এনজিও প্রতিষ্ঠান ওয়েভ ফাউন্ডেশন এ প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
উপজেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটির চেয়ারপার্সন শিক্ষিকা কাজী আছমা আক্তার এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে কাজ করা সংগঠন সমূহের জোট ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’-এর সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কমিটির সদস্য সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি’র (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো: আব্দুর রউফ তালুকদার।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো: শাহ জাহান মিয়া ও ডিভিশনাল এসিস্ট্যান্ট ফ্যাসিলেটেটর জুবায়ের আহমেদ প্রশিক্ষণের সূচনা দিনে উপজেলা এডভোকেসি নেটওয়ার্ক কমিটির ২৫ জন সদস্যাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
২ দিনের প্রশিক্ষণে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, এডভোকেসি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সহায়তায় এবং “ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স” এর উদ্যোগে সিলেট বিভাগের ২৫ চা বাগানে বাস্তবায়িত ‘লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস (লিডার)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘ’এর ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৩ জুলাই শ্রীমঙ্গলের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরীর সঞ্চালনায় ‘আমরা পারবো নারী ও কিশোরী জোটে’র অস্থায়ী কমিটির আহ্বায়ক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এর পর ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা অনলাইনে ঢাকা সকলের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি ত্রৈমাসিক সভায় উপস্থিত সিলেট বিভাগের পচিঁশটি চা বাগানের নারী ও কিশোরীদের শুভেচ্ছা জানান এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান।
চা বাগানের নারী ও কিশোরীদের সামাজিক সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়সহ বেশ কিছু সমস্যা, দূর্বলতা, ব্যর্থতা, সচেতনতার বিষয়সহ নানাবিধ ঘাটতির বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। বিশেষ করে চা বাগানে সরকার ও চা বাগান মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন কাজ করলেও নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট তৈরির বিষয়টিও জোড়ালো ভাবে আলোচনায় উঠে আসে।
অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স (বিটিএস) এর চা বাগানের কাজের অভিজ্ঞতা ও ২৫টি বাগানের নারী ও কিশোরী দলের সাথে কাজ করার প্রেক্ষাপটে চা বাগানের নারী শ্রমিক, অন্য নারী ও কিশোরীদের জন্য একটি সংগঠন চা বাগান প্রেক্ষাপটে বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যা একই সাথে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। উক্ত বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি ২০২২ শ্রীমঙ্গলে ‘আমরা পারব’ জোট এর আত্নপ্রকাশ ঘটে। চা বাগানের সকল স্তরে নারী ও কিশোরীদের নির্যাতনমুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা এই সংঘের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
• নারীর বিরুদ্ধে যেখানেই কোন অপরাধ হচ্ছে বা হবে সে বিষয়ে নিজ অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা,
• নিজ বাগানে নারী ও কিশোরীদের নিয়ে ছোট দল তৈরী করে তাদেরকে অধিকার সচেতন করা এবং দলের সদস্যদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো,
• নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতন প্রতিরোধে চা বাগানে যে সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কাজ করছে তাদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা,
• চা বাগানে পিছিয়ে পড়া নারী ও কিশোরীদের উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা,
• চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরপাদ ও ন্যায্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে কাজ করা,
• চা বাগানের শিশু ও কিশোরীদের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা,
• চা বাগানে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কাজ করা,
• চা বাগানে শ্রমিক ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সর্বস্তরের নারীর সম-মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
উল্লেখ্য যে, সিলেট বিভাগের ৩ টি জেলার ১১ টি উপজেলার ২৫ টি চাবাগানে উক্ত জোটের কার্যক্রমকে সিলেট আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংগঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি অন্যান্য অংশীজনের উপস্থিতিতে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহেদা আক্তার, মৌলভীবাজার, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, আলোয় আলো প্রকল্পের সমন্বয়কারী রুবাইয়াৎ হোসেন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা প্রভাষ নায়েক। উক্ত সম্মেলনে ২৫ টি চা বাগানের ৫০ জন নারী ও কিশোরী অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত প্রকল্পের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী বলেন, প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কয়েকটি কাজ হলো সক্ষমতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা, আমরা পারবো-নারী ও কিশোরী সংঘ গঠন, কমিউনটির চা বাগানের নারী শ্রমিক এবং কিশোরী দলে নিয়মিত মাসিক সভা আয়োজন, চা বাগানের নারী ও কিশোরী মেয়েদের জন্য জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন, জেন্ডার টক বা নারী পুরুষের বৈষম্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, সমঝোতা, যোগাযোগ এবং নেতৃত্ব উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, জেন্ডার বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সরকারি কর্তৃপক্ষ, চা বাগান মালিক ও বাচাশ্রই এর মধ্যে ডায়ালগ সেশন আয়োজন করা, স্টেকহোল্ডারদের সাথে লার্নিং শেয়ারিং মিটিং আয়োজন করা ইত্যাদি। তিনি উক্ত জোটের কার্যপরিধি আরো ছড়িয়ে দেয়া এবং এর সাথে জড়িত সকল সমমনা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি(দুপ্রক) শ্রীমঙ্গল এর মাসিক সভা অনুষ্ঠি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় মৌলভীবাজার রোডস্থ সৈয়দ ফসিউর রহমান মার্কেট এর দৃক ডের্ন্টাল পয়েন্টে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ নেসার আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হবীগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো: আব্দুর রউফ তালুকদার এর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি এ,এন,এম ওয়াহিদুজ্জামান, জয়শ্রী চৌধুরী শিখা, সদস্য মো: কাওছার ইকবাল, এস এ হামিদ, সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ, ডা. পুষ্পিতা খাস্তগীর ও দিল আফরোজ বেগম।
সভায় অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হবীগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান, বিগত দিনের এবং বর্তমানের দুপ্রক শ্রীমঙ্গলের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরো জানান, দুদকের এই সামাজিক কার্যক্রমে বিনা পারিশ্রমিকে, সেচ্ছাসেবায় এবং নিজ অর্থ খরচ করে দেশের অনেক উপজেলা থেকে শ্রীমঙ্গলের কার্যক্রম অনেক ভাল এবং প্রশংসনীয়। তিনি এধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সংগঠনের সভাপতিসহ সকল নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেন।