হারুনূর রশীদ।। দুনিয়ায় এমন বেশ কিছু জায়গা আছে যার কাহিনী শুনলে অবাক হবে যে কোন মানুষই। মানুষের প্রয়োজনে মানুষ কিই না করতে পারে। শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয় মনের চাহিদা মেটাতে মানুষ যেমন এভারেষ্টের শৃঙ্গে পৌঁছুতে পারে তেমনি জ্ঞানের চাহিদা মেটাতে গভীর সাগরতলদেশেও মানুষ আবাস গড়ার চিন্তায় জীবনের মহামূল্যবান সময় দিচ্ছে। আর সেই একই কারণে, জ্ঞানপিপাষু অদম্য মনের পিয়াস আর দেখার আগ্রহ মেটাতে চাঁদের দেশ পাড় হয়ে মানুষ এখন মঙ্গলে আবাস গড়ার চিন্তায় বিভোর। মানুষ যেমন গড়ার কারিগর তেমনি এই মানুষই ধ্বংসের একনায়ক। মানুষ এক হাতে গড়ে সুরম্য প্রাসাদ, নগর বন্দর গ্রাম; অন্যহাতে রচে তার করুণ সমাধি। সবকিছুই মানুষ ঘটায় তার প্রয়োজনে। কিন্তু প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে তার নিজের কীর্তিকে ফেলে দেয়, দিতে হয়। কারণ সময়! অবিরত বহমান শ্বাশ্বত কাল মানুষের সকল চাহিদার নিয়ামক আর নির্নায়ক। প্রয়োজনের সময় ফুরোলে যা কিছুই গৌরবের, শৌর্য্য-বির্য্যের পরিত্যক্ত ঘোষিত হয় কালের কাছে। তেমনি এক ক্ষুদে শহর “গুনকানজিমা দ্বীপ”। দুর্বৃত্ত বর্বর আমেরিকার আনবিক বোমা পরীক্ষার শহর জাপানের নাগাশাকির কাছেই এই দ্বীপটি অবস্থিত।
একসময় নাগাশাকি উপকূলের এ দ্বীপটি সারা ভূপৃষ্ঠের মাঝে সবচেয়ে বেশী বসতিপূর্ণ ক্ষুদে এক শহর ছিল। এখন সেটি এক মনুষ্যবিহীন ভুতূরে শহর। জাপানের মিটসুবিসি করপোরেশন ১৯০০সালের প্রথমদিকে এই দ্বীপশহরটিকে গড়ে তুলেছিল। তখন বিশ্বাস করা হত এবং তা ঠিকই ছিল যে, দ্বীপটি এক সমৃদ্ধ কয়লা স্তুপের উপর দাড়িয়ে আছে। ১৯৪১ সালের দিকে ক্ষুদ্র এই দ্বীপটি ৪০০,০০০ টন কয়লা হারে প্রতি বছর উৎপাদন করতো। যা কি-না জাপানের শিল্প বিকাশ ও সম্প্রসারণকে শক্তি যুগিয়েছিল। ফলে, ঘনবসতিপূর্ণ এক নগর গড়ে উঠে এই কয়লা উত্তোলনকে ঘিরে। যা অনেকের কাছে “সবুজ বিহীন শহর” বলে খ্যাত হয়ে উঠে।
এক সময় কয়লা শেষ হয়ে গেলে মিটসুবিশি খণি বন্ধ করে দেয়। মানুষও একে একে শহর ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায়। বিগত ৪০ বছর যাবৎ শহরটি পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় এ রূপ নিয়েছে। - তথ্য সূত্র: (ছবি-জর্দি মেয়ো ও মেঘ নিল।)