আওয়ামীলীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় মৌলভীবাজারে নেই দৃশ্যমান উন্নয়ন। পার্শ্ববর্তী জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সড়ক মহাসড়ক, সরকারি অফিস ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এর ছোঁয়ালাগেনি মৌলভীবাজারে। উন্নয়নে মৌলভীবাজার পিছিয়ে থাকায় জেলার সচেতন মহল এ জেলার সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি তথা রাজনৈতিক মহল ও সুশীলসমাজকে দায়ি করছেন।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, বিএনপি সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনৈতিভাবে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এ জেলা। সরকারী মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপনের জন্য দীর্ঘ দিন যাবত জেলার সচেতন মহল মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ, সেমিনার করে আসলেও নেতৃত্বের অভাবে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করছেন তারা।
বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপ থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল আঞ্চলিক মহাসড়কের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর জায়গায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শমসেরনগর বিমানবন্দরের জায়গায় এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে মেডিকেল কলেজ, শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর ও হাইল হাওরকে খনন করে উন্নয়নের আওতায় নেয়া যেত। কিন্তু দুরদর্শী নেতৃত্বের অভাবে এগুলো করা হয়নি। সিলেট বিভাগের শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের অবস্থান মৌলভীবাজারে। এখন পর্যন্ত শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনও পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হয়নি। অভিযোগ রয়েছে ইকোনমিক জোন নিয়েও বাণিজ্য করেছেন অনেক নেতা। পর্যটন জেলা হওয়ার পরেও এখাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন নেই। বরং পরিবেশ কর্মীদের আপত্তি থাকার পরেও বন কেটে সাফারি পার্ক করা হচ্ছে জেলার জুড়ী উপজেলায়। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশের পরিবেশ। এদিকে খড়স্রোতা মনু নদীর ভাঙন রোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকে হাজার কোটি টাকার “মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা” প্রকল্প পাস হয়। প্রথম ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হাজার কোটি টাকার মনুনদী প্রকল্পেও হরিলুট করেছেন অনেকে। আলোর মুখ দেখেনি কুলাউড়া-জুড়ী-বড়লেখা শাহাবাজপুর রেললাইনও।
আরো জানা যায়, জেলা সমাজসেবা, সমবায়, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি, পরিস্যংখ্যান, কর অফিস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ইসলামী ফাউন্ডেশন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভোক্তা অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর সহ জেলা পর্যায়ের অনেক দপ্তরের নিজস্ব অফিস নেই মৌলভীবাজারে। ভাড়া অফিসে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। এ অফিস গুলোর নিজস্ব জায়গায় ভবন স্থাপনের জন্য কার্যকরি উদ্যোগ নেই জনপ্রতিনিধিসহ কোন মহলেরই।
জেলার সচেতন মহল আরও বলছেন, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী এবং গণপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের মতো নিবেদিত প্রাণ নেতা না থাকায় মৌলভীবাজারের আজ এই হাল। তারা বলছেন বর্তমান নেতারা জেলার উন্নয়নের চেয়ে নিজের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। নেতারা সবাই এমপি হতে চায়।
সচেতন নাগরিকদের মূলকথা, ঢাকা থেকে তদবির করে কাজ আনার অযোগ্যতার কারণে উন্নয়নে পিছিয়ে মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ বলেন, বিগত ৫ বছরে আমার সংসদীয় আসনে প্রায় ১৭’শ কোটি টাকার অবকাঠামো গত উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার প্রকল্প মৌলভীবাজার জেলায় অনুমোদন হয়েছে। সুনামগঞ্জে পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে। আগামীতে আমাদের জেলায় মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে।
মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ বলেন, “আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি। জেলার অন্যান্য আসনের উন্নয়ন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এমপিদের।
এবিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: শাহাব উদ্দিন বলেন, মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহ জেলার উন্নয়নের দৃশ্যমান কাজগুলো নলচুঙ্গিতে(পাইপলাইন) আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সকল জেলায় ২৫০ শয্যা হাসপাতাল রয়েছে সেখানে পর্যায়ক্রমে মেডিকেল কলেজ হবে।
সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ইং