অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন নগরী
চা’য়ের দেশ শ্রীমঙ্গল
চায়ের কাপে এক চুমুক, ব্যাস শরীরের ক্লান্তি নিমিষেই দূর। চায়ের মাহাত্ম্য তো এখানেই। এক কাপ চা না হলে সকালটাই শুরু করতে পারেন না অনেকে। সকালের দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপটা লাগবেই। সকালে একবার, অফিসে এসে একবার চা পান করেই কাজ শুরু করেন প্রায় সবাই। শুধু সকাল কেন, অফিসে কাজ করতে করতে চা কিংবা বিকেলে অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যার আড্ডা অথবা আয়েশ করে টিভি দেখা-সেটাও কি চা ছাড়া চলে?
পানির পরে চা-ই বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। চা বলতে সাধারণত সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। এই চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’। ইংরেজিতে চায়ের প্রতিশব্দ হলো টি (tea)। গ্রিকদেবি থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরবর্তীতে ‘চি’ হয়ে যায় ‘চা’।
সেই চা নিয়ে বাংলাদেশেরও রয়েছে বিশাল ইতিহাস আর ঐতিহ্য। চায়ের উৎপাদন থেকে শুরু করে চা নিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সারা বিশ্বে সমাদৃত। তেমনি করে চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। চা, চা বাগান এবং চায়ের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা উঠলেই চলে আসে শ্রীমঙ্গলের নাম। দেশের অন্যতম, চা’য়ের রাজধানী খ্যাত অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশবিভুঁইয়েও সমানভাবে সমাদৃত।
চা বাগানের পাশাপাশি হ্রদ, হাওর, উঁচু নিচু পাহার, ঘন জঙ্গল, খনিজ গ্যাসকূপ আর আনারস, লেবু, পান, আগর ও রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম শ্রীমঙ্গল। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শীত প্রধান অঞ্চল, সবচেয়ে বৃষ্টি প্রধান অঞ্চল হিসেবেও রয়েছে শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি।
পুরো শ্রীমঙ্গল জুড়েই শুধু চা বাগান আর চা বাগান, মনে হবে কোনো দক্ষ শিল্পী যেন মনের মাধুরী মিশিয়ে সবুজকে সাজিয়ে রেখেছে। চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটি বিশেষ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার ছায়া তরু, যার ডালপালা, শাখা-প্রশাখায় শুনতে পাবেন রঙবেরঙের পাখির কলকাকলি, শহরের কল- কারখানা, গাড়ির শব্দ ব্যস্ততায় কোলাহল অভ্যস্তদের কাছে এটিকে বর্ণাতীত শ্রুতিমধুর লাগবে । কানাডিয়ান ফ্রিল্যান্স লেখক এন্টনি আর ডেল্টন শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একে এক খন্ড স্বর্গ বলে(স্বর্গের কাছাকাছি) আখ্যায়িত করেছেন।
শ্রীমঙ্গল শহরটি ছোট হলেও বেশ গোছানো। এই শহরের সব স্থাপনার মাঝেই নান্দনিকতার ছাপ। যে দিকেই তাকাবেন দু’চোখ জুড়ে দেখবেন চায়ের বাগান। যা দেখলে চোখ জুড়ে খেলে যাবে এক অপরূপ সুন্দর ও সবুজের সমারোহ।
শ্রীমঙ্গলের নামকরণের রয়েছে দু’শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস। এই নামকরণ নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন কাহিনী শোনা গেলেও রেকর্ডপত্রে লিপিবদ্ধ আছে যে- ‘শ্রীদাস’ ও ‘মঙ্গলদাস’ নামে দু’জন এই এলাকায় এসে হাইল-হাওরের তীরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এ দু’ভাইয়ের নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয়। আরেক মহল থেকে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ‘মঙ্গলচন্ডী’ দেবতার একটি স্থলী ছিল। তার নামানুসারে ‘শ্রীমঙ্গল’ নামকরণ করা হয়েছে।
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপি। পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা বাগানের পর চা বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইনফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণা কেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট ও জাদুঘর, ভাড়াউড়া লেক, পাহাড়ি ঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য আর হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি।
‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’
সিলেট-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে প্রায় দেড়শতাধিক বাগানে চা উৎপাদন হয়। এসব চায়ের বাগান ঘিরে কর্মমুখর অসংখ্য চা-কন্যা। অবিরাম চায়ের পাতা চয়ন করছে চা কন্যারা। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অবদান রয়েছে এই চা-কন্যাদের। তাই চা-কন্যাদের স্মরণীয় করে রাখতে মৌলভীবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলামের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে এবং সাতগাঁও চা-বাগানের অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কে মৌলভীবাজার জেলার প্রবেশদ্বারে নির্মিত চা-কন্যার ভাস্কর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। দেশের সব চা-শ্রমিকের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবই যেন মিলেমিশে রয়েছে ‘চা-কন্যা ভাস্কর্যটি’তে।
শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে অপরূপ সাজে সজ্জিত ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’ ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির প্রকৌশলী সঞ্জিত রায়ের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি এমন অপরূপ অবয়ব লাভ করে। প্রায় ২৪ ফুট উঁচু এই ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারী চা-শ্রমিকের কোমল হাতে চা-পাতা চয়নের এক নিপুণ প্রতিচ্ছবি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর থেকেই এ ভাস্কর্যটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
চা জাদুঘর
শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের দেড়’শ বছরের পুরনো চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক স্থাপিত একটি চা জাদুঘর। ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানগুলোতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এ শিল্পের ঐতিহ্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত হয়েছে চা জাদুঘর। জাদুঘরের জন্য এ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত প্রায় শতাধিক আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। চা তৈরির যন্ত্রসহ এখানে রয়েছে কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত আসবাব, সাধারণ মানুষের কাছে চা জনপ্রিয় করতে প্রস্তুতপ্রণালি এবং চা পানে স্বাস্থ্যগত কী কী উপকার হয় সেসব নিয়েই বিজ্ঞাপনী পোস্টার। চা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, ঘড়ি। এখনে রয়েছে চায়ের উপকারিতা, চায়ের আবিষ্কার কাহিনীসহ চায়ের এ পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত সকল প্রকার বিটি ক্লোনের উপস্থিতি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার টি রিসোর্টের চারটি কক্ষে এখন চা জাদুঘর করা হয়েছে। ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সেই সুবাদে তিনি এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী চা বাগানে। তৎকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ার ও টেবিল, পাথর হয়ে যাওয়া আওয়াল গাছের খণ্ড, ব্রিটিশ আমলের ফিলটার, ফসিল, কম্পাস, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, তীর-ধনুকসহ নাম না-জানা আরও কিছু সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এখনো সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়নি। এই অঞ্চলের গৌরবান্বিত চা শিল্পের ইতিহাস ধরে রাখার জন্যই এত সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কারণ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চা উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯-এ বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক এটি উদ্বোধন করা হয়।
বাইক্কা বিল
বাইক্কা বিল (Baikka Beel) মৌলভীবাজার জেলার চায়ের স্বর্গরাজ্য শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম। শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এবং হাইল হাওরের পূর্ব পাশেই প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাইক্কা বিল। বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখি। বিলের শুরুতেই দেখা যাবে দলে দলে পার্পল সোয়াম্প হেন বা কালেম। পাশেই হয়তো দেখবেন গ্রেট কর্মোরান্ট বা ছোট পানকৌড়ি, লিটল কর্মোরান্ট বা বড় পানকৌড়ির দল। শুধু পাখিই নয়, হাওরে মাছের রাজ্যেও রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, রুই, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অভয়াশ্রম।
এ ছাড়া এই বিলের দাপুটে পাখিরা হলো শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। শীতের এ সময়ে আরও দেখা মিলবে বিলের অতিথি পাখি সরালি, মরচেরং, ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁসের ভেসে চলা। বিলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দূরত্বে দেখা মিলবে মেটেমাথা টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী গেওয়ালা বাটান ইত্যাদি। তবে শীতে জমে উঠে পাখির মেলা। বিলের জলে পরিযায়ী পাখি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসুদের বিলের পাখি উপভোগের জন্য দু’টি পর্যবেক্ষণ কুঠুরি আছে।
শ্যামলী বন পাহাড়
ভ্রমণ পিপাসুদের কথা ভেবেই লাউয়াছড়া ফরেষ্ট জোনের শ্যামলীতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি পিকনিক স্পট। সবুজের অপরূপ সাজে সজ্জিত শ্যামলী। প্রকৃতিপ্রেমী, ভ্রমণ বিলাসী ও সবুজ সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য রোমাঞ্চকর দর্শনীয় স্থান এটি। এর বাস্তবতা মেলে রাস্তায় দু’পাশে সারিবদ্ধ গাড়ির বহর দেখে। দিন দিন মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে, কাজের চাপে যান্ত্রিক মানুষগুলো একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি পেতেই ছুটে আসেন শান্ত, অনাবিল সবুজ প্রাকৃতির কাছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে শ্যামলীর সুনাম ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। এখানে রয়েছে নানা প্রকার বৃক্ষরাজি। দেশের আর কোথাও একই সাথে এত বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ দেখা যায় না। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভানুগাছ সড়ক ধরে ৭ কি.মি.দূরে শ্যামলীর অবস্থান।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাস্তা পেরিয়ে চোখে পড়বে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা বৃক্ষগুলোই রাবার গাছ। এরপর পরই সহজেই চোখে পড়বে কাশফুলের সাদা পাহাড়। নীল আকাশের নিচে শরতের বাতাসে দোল খেয়ে যাচ্ছে কোমল কাশফুলগুলো। এমন মনোরম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট কয়েকটি পাহাড়ের ওপারে সূর্য যেন বার বার লুকিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা যেন বহু যত্নে তৈরি করেছেন এই সবুজ শ্যামলী। এর ডান পাশেই পাহাড়ের উপর রয়েছে গোলাকার টিনশেড বিশ্রামাগার। এখানে আপনি বসে বিশ্রাম বা গল্প করতে পারেন।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান (Lawachara National Park) শ্রীমঙ্গলের আংশিক এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে প্রকৃতি তার সৗন্দর্য ভান্ডার অকৃপন ভাবে বিতরণ করেছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পালা, বিচিত্র রকমের বন্য প্রাণী যেমন- হরিণ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির শাপ, বন মোরগ, মেছো বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ ও মিশ্রচিরহরিৎ বন যার আয়তন ১২৫০ হেক্টর। জুলভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’ ছবিটির একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল এই বনে। বন ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে, ঠিক সেখানেই হয়েছে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, যেখানে উঁচুনিচু পাহাড়ের গায়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার প্রজাতির কয়েক লক্ষ বৃক্ষ। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করা মাত্রই আপনি দেখবেন চারিদিকে হাল্কা অন্ধকার রাস্তায় দুপাশের বৃক্ষগুলো দিবাকরের আলোক রশ্মিকে আটকে রেখেছে। মাঝে মাঝে বৃক্ষসারির মগডালে চোখ রাখুন দেখবেন বানর আর হনুমান লাফালাফি করছে। একটু ভেতরে প্রবেশ করলে আপনার চোখে পড়বে খাটাস, বনমোরগ, উল্লুক, মেছোবাঘ বন বিড়ালসহ বিভিন্ন জীবজন্তু। বনের বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজির গাঁ ছুয়ে আসছে জীবজন্তুর হুঙ্কার, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, বানরের লাফালাফি, উল্লুকের ডাকাডাকি। এসবের মাঝে আপনিও অবাক বিস্ময়ে হারিয়ে যাবেন। একটু সময়ের জন্য হলেও আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া। আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন গবেষণা কেন্দ্র ‘লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে বেড়ানো যতার্থ হবে।
ভাড়াউড়া হ্রদ
চারদিকে চা বাগান মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে একটি হ্রদ। শাপলা ফুলগুলি উকি দিয়ে আপনার আগমনের প্রহর গুনছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কলেজ রোড হয়ে সোজা ভাড়াউড়া হ্রদ। এখানে যেতে সময় লাগবে রিকশায় ১০ মিনিট। দেখবেন শাপলা ফুল পরিপূর্ণ হ্রদটিতে হরেক রকম পাখির সমাহার। হ্রদের শাপলা ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের মধ্যে লালের ছোঁয়া তবে এ লেকে যেতে হলে পাহাড়ের গা বেয়ে একটু হেঁটে যেতে হবে। হেঁটে চলার পথটি এতোই সুন্দর যে, হাঁটার ক্লান্তি আপনিই ভুলে যাবেন।
মাগুরছড়া গ্যাসকূপ
শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ যেতে রাস্তার পাশেই মাগুরছড়া গ্যাসকূপ। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন এই কূপ খননকালে বিস্ফোরন ঘটে। বিস্ফোরণের দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো আপনার চোখে পড়বে আগুনে পোড়া বৃক্ষগুলো। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল ও গ্যাসের খনি।
খাসি পান পুঞ্জি
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খাসিয়া পানের পুঞ্জি ও বাংলা পানের বরজ। আপনি যখন পাহাড়ের উচুঁ টিলায় খাসিদের পান পুঞ্জি দেখতে যাবেন সেখানে পাবেন অন্যরকম এক অনুভূতি। টিলার পর টিলায় সুউচ্চ গাছগুলো সবুজ পানপাতায় ভরে আছে। পাশা পাশি ৪/৫ টিলায় খাসিয়ারা এক সাথে বসবাস করে। তারা তাকে পুঞ্জি বলে সাধারনত আমরা যাকে গ্রাম বলি।
অফিং হিল
চমৎকার একটি জায়গা অফিং হিল। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রথমে কালীঘাট চা বাগানের পর হুসনাবাদ চা বাগান। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আগর বাগানের দিকে এগিয়ে যান আগরের বাগান পেরুলেই দেখতে পাবেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। আর একটু এগুলেই পাহাড়ের ভিতর দেখতে পাবেন একটি লেক। শাপলা, জলপদ্মে ভরা লেকটির এক পাশ থেকে অপর পাশে দেখবেন শত শত পানকৌঁড়ি আর সরালী ভাসছে। লেকটি এঁকে – বেঁকে অনেক দূরে চলে গেছে। লেকটির কাছে গেলে মনে হবে এটিকে যেন আপনিই আবিষ্কার করেছেন।
বার্নিস টিলার আকাশ ছোয়া সবুজ মেলা
বার্নিস টিলা নামটা শুনেই মনের মধ্যে অজানাকে জানার জন্য আচমকা একটা শিহরন দিয়ে উঠবে। আকাশ ছোয়া সবুজ মেলা দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে বালিশিরা ভ্যালীর বার্নিশ টিলায়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কালীঘাট রোড হয়ে জীপে চড়ে অথবা রির্জাভ কার, লাইটেস, মিশুক, সিএনজি কিংবা রিকসা নিয়ে দু’পাশে চা বাগানের মধ্য দিয়ে পিচ রাস্তা ধরে প্রায় ৫ কিলোমিটার এগুলেই পাবেন ফিনলে হাউজ। পিচ রাস্তাটা ডানে রেখে বানিশ টিলার রাস্তাটি চলে গেছে ফিনলে হাউসের বাম পাশ দিয়ে। টিলার একপাশে শুধু চাবাগান অন্য পাশে একের পর এক সবুজ ঠিলা। এ টিলার পরেই বালাদেশের সীমানার সমাপ্তাংশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।
শ্রীমঙ্গলের এক মাত্র ঝর্ণা ‘‘যজ্ঞ কুন্ডের ধারা’’
শ্রীমঙ্গলে এসে শুধু সবুজের ছোয়া নিবেন তাতো হয়না একটু পানির ছল ছল শব্দ শোনাওতো দরকার। তাই চলে যান শহরের কাছাকাছি জাগছড়া চা বাগানের ১৪নং সেকশনে যজ্ঞ কুন্ডের ধারায়। সেখানে রয়েছে অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত শ্রীমঙ্গলের একমাত্র ঝর্ণা। যারা এ ঝর্ণাকে প্রথম দেখবেন তারা অবশ্যই বিষ্মিত হবেন। ছড়ার পাড় ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই শোনতে পাবেন শা শা শব্দ।
এর আদি কাহিনী সুত্রে জানাযায়, শ্রীমঙ্গলের কালাপুরে প্রাচীন চৌতলীতে দেবস্থান নির্মাণ করে অনন্ত নারায়ন দেবতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল । দেবতা প্রতিষ্ঠা কালে বিরাট যজ্ঞ স্থানকে পরিষ্কার করে যে পয়ঃপ্রণালী সৃষ্টি হয়েছিল সেই স্রোতধারা একটি পাহাড়ী নদীর আকার ধারন করে যা আজও যজ্ঞছড়া বা জগছড়া নামে খ্যাত হয়ে আছে । এই জাগ ছড়ায প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ঝর্ণার নামকরন করা হয়েছে ‘‘যজ্ঞ কুন্ডের ধারা ’’
নির্মাই শিববাড়ী
শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী নির্মাই শিববাড়ী ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আকর্ষনীয় স্থান। এখানে শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৯ একর জায়গা জুড়ে বিশাল একটি দিঘী। দিঘীর চারপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর বৃক্ষ সারি। নির্মাই শিববাড়ীর আশেপাশের প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে আপনি জেনে নিতে পারেন এই মন্দিরের ইতিহাস। নির্মাই শিববাড়ীর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জানা যায়, চতুর্দশ শতাব্দিতে এ অঞ্চল ভারত বর্ষের ত্রিপুরার মহারাজার রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল। কুকি অধিবাসী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ছিল এই বিস্তৃর্ণ অঞ্চল। কুকি সামান্তরাজা প্রায়ই মহারাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করত। তেমনি এক বিদ্রোহ দমন করতে এসে মহারাজের জামাতা এখানে নিহত হন। তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে সহমরণ প্রথা থাকলেও মহারাজের কন্যা নির্মাই স্বামী নিহত হওয়ার স্থানে এসে শিবের আরাধনা করতে থাকেন। তার সংগে ছিলেন ছোট বোন উর্মাই। নির্মাই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করায় তার নামানুসারে এই শিব মন্দিরের নাম করা হয় নির্মাই শিববাড়ী।
সিতেশ দেবের চিড়িয়াখানা
শ্রীমঙ্গল শহরতলীতে সিতেশ বাবু তৈরি করেছেন মিনি চিড়িয়াখানাটি। চিড়িয়াখানায় কুমির আকৃতির গুঁইসাপ ছাড়াও রয়েছে অজগর ও কিছু জাতসাপ। চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির ভল্লুক, হনুমান, বানর ও মেছো বাঘ। চোখে পড়বে নানা রঙের বর্ণচ্ছ্বটা বিরল প্রজাতির পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ এবং ময়না পাখীর ডাক। এছাড়াও রয়েছে জংলী রাজহাঁস, চখা, সরলী, রাজ সরলী, চা পাখি, ধনেশ, হরিয়াল, সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, ডাহুক, জল কবুতর, নীল গলা বসন্ত বৌরি, তিলা ঘুঘু ও তিতির, ময়না, টিয়া, তোতা, পাহাড়ি বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
শতবর্ষের স্মৃতি বিজড়িত ডিনস্টন সমাধি ক্ষেত্র
শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত সিমেট্রির অবস্থান শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে। জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ডিনস্টন চা বাগান এলাকায়। সিমেট্রি এলাকা জুড়ে সুনসান-নিথর নীরবতা। শতাধিক বছর ধরে জেমস ফিনলে চা কোম্পানি এই সিমেট্রি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গলে বৃটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। সুদূর বৃটেন থেকে এখানে টি প্ল্যান্টার্সদের আগমন ঘটে। তৎকালীন সময়ে যেসব বৃটিশ এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র, স্বজন মারা যান তাদের ডিনস্টন সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত এ সিমেট্রিতে বৃটিশদের কবর রয়েছে ৪৬টি। জেমস ফিনলে টি কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ডিনস্টন চা বাগানের এ সিমেট্রিতে সর্বপ্রথম সমাহিত করা হয় রর্বাট রয়বেইলি নামের এক বৃটিশ নাগরিককে। ৩৮ বছর বয়সে ১৮৮৫ সালের ৩০ আগষ্ট তিনি ডিনস্টন চা বাগানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮৯৬ সালের জুন মাসে শিশু উইলিয়াম জন ও ডেভিড সহাবির মৃত্যু হলে তাদের এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯১৮ সালের ১৮ই মে জর্জ উইলিয়াম পিটারের সহধর্মিনী মেরি এলিজাবেথ পিটার মারা গেলে তাকে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ১৯১৯ সালের ২রা অক্টোবর জর্জ উইলিয়াম পিটারও পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। ডিনস্টন সিমেট্রির নীরবতায় পাষাণ কবরের একই আচ্ছাদনে একই কবরে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে জাহাজযোগে নিজ দেশে যাওয়ার পথে মারা যান রামসান্টার। ১৯০২ সালের এপ্রিলে পানিতে ডুবে মারা যান এফডাব্লি-উ এলান। এ দু’জনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। স্মৃতি রক্ষার্থে তাদের বন্ধুরা ডিনস্টন সিমেট্রিতে দু’টি প্রতীকী কবর তৈরি করে। ১৯১৯ সালের ২০শে জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের দারগাঁও চা বাগানে মারা যান অ্যাডওয়ার্ড ওয়ালেস। এদিন ছিল তার ২৫তম জন্মদিন। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৭ সালের শুরুর দিকে হান্ট নামের একজন বৃটিশ নাগরিক তিনিও এই সিমেট্রিতে শায়িত আছেন। ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার একটি বিমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন কিংবা অবতরণের সময় শ্রীমঙ্গলের উদনাছড়া চা বাগানে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত বিমানের দু’জন চালকের মরদেহ ডিনস্টন সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়। পরে আমেরিকার সামরিক বাহিনী দুই’বিমান চালকের মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যায়।
রমেশ রাম গৌড় এর ৭ রংয়ের চা
বেড়ানো শেষে শরীরে ক্লান্তি আসলে চলে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল কালিঘাট রোডস্থ বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এবং রামনগরে চা শ্রমিক রমেশ রাম গৌড়ের আবিষ্কৃত ৭ রঙ্গা চায়ের নীলকন্ঠ চা কেবিনে। একই পাত্রে ৫/১০ কালারের চা ছাড়াও আরো বেশ কয়েক রকমের চা পাওয়া যায়। বিশ্বের আর কোথাও এ পর্যন্ত একই পাত্রে ১০ রঙ্গা চা আবিস্কারের খবর পাওয়া য়ায়নি। চা খাওয়া শেষ হলে যদি সময় থাকে রমেশ রাম গৌড় এর সাথে কথা বলে আসতে পারেন। ইতি মধ্যে রমেশকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী করার অফার দিলেও রমেশ নিজের দেশের আবিস্কার বাহিরে নিয়ে যাবেন না বলে সকলের অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
দার্জিলিং টিলা
চা বাগানের মধ্যে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার এমআর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলা। এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি যেন পুরো দার্জিলিংয়ের আদলে তৈরি। অনেকটা দার্জিলিংয়ের চা বাগানের মতোই দেখতে। পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ সৌন্দর্যের এ টিলার চারপাশের সবুজ প্রান্তর খুবই আকর্ষনীয়। দার্জিলিং টিলার সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চারিদিকে সবুজ চা বাগান আর মনোমুগ্ধকর নানা প্রজাতির ছায়া বৃক্ষ। উঁচু নিচু অসমতল প্রকৃতিতে যেন সবুজ গালিচায় আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে।
মসজিদুল আউলিয়া
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ও চায়ের রাজধানী খ্যাত উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
তুর্কি নকশায় নির্মিত মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ আদায় করছেন অসংখ্য পর্যটক। মসজিদটির নাম দেয়া হয়েছে মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক(রহ:)।
শ্রীমঙ্গল সদর থেকে প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার দূরে বালিশিরা পাহাড়ের মহাজিরাবাদ এলাকায় এ মসজিদটির অবস্থান। সমতল থেকে ৭০-৮০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপিত মসজিদটিতে যেতে হয় ১৩৯টি সিঁড়ি পেরিয়ে। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত মসজিদের চারদিকেই রয়েছে সবুজ পাহাড়।
মাধবপুর লেক
শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি। জলপদ্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই স্থানটিতে বহু ধরনের পাখিদেরও আনাগোনা রয়েছে। একেক ঋতুতে মাধবপুর লেকের যেন একেক রূপ। কারও চোখে হয়তোবা তা ধরা দিতে পারে জল-উপকথার বিচিত্র প্রাণীর আকৃতিতে।
শীতকালে মাধবপুর লেকের মোহনীয় চেহারা ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। এ সময়ে সাদা পেটের বগলা পাখিও দেখা যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই স্বপ্নালু এই হ্রদের দেখা মিলবে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
ঠিক শ্রীমঙ্গলে নয়, তবে একই জেলার বড়লেখা নামক আরেকটি উপজেলায় রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। বড় বড় পাথর, ক্ষীণ জলস্রোত আর প্রশান্তিদায়ক সবুজে ঘেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রায় সারা বছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে আছড়ে পড়া জলধারাটি দৃষ্টি মেলে উপভোগের জন্য পর্যকটরা ছুটে যান মাধবকুণ্ডে।