অবশেষে তিন মাস পর
কাজে যোগ দিচ্ছে বঞ্চিত চা-শ্রমিকরা
দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকা চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান ও বিভিন্ন দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাসে প্রায় তিন মাস পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) সবকটি বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন।
বেতনের দাবিতে ধর্মঘটে থাকা শ্রমিকরা বলেন, প্রায় না খেয়ে মানবেতর দিন কাটানোর তিন মাস শেষ হতে যাচ্ছে। চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও বিভিন্ন দাবিতে প্রায় তিন মাস বন্ধ রয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসি) সবকটি বাগানের চা উৎপাদন।
বঞ্চিত চা শ্রমিকরা আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন। এর আগে গতকাল ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির কর্তৃপক্ষের যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এক মাসের বেতন দেয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না।
বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এদিকে অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে। এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানির শ্রমিকরা আগামী বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, চা শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা ১২ সপ্তাহ ধরে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১৮টি বাগানে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে সরকার নিয়ন্ত্রিত এ বাগানগুলো অচল হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) অধীন চা বাগানের শ্রমিকরা তিন মাস যাবত ‘হাজিরা’ পাচ্ছিলেন না।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি জানান, গত রোববার শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির কর্তৃপক্ষের যৌথ বৈঠকে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড এর সবকটি বাগানের চা শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেতন পরিশোধের আশ্বাসে বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের এনটিসির চা বাগানের শ্রমিকেরা কাজ শুরু করবেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অনুযায়ী, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা-বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চা-শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।