আধুনিক বিজ্ঞানের এ সময়কে বুড়ি আঙ্গুল দেখিয়ে পুরো একটি গ্রামকে গিলে খেয়েছে কুশিয়ারা
কম করে হলেও ২০ কোটি টাকার ক্ষতি
নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদী গর্ভে চলে গেছে পুরো একটি গ্রাম। এতে গ্রামের প্রায় দেড়শ দিন মজুর নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। অধিকাংশ মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। সরেজমিনে গেলে এমনটা চোখে পড়ে। ঘর হারিয়ে নির্ঘুম রাত পাড় করা প্রত্যেক মানুষের চোখে দেখা যায় সবহারানোর ছাঁপ। এছাড়াও নদী পাড়ের অন্যান্য এলাকা মিলে নদী ভাঙ্গনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
শনিবার(৫ এপ্রিল) কুশিয়ারা পাড়ে গেলে দেখা যায়, জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগাঁও গ্রামের প্রায় সিংহভাগ জায়গা ধসে গিয়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কিছু ঘরবাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। গাছ-গাছালি উপড়ে গিয়ে পড়েছে নদীর মধ্যভাগে। গ্রামের ১৫টি ঘর বিলীন হয়ে প্রায় দেড়শো মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা সবাই দিনমজুরের কাজ করেন। ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে খড়কোটো দিয়ে ছাপটা বানিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছেন তারা। খুবই ক্ষীনভাবে অসহায়ের সুরে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, “আমরা দিন আনি দিন খাই”। “এ অবস্থায় বাড়তি জমি কিনে ঘর বানিয়ে বসবাস করার মত সম্বল আমাদের নাই”। ছিক্কাগাঁও গ্রামের জমিসহ তলিয়ে যাওয়া ঘর-বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ১ কোটি টাকার।
![]() |
এদিকে নদী ভাঙ্গনের ঘটনায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন কিংবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন পরিদর্শন ও বাড়ি হারা নিঃস্ব পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে জানালেন ক্ষতিগ্রস্তরা। কুশিয়ারা নদীর জেলার শেরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিলে তড়িগড়ি করে পাউবো জিও ব্যাগ কিংবা বøকের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্তদের দুশ্চিন্তা মুক্ত করেন। ছিক্কাগাও ভাঙ্গনের ৪৫দিন অতিবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে না আসায় স্থানীয়রা কঠোর সমালোচনা করেছেন। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন এনামুল হক, নূর মিয়া, আরকান আলী, আছমা বেগম, আব্দুল জলিল, সুহেল মিয়া, তকবির মিয়া, সেলিনা বেগম, জুসনা বেগম, আকিল মিয়া, সাজু মিয়াসহ আরও অনেকে।
ভাঙ্গন কবলিত ছিক্কাগাঁও গ্রামের এনামুল হক, আরকান আলী, তকবির মিয়া, সেলিনা বেগম ও আছমা বেগম বলেন, মাথা গোজার একমাত্র সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে বাস করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কারও সহযোগীতা পাইনি। গরীব বলে আমাদের কি খেতে হয় না(?)।
ছিক্কাগাঁও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ ফারুক মিয়া বলেন, যতটুকু ভেঙ্গেছে ওই জায়গাসহ যদি এখনি পানি উন্নয়ন বোর্ড বøকের আওতায় নিয়ে না আসে তবে গ্রামের আরও বেশ কটি জায়গা ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও নদীর উত্তরভাগ ইউনিয়নের জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, বেড়কুড়ি ও শাহাপুর গ্রামের পাড় ভেঙ্গে আরও ৫০টির মত ঘর তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া জমি বাড়ি-ঘরসহ সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২০ কোটি টাকা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।
মৌলভীবাাজর পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদ বিন অলীদ বলেন, কালারবাজারসহ ওই জায়গা ভেঙ্গে যাবার বিষয়টি জেনেছি। নদী ভাঙ্গন কবলিত জায়গা বøকের আওতায় নিয়ে আসতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে কাজ আসতে দেরি হবে।