হারুনূর রশীদ।।
লন্ডন: শুক্রবার, ১৪ই পৌষ ১৪২৩।। বছরের শেষ। রাত পোহালেই প্রবেশ করছে নতুন বছর ২০১৭ সাল। পৃথিবীর এ হেন শুভ লগ্নে দুই বিশ্ব শক্তির নতুন করে ঠান্ডা লড়াই শুরুর আলামত সত্যই সুস্থ বিশ্ব জনমতকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে। আমাদের মত অতি সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন জেগে উঠছে, “আবারো কি নতুন করে ঠান্ডা লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে?”
সুইডেনে বসবাসরত সত্তুরের দশকের তুখোর বাংগালী অতি পরিচিত এক ছাত্রনেতাকে টেলিফোনে আলাপ করলাম। বললাম, এতো মনে হয় বহুদিন পর আমেরিকা নতুন করে ঠান্ডা লড়াইয়ের একটি পট রচনা করতে সক্ষম হলো। সাথে সাথেই তিনি আমার সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বললেন, “প্রথম দফার ঠান্ডা লড়াই ধীরে ধীরে ক্ষীয়মান হয়ে আসার পর বহু উস্কানিমূলক কাজ করে আমেরিকা চেষ্টা করেছে রুশীয় কিংবা চীনাদের কিংবা উভয়কেই একটি ঠান্ডা আপোষমূলক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মাঠে নামাতে। কিন্তু চীনারা বহু বুদ্ধীমান আর বিশ্বব্যাপী তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় রয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে তাদের লগ্নিপুঁজির ব্যবসা অর্থনীতির এতোই গভীরে স্থান করে নিয়েছে যে তারা ওই পাতানো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আগ্রহ দেখায়নি। এখনও আমেরিকা চীনাদের প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে পেতে বহু কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু চীনারা পাত্তাই দিচ্ছে না।
অপরদিকে রুশীয়দের অর্থনৈতিক কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর একটু দূর্বল হয়ে পড়ে। কোন একসময় তারা পাততাড়ি গোটিয়ে আফগানিস্তান থেকে বলতে গেলে পালিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। আবার ধীরে ধীরে বিগত দুই দশকে পুতিনের নেতৃত্বে গ্যাস ব্যবসার উপর ভর করে অর্থনীতিকে একটু চাঙ্গা করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ঠিক ওই অবস্থায় আমেরিকা উপযাচক হয়ে সিরিয়ায় রুশীয় রাজনীতির অবস্থানে আঘাত করতে প্রকাশ্যে আইএস দিয়ে আক্রমণ চালায়। বাধ্য হয়ে রুশরা সিরিয়া নিয়ে আমেরিকার সাথে পাতানো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই পাতানো যুদ্ধেরই আরেক ফল রুশীয় সহায়তায় ট্রাম্পের বিজয় যা “নাইন ইলেভেন” খ্যাত পেন্টাগনের উপর আকাশ থেকে বিমান হামলার মত আমেরিকানদের আঘাত করেছে। ‘আইএসআইএস’ দেশে দেশে হামলা চালানোর মত চৌর্য্যবৃত্তির যে প্রসার ঘটিয়েছে তার পুরোটাই কৃতিত্ব আমেরিকার। দেখেন না, আজ অবদি জাতিসংঘ থেকে শুরু করে এমন কেউ কি পেয়েছেন যে প্রশ্ন তুলেছে- “আইএস আইএস” এতো ভারি ভারি যুদ্ধাস্ত্র পায় কোথা থেকে?” যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুললে কাজ হয় তেমন কোন শক্তিধর দেশ বা ব্যক্তি এ প্রশ্ন তুলেননি। আজ রোহিঙ্গা নিয়ে নোবেল বিজয়ীসহ ২৩জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব মায়ানমারকে ধমক দেয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি দিয়েছেন। ওনারা কি দেখেন না সিরিয়ায় দুই পরাশক্তির নরহত্যা যা গণহ্ত্যা বলে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচারের সম্পূর্ণ অধিকার রাখে। কিন্তু না ওদিকে বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দের চোখ যায়নি। যাবেও না। কারণ তাদের এ প্রতিক্রিয়া নিজেদের মনে লালিত রাজনৈতিক চেতনা বা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক চরিত্র এবং আশ-পাশের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব তাদের ওই দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখতে বলে দেয়।
মায়ানমারের ঘটনায় তাদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই প্রনিধানযোগ্য এবং এজন্য তাদের সাধুবাদ দেয়া যায়। কিন্তু কি দিয়ে তারা জবাব দেবেন যে, কেনো(?) তারা সিরিয়ায় গণহত্যার বিষয়ে এতোটাই নিরব? কোন জবাব তাদের আছে কি? আমিও তার সাথে সহমত প্রকাশ করে বললাম, ঠিকই বলেছেন। তার কাছে জানতে চাইলাম, অবশেষে অরিন্দম কি করিবে? অত্যন্ত সহজভাবে তিনি বললেন কিছুই নয়! যুদ্ধ তো বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্নভাবে চলেই আসছে, উভয় দেশের এই কূটনৈতিক বের করে দেয়ার ঘটনা নতুন করে আগের সেই ঠান্ডা লড়াইকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো বলেই মনে হচ্ছে। এতো দিনে আমেরিকা আবার প্রতিদ্বন্ধী পেল। বিগত দশকেরও বেশী সময় তারা আইএস আইএস নিয়ে একাই খেলছিল আর খোঁজছিল একজন সঠিক প্রতিদ্বন্ধী। একা একা তো আর যুদ্ধ হয় না। আমি বললাম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায় না-কি? উত্তরে তিনি হেসে বললেন, বীরবলদের অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ ধরনের কিছু যুদ্ধ যু্দ্ধ খেলা তো চালাতেই হয়। না হয় কিছু নরাধম মানুষ মারা পরবে। তাতে কি যায় আসে। হেসে বললেন- একটি ভাল কাজের জন্য যেমন কিছু লোককে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় প্রয়োজনে আত্মাহুতি দিতে হয়, সেই আরকি। বললাম না- বিশ্বযুদ্ধ তো লেগেই আছে তবে একপাক্ষিক ছিল। এবার ষোলকলা পূর্ণ হল, এই যা!