মৌলভীবাজার অফিস: শনিবার, ২৮শে মাঘ ১৪২৩।। মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে শনিবার সকালে আদালতের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.কিউ.এম. নাছির উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত কনফারেন্সে জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ সত্যকাম চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার পৌরসভা মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। কনফারেন্সের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
কনফারেন্সে গত জানুয়ারি মাসের মামলার বিবরণ উপস্থাপন করে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলেন যে, জানুয়ারি মাসের শুরুতে ৭২৪৩টি মামলা বিচারাধীন ছিল। নতুন দায়ের হয়েছে ৬৩৫টি মামলা, নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৯৯টি, বর্তমানে ৭১৭৯টি বিচারাধীন আছে এবং পাঁচ বছরের পুরাতন ৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত ০১/০২/২০১৭ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬৮৮৫টি গ্রেফতারী পরোয়ানা, ১০৭টি ক্রোকি পরোয়ানা, ৬৪০টি সাক্ষী পরোয়ানা ও ১০১৫টি সাজা পরোয়ানা মুলতবী আছে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন মামলার আসামী আদালতের বাইরে থেকে একদিকে যেমন নতুন নতুন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, বিচার ব্যবস্থা ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা সম্পর্কে মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই, বিভিন্ন পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করত: প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করত: তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন।
কনফারেন্সে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ বক্তাগণ যথাসময়ে সাক্ষী উপস্থাপনে পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাক্ষীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষত: পুরাতন মামলা অধিক হারে নিষ্পত্তি হওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়াও বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, চগ রিপোর্ট ও গঈ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।
বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন যে, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। নারীর অধিকার, কারাবন্দিদের অধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিতকরণ ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
কনফারেন্সে আগত সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে পারষ্পারিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ও বিদ্যমান সমস্যাসমূহ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে কাজের মুল্যায়ন হয় এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।