মুক্তকথা: শনিবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৬।। দু’বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত বিরুধীরদের সকল গোয়েবল্সিয় রটনাকে মিথ্যা প্রমানিত করে দলীয় নেতৃত্বে বিজয়ী হলেন জেরেমি করবিন। ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরে শ্রমিক দলের নির্বাচনী সভা শেষে তার বিজয়ের এই ঘোষণা দেয়া হয়।
তার এই নিরঙ্কুশ বিজয়কে হর্ষোৎফুল্ল চিত্তে স্বাগত জানিয়েছে কয়েক লক্ষ শ্রমিক দলীয় সদস্য ও কর্মী এবং আবাসিক অনাবাসিক, স্থানীয়-অস্থানীয় নির্বিশেষে দেশের নিরীহ কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। করবিন, দলীয় মোট ভোটের ৬১.৮৫ শতাংশ পেয়েছেন আর স্মিথ পেয়েছেন ৩৮.১৫ শতাংশ ভোট। বৃটেনের ইতিহাসে বিশেষ করে শ্রমিক দলের ইতিহাসে করবিনের এই বিজয় দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের সুদীর্ঘ জীবন সংগ্রামের কালজয়ী এক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
পাক-আফগানসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তারিত বিধ্বংসী যুদ্ধ আর হানা-হানির ফলে কয়েক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে দিকবিদিক দৌড়ছে। আশ্রয়হীন এসব মানুষ ইউরোপ, আমেরিক আর অষ্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়ের সন্ধানে জীবন বাজি রেখে সাগর পাড়ি দিয়ে উঠে আসছে। রক্ষনশীলরা এসব মানুষজনদের আর আশ্রয় দিতে রাজী নয়। আর এই আশ্রয়হীন মানুষের ঢল দেখে তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে গণভোটে অর্থ ঢেলে কাজ করে। ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসলে বৎসরে ২০বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে এসব মিথ্যা গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোটের ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়ে নেয়।
ফলে, বৃটেন আর শ্রমিকদল এখন এক সংক্রান্তি লগ্নে খুব কঠিন সময় পার করছে। একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা যখন নিভু নিভু হয়েও পুরোপুরি নিভছে না, বরং বিশ্বব্যাপী বাড়ছে, ঠিক এই অবস্থায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার গণভোট নির্দেশ করবিনের শ্রমিক দলের জন্য এক বড় রকমের সংকট মোকাবেলার সমান হয়ে দাড়াবে নিশ্চয়। গণভোট ও ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার এই সংকট মূলতঃ তৈরী করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রক্ষনশীল দলের নেতা ডেভিড ক্যামেরুন। গণভোট দেয়ার তার সিদ্ধান্ত ছিল খুবই অপরিনামদর্শী এক বালখিল্যতা। কিন্তু বালখিল্যতা আর অপরিনামদর্শী যা ই হয় না কেনো, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার খেসারত দিতে হবে করবিনের শ্রমিকদলকে। কারণ নীতিগতভাবে শ্রমিকদল ইউনিয়নে থাকার পক্ষে।
কেমেরুনের একটি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া পুরো রক্ষনশীল দলের ধনবানরা চায় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে এবং খুবই তেলেসমাতির মধ্যদিয়ে তারা এ পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছে, গণভোট তাদের পক্ষে গিয়েছে। শ্রমিকদলের কেউ ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এমন কখনই শুনা যায় নি। স্কটল্যান্ডের শ্রমিকদল করবিনের পক্ষে থাকলেও, স্টার্জিয়নের নেতৃত্বাধীন রাজনীতিকরা জানিয়ে দিয়েছেন স্কটল্যান্ড বিষয়ে আর একটি গণভোটের পক্ষে তারা। যুক্তরাজ্য যদি বৃহত্তর ইউনিয়নে থাকতে চায় না তা’হলে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের এই ছোট্ট ইউনিয়নে থেকে কি লাভ?
অনেকেই ভাবছেন, ভোটে এই একচেটিয়া বিজয়ে করবিন হয়তো অনেকটা কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু না, করবিন পরিক্ষিত শ্রমিক নেতা। সুদীর্ঘদিনের অনুশীলন তাকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক তিনি নন। শ্রমিক দলের স্মীথ সমর্থকগন অবশ্য বলেছেন তারা সহোবস্থানের পক্ষে। করবিনের নেতৃত্বে তারা কাজ করে যাবেন। এটি অবশ্যই একটি আশাবাদের কথা।