মুক্তকথা: বুধবার ১৭ই আগষ্ট ২০১৬।। ৬জন ক্রু সদস্যসহ ২৯ জন মানুষকে নিয়ে একটি ভারতীয় সামরিক বিমান গত ২২শে জুলাই সম্পূর্ণ রহস্যময়ভাবে বঙ্গোপসাগর এলাকায় সেই যে উদাও হয়ে গেল আজ অবদি তার কোন হদিস করা যায়নি। ৩ সপ্তাহের ব্যাপক অত্যাধুনিক খোঁজাখুজির পরও এখন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত রয়ে গেলো নিখোঁজের কারণ। আর এই নিয়ে বিবিসি’র দিল্লী প্রতিনিধি সৌতিক বিশ্বাস এক মজাদার নিবন্ধ লিখেছেন আজ। তিনি শুরু করেছেন এই বলে যে- “কি জানি আমরা এই বিমান সম্পর্কে?” এবার আসুন দেখি কি জানতে পারি হারিয়ে যাওয়া ওই বিমান বিষয়ে।
বিমানের নাম “দি এন্টোনভ-৩২”। পরিবহন বিমানটি ৩ঘন্টার রাস্তা পোর্ট ব্লেয়ারের উদ্দেশ্যে মালামাল নিয়ে যাত্রা শুরু করে ভারতের চেন্নাই থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৮:৩০মিনিটে। পোর্টব্লেয়ার পূবের আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জের নিকটে অবস্থিত। বিমানটি যখন উদাও হয়ে যায় তখন কমপক্ষে ২৩হাজার ফুট উপরে ছিল এবং চেন্নাই থেকে কম করে হলেও পূর্বদিকে ১৬৭ মাইল দূরে ছিল। উদাও হয়ে যাবার ৭/৮ মিনিট আগে বিমান চালক নিয়ন্ত্রণ ঘরের সাথে যোগাযোগ করে বলেন যে একখন্ড বজ্রবৃষ্টি মেঘকে এড়িয়ে যাবার কারণে তিনি পূর্বদিকে গতি ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। রেকর্ডে দেখা যায় বিমানটি তার উচ্চতা থেকে খুব দ্রুত নেমে যায় আর এতেই ককপিটের যোগাযোগ হারিয়ে যায়। এসময় বিমান থেকে কোন রূপ উদ্ধারের আওয়াজও পাওয়া যায়নি।
কোন ত্রাণ সংবাদ বা কোন ধরনের যোগাযোগ ছাড়াই হঠাৎ এই উদাও হয়ে যাওয়াই দুশ্চিন্তার মূল কারণ বলে মি: পার্রিকর মনে করেন। বিমানটির রহস্যজনক উদাও হয়ে যাবার সময় সে ছিল প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ নটিকেল মাইল ব্যাপী একটি এলাকার প্রান্ত সীমার উপরে। যেখানে কোন রাডারের সক্রিয়তা ছিলনা। বিমানের জন্য স্থল ও জলের উপর এমন জায়গা নতুন কোন কিছু নয়। বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে ভারতের উপকূল রক্ষী ও বিমান বাহিনী যৌথভাবে ৩৬০ নটিকেল মাইল ব্যাপী ১ হাজার ঘন্টার উড্ডয়ন চালিয়েও কোন হদিস করতে পারেনি। “ভারতের ভৌগলিক জরীপ” ও ভারতের সবচেয়ে দামী “সামুদ্রিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র” এর কাছে থেকে ভাড়া করে আনা ৩০টি জাহাজ ও ২টি খুবই অত্যাধুনিক সাগর গবেষণা যান এবং সাবমেরিণ মিলে ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা আর ৪ কিলোমিটার সমুদ্র গভীরে খোঁজ করেও কোন আশাব্যঞ্চক কিছু আহরণ করতে পারেনি।
এ যেন খড়ের গাদায় সুঁচ খুঁজা, বলেছেন ভারত বিমান বাহিনীর একজন অফিসার। এতো খুঁজাখুজির পর যে ৩০টি বস্তু পাওয়া গেছে তার কোনটিই ওই হারিয়ে যাওয়া বিমানটির কিছুই নয়। ইউক্রেনিয়ার তৈরী ওই বিমানগুলি ভারতীয় বিমানবহরে যুক্ত হয় ১৯৮৪ আর ১৯৯১সনে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিমান ঘাঁটি লাদাখের দৌলত বেগ ওল্দি’তে নিয়মিত এই বিমান ওঠা-নামা করে। নিখোঁজ বিমানটি উন্নত করা হয়েছিল এবং এর পর কমপক্ষে ১৭৯ ঘন্টা উরাল দিয়েছে আর এর বৈমানিকও ৫০০ ঘন্টা এই একই রুটে উড়ে চলেছে। এর পরও নিখোঁজের পেছনে কি কারণ থাকতে পারে হঠাৎ করেই অনুমান করা মুশ্কিল।
বিমান বাহিনীর একজন কর্তা বলেছেন, শেষমেশ, কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয় বিমানটির কোথায় কি হয়েছে। কিভাবে নিখোঁজ হয়েছে। বিমানটি কি মহাসাগরের পানিতেই ডুবে গেছে না-কি হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে কোন অচিন দেশে? তবে মনে করার কোন কারণ নেই যে এর কোন হদিস হবেনা, একটি রহস্য থেকেই যাবে! এর আগেও ভারতীয় বিমানের একটি নিখোঁজ হয়েছিল এবং মাসখানেকের ব্যাপক খোঁজাখুজির পর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছিল। সাগরে বিমানের খোঁজাখুজি অনেকটা খড়ের গাঁদায় সুঁচ খুজে বের করার মত।