মুক্তকথা: ২৪মে ১টা ৮মি: গত কাল ২২শে মে ট্রাফালগার স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, পশ্চিমা বাদ্য-বাজনা জগতের অগ্রপথিক লন্ডনের প্রাচীণতম যন্ত্রবাদক দল “লন্ডন সিম্পনী অর্কেস্ট্রা”র বার্ষিক বাদ্যানুষ্ঠান। পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বৃটেনের সংস্কৃতিক অঙ্গনে পেশাদার এই বাদ্য কোম্পানীর অবদানকে শিল্পী মাত্রেই প্রণতি জানায়। গত ৫বছর যাবত লন্ডন নগর মেয়র ও বিএমডব্লিউ- এর পৃষ্ঠপোষকতায় “লন্ডন সিম্পনী” শহরের উন্মুক্ত স্থানে সকল জনসাধারণের বিনোদনের লক্ষ্যে এই বাদ্যানুষ্ঠান পরিবেশন করে আসছে।
এ উপলক্ষ্যে লন্ডন সিম্পনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাথরিণ ম্যকডোয়েল বলেন, “লন্ডন সিম্পনী”র লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতারও পূর্ব হতে আবহমান কাল ধরে চর্চ্চিত মানব সংস্কৃতির সংবেদনশীল বাহন, মহান সুমধুর বাদ্য-বাজনাকে “কন্সার্ট হল” থেকে বের করে খোলা মাঠে গণমানুষের কাছে নিয়ে আসা। আমাদের এই লক্ষ্যকে সাধুবাদ জানায় বিএমডব্লিউ। তাদের মত বিশ্বখ্যাত নন্দিত ব্যবসায়ী কোম্পানীর পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের সেই সূবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। নিখরচায় সকল মানুষকে সুমধুর বাদ্য উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
একেই বলে সুশীল সমাজের স্বাধীনতা
বাজনা শুরু হবার দু’ঘন্টা হাতে রেখেই মানুষ চত্বরে আসতে শুরু করে। বাঙ্গালী, ভারতীয়, পাকিস্তানী, আফগানী, ইরাণী, তুরাণী, মিশ্রী, সুদানী, মরক্কান, ইতিওপিয়ান, এঙ্গোলিয়ান, উগান্ডান, সোমালিয়ান, আরো কত বলবো! ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশের মানুষতো ছিলই। আমেরিকান, ক্যানাডিয়ান আর অষ্ট্রেলিয়ানদের কথা বাদই দিলাম। ওরা আসবেই। কোথায়ও কোন ধাক্কা-ধাক্কি নেই। নেই কোন অহেতুক হৈহোল্লড়। সকলেই যার যার মত করে হাসি-তামাসা, গল্প-গোজবের মনানন্দে ট্রাফালগার চত্ত্বরে এসে বসতে থাকেন। একাকী সঙ্গীসাথী ছাড়া আমিও অতি সহজে কতিপয় দেখতে রাশান ও ইউক্রেনিয়ানদের মত, তাদের পাশে নিজের বসার একটু জায়গা করে নিলাম। দু’পাশে বসা দু’জনকে “সিম্পনী”র বিষয়ে কিছু জানার কথা বলতেই একেবারেই পাশে বসা এক যুবতি একখানা বুকলেট দিয়ে দিল। খুবই নগন্য তথ্য যা’কিছু এখানে উল্লেখ করেছি তার সবকিছুই ঐ বুকলেট থেকে সংগৃহীত।
আগে যেসব দেশের কথা লিখলাম, এসব দেশের সকল মানুষই কিন্তু সুশীল হবার কথা নয়! এদের অনেকেরই মধ্যে সাধারণ কিছু দুষ্টুমিপনা যে ছিল না, তা নয়, ছিল। একটু জোড়ে কথা বলা, নিজের প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা, কয়েকজন মিলে বসে সুরাপান! উঠে বাহিরে গিয়ে একটু হাটা-হাটি আবার ফিরে এসে স্বস্থানে উপবেশন, ঐটুকুই! এর বাইরে একটুও বাড়তি কিছু করার কারো কোন মানসিকতাই লক্ষ্য করিনি। কয়েক হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতিদের উপস্থিতিতে বিস্তর শ্রোতা পানপাত্র হাতে চত্ত্বরে বসে সুরাপানের সাথে গানও উপভোগ করছিলেন। কিন্তু কোথায়ও একটি বেরসিক ঘটনা ঘটেছে শুনতে পাইনি। কোন রূপ কেলেঙ্কারীতো অনেক দূরের বিষয়। একেই বলে সুশীল সমাজের স্বাধীনতা।