মুক্তকথা নিবন্ধ।। কেউ হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে কয়েক লাখ বছরের পুরোনো জিনিষ পাওয়া যায় কি করে? আর লাখ বছর এ জিনিষ, সে যা-ই হয় না কেনো, এতো কাল টিকে থাকলো কি করে? অদ্ভুত শোনালেও এটিই ঠিক যে যত দিন যাচ্ছে দুনিয়ার মানুষ এমন এমন সব আবিষ্কার করছে যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে মন চায়ই না। কিন্তু আমরা কিছু মানুষ বিশ্বেস না করলেও যে জিনিষ পাওয়া গেছে সে জিনিসেরতো কিছু যায় আসে না। কিংবা গবেষকদেরও কিছু যায় আসে না। কারণ কেউ বিশ্বাস করলো কি-না বা কোন মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্যতো আর তাদের গবেষণা নয়। তাদের গবেষণার বিষয় কোথা থেকে কেমন করে এলো(?) এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা এবং তার পর মানুষের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।
৭লাখ বছর আগের রাইনো জীবের হাড় পাওয়া গেছে। প্রথম শোনাটাইতো বিশ্বেস হবার নয়। শত-হাজার বছর নয় একেবারে লাখ বছর। তাও আবার ৭লাখ বছরের পুরোনো! পাওয়া গেছে ফিলিপিনের সবচেয়ে বড় ‘লুযন’ দ্বীপে। এই আবিষ্কার বলে দিচ্ছে যে ফিলিপাইনের মাটিতে মানুষের চলা-ফেরা বা আসা-যাওয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৬লাখ বছর আগে।
নতুন এ পাওয়ার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষকদের মন্তব্য যে এগুলো হলো “লাখে একটি আবষ্কার”। এরকম আবিষ্কার প্রতিদিন হবার নয়। ফিলিপাইনে মানব বসতির পূর্বের হিসেবকে পাল্টে দিয়েছে এ আবিষ্কার। এর আগে অনুমান ছিল যে প্রায় ৬লাখ বছর আগে মানুষ পা রেখেছিল ফিলিপাইনের মাটিতে। কিন্তু ‘রাইনো’র হাড়ের এ আবিষ্কার গবেষকদের নতুন প্রশ্নের সন্মুখীন করেছে। এ মানুষ তা’হলে কারা?
নতুন এই আবিষ্কার গবেষকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। কেমন করে মানুষ বিশাল জলরাশি পাড়ি দিয়ে লক্ষ লক্ষ বছর আগে এ দ্বীপে গিয়ে উঠলো? এরা আসলে কেমন মানুষ ছিল? এরা দেখতেই বা কেমন ছিল? কত সব প্রশ্ন গবেষকদের বিব্রত করে রাখছে গোটা একবছরের উপর সময় ধরে। দক্ষ কসাই যেভাবে মাংস কেটে হাড় আলাদা করে রাখে অনেকটা সেরকমই রাইনো জীবের হাড় কেটে রাখা। পাশে রয়েছে কয়েক ডজনের মতো পাথরের তৈরী ছুরি-চাকু।
এ দ্বীপভূমির বয়স অনুমান করতে বৈজ্ঞানিকগন রাইনো’র দাঁতের উপরের চকচকে পদার্থ যা হাড়ের কাছে পাওয়া গেছে এবং হাড়ের নিচে পড়ে থাকা শষ্যকণা বৈদ্যুতিন উপায়ে ধ্বনিবিবর্ধক যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে মাটির নিচের পরতের বয়স অনুমান ৭লাখ ২৭হাজার বছর আগের। রাইনো’র দাঁতের বয়স অনুমান ৭লাখ ৯হাজার বছর আগের এবং মাটির উপরের পরতের বয়স ৭লাখ ১হাজার বছর।
মাথা ঘুরছে গবেষক বৈজ্ঞানিকদের। আদিম এরা কোন মানুষ? কোথা থেকে এখানে এলো? আমাদের মত ‘হুমোসেপিয়েন’ মানুষ যারা এদের শত সহস্র বছর পরে আফ্রিকায় বিবর্তিত হয়েছিল, এই আদিম মানুষ তারা নয় তা’হলে!
বিজ্ঞান গবেষণাগারে রক্ষিত আছে যে মানব হাড় এর বয়স আজ থেকে ২০লাখ বছর আগের। এরা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আদিম এসব মানুষের অস্তিস্থ খুঁজে পাওয়া গেছে চীন ও জাভায়। ফলে গবেষকদের ধারণা, খুব সম্ভবতঃ এরা সেই মানুষের বুনিয়াদ।
তবে প্যারিসের প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাতীয় যাদুঘরের প্রত্নপ্রস্তরযুগীয় জীবাশ্ম সংক্রান্ত বিজ্ঞানী থমাস ইন্জিক্কো এমন মনে করেন না। “বিজ্ঞান” ম্যাগাজিনে ২০১৮ সালের মে মাসে প্রথম এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলেন লিজি ওয়েড। সেখান থেকেই এই অনুবাদ। আনুবাদক: হারুনূর রশীদ