মুক্তকথা সংবাদকক্ষ॥ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণের ফলে কৃষিনির্ভর ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবারের বসতবাড়ি ও কমলা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে এগুলো রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে প্রস্তাবিত সাফারি পার্কটি কিছুটা সরিয়ে অন্যত্র নির্মাণের দাবি জানানো হয়।
রবিবার(১১ এপ্রিল) জরিছড়া, লালছড়া, রুপাছড়া ও ডোমাবাড়ী গ্রামে কমলা চাষি ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার কমলা, বাতাবিলেবু, জাম্বুরা, আদালেবু, সাতকরাসহ লেবু জাতীয় ফসলের বাগানের ওপর নির্ভর জীবীকা নির্বাহ করে। সম্প্রতি সরকার এ অঞ্চলের কমলা চাষিদের সমন্বয়ে কমলা চাষকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান(এনডিসি) লাঠিটিলার কমলা বাগান পরিদর্শন করে উক্ত এলাকার কমলা বাগান নিয়ে একটি শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেন।
তারা বলেন, কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এলাকায় সাফারি পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। সপ্তাহখানেক পর আমরা জানতে পারলাম গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করে এখানে একটি সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। এমন খবর পেয়ে রুপাছড়া ও লালছড়ার ২ জন ইতোমধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
শতবর্ষের সাজানো বাড়িঘর ও ফসলি বাগান ছেড়ে দেয়া যার ফল স্বরূপ তাদের জীবিকা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ মহা হুমকির সন্মুখীন হয়েছে। বলেছেন কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। সাফারি পার্কের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেই তারা আরও বলেন যে, লাঠিটিলা বিটের মোট আয়তন ৫ হাজার ৬৩১.৪০ হেক্টর। তন্মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিএন্ডবি সড়কের দিলখুশা বাজার ইসলামাবাদ চা-বাগানের সীমানা থেকে উত্তরদিক দিয়ে জরিছড়া, লালছড়া ও রুপাছড়া গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৩৬৪টি পরিবার। এছাড়া ৩টি মসজিদ, ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি সরকারি কমিউিনিটি ক্লিনিক রয়েছে। পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৫০টি পরিবারই কৃষিনির্ভর। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিক লোক উক্ত ৪টি গ্রামের মধ্যে শতাধিক বর্ষের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত কমলা, আদা, জাম্বুরা, বাতাবিলেবু, সাতকরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফসলের বাগানে কাজে নিয়োজিত আছেন। উক্ত বাগানের ওপর নির্ভর করে চলে উক্ত ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবার।
তাদের দাবি, উক্ত গ্রামসমূহের পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ ও পূনর্বাসন করে প্রস্তাবিত পার্ক বাস্তবায়ন হলে আবাসস্থল পরিবর্তনের ফলে ৪টি গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা বিদ্যমান। প্রস্তাবিত পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মোট জমির চাহিদা ১ হাজার একর। ঘনবসতিপূর্ণ উল্লেখিত ৪টি গ্রামে শতাধিক বর্ষের লালিত বসতবাড়ি ও ফসলি বাগান রক্ষা করে গ্রামের শেষ সীমানা থেকে উত্তর ও পূর্বদিকে চাহিদার চেয়ে বেশ কয়েকগুন পতিত জমিতে পার্কটি নির্মাণ করা যায়।
|