মুক্তকথা সংবাদকক্ষ॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কালপঞ্জিতে অত্যন্ত স্মরণীয় একটি দিন হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশকে ভারতের কূটনৈতিক স্বীকৃতির ৪৯তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আজ(৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওয়েবিনারের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং এর পাশাপাশি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্যের অবিস্মরণীয় আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সভাপতির সূচনা ভাষণে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ‘অপারেশনে সার্চলাইট’-এর নামে শতাব্দীর নৃশংসতম গণহত্যাযজ্ঞ আরম্ভ করেছিল বাংলাদেশে। সেই সময় ভারত সীমান্ত উন্মুক্ত করে না দিলে ’৭১-এ বাংলাদেশে ৩০ লক্ষের পরিবর্তে এক কোটি কিংবা এরও বেশি মানুষ নিহত হত। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের এক কোটি অসহায় বিপণ্ন মানুষকে আশ্রয় দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকম সহযোগিতা করে এবং অবরুদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে বিশ্বের নিপীড়িত জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভারত যে অবদান রেখেছে এর দ্বিতীয় কোনও নজির নেই। ১৯৭১এর ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধরত বাংলাদেশকে ভারতের প্রথম কূটনৈতিক স্বীকৃতি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল যেমন বৃদ্ধি করেছে, আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রধান অতিথির ভাষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা একটি অপ্রপ্রচার সবসময় করে থাকে- তারা বলে, ১৯৭১-এ ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। মোটেও তা নয়। এটা ছিল একটি জনযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের যুদ্ধ। আমাদের এ ন্যায়যুদ্ধে ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছিল। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ অংশ। কোনোভাবেই এ বন্ধন ছিন্ন হবার নয়। ১৯৭১-এ ভারত আমাদের এক কোটি শরণার্থী নয় মাস ভরণপোষণ করেছে। তারা শুধু রাজনৈতিকভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেনি, সামরিকভাবেও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা যুদ্ধ করেছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিলেন বলেই পৃথিবীর অনেক দেশের নাগরিক সমাজ বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল, পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বর্বরতা এবং বাংলাদেশের জনগণের দুর্দশা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। ইন্ধিরা গান্ধীর কারণেই আমাদের জাতির পিতা দেশে ফিরতে পেরেছিলেন। ভারত এবং ইন্ধিরা গান্ধীর প্রতি আমরা চীর কৃতজ্ঞ। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রাম করে যাচ্ছিল বাংলাদেশের জনগণ। ভারত ন্যায়ের পক্ষে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিল। চুকনগর, শাঁখারিবাজার, ঝালকাঠি, জাঠীভাঙ্গা এবং এছাড়াও কয়েক হাজার জায়গায় গণহত্যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধ করে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম ও জয়ের এই অভূতপূর্ব ইতিহাসে অংশগ্রহণ করে ভারত গর্বিত হয়েছিল। এভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন রচিত হয়।’ |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এম পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক, নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি শিক্ষাবিদ শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল(অব) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বিট্রিশ মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ভাষা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রি সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সেলিম, নির্মূল কমিটির সুইডেন শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্তার এম জামান, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডা: একরাম চৌধুরী, নিউইয়র্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, নির্মূল কমিটির তুরস্ক শাখা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম-এর সাধারণ সম্পাদক লেখক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি প্রমুখ। সূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি, সংবাদদাতা |