ওমর ফারুক নাঈম।। বিদেশী ফল মাল্টা চাষ করে সফল হচ্ছেন মৌলভীবাজারের চাষীরা। কমলার তুলনায় মাল্টার অভিযোজন ক্ষমতা বেশী হওয়ায় পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও গ্রামের উঁচু জমিতে সহজেই চাষ করা যাচ্ছে। উন্নত জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে এই ফসলটি চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে।
বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকাল জলবায়ূ মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী। পাহাড়-টিলা বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলায় মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামের বারি-১ জাতের ৬০টি মাল্টা চারা রোপন করেছিলেন মাহাবুবুল আলম। চার বছর আগে লাগানো গাছগুলো এখন মাল্টায় ভরপুর। সঠিক পরিচর্যা করায় এবার মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০ শতক জমিতে মাল্টা গাছ লাগিয়ে সফলতা দেখে এখন বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
মাল্টা চাষী মাহাবুবুল আলম বলেন, বাগানটি আমি শখের বসেই করেছি। মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগ আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করছে। প্রথম বছর থেকেই আমার বাগানে মাল্টা ধরতে শুরু করে। গত বছর ১০ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি মাল্টা ২০০ টাকা করে বিক্রি করি। খুচরা কাস্টমার বেশি ছিল। পরিচিত অনেকেই আগে থেকে অর্ডার করে রাখতো।
লেবু জাতীয় ফসল মাল্টা। খুব নামি দামি এই ফলটি বাইরে থেকে এসে দেশের চাহিদা মেটাতো। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে দেশেই হচ্ছে এই মাল্টা চাষ। দাম যেহেতু ভালো পাওয়া যায় তাই চাষিরাও ঝুঁকছেন এ মাল্টা চাষে।
|
|
শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি বাগান গড়ে তুলেছেন সেলিম আহমদ। তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমি দুইটা গাছ লাগিয়ে দেখতাম যে এখানে মাল্টা ভাল হয়। পরে আমি প্রায় ৫হাজার চারা আমার চারটা বাগানে লাগালাম। এখান থেকে আমি প্রচুর উৎপাদন পেলাম। আমি গত বছর প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মাল্টা পেয়েছি, এবছর আশাকরি আরো বেশী মাল্টা পাবো।
মাল্টা এমন উচ্চ ফল দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যান্য চাষীরা। শ্রীমঙ্গলের মামুন আহমদ বলেন, এই এলাকায় কিন্তু একসময় আনারসের প্রচলত ছিলো। আনারসের পাশাপাশি লেবু হত। এখন মাল্টার ফলন ভাল হচ্ছে। আমি বাসা-বাড়িতে মাল্টা চাষের চেস্টা করবো। অনেকে যারা আছেন এভাবে মাল্টা চাষ করতে পারেন।
ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, মাল্টা চাষ হয় শুনে এসে দেখলাম যে, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ে এত সুন্দর মাল্টার বাম্পর ফলন হয়। আমি নিজেও এই ধরণের মাল্টা বাগান গড়ে তুলব।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে ২৭৫টি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। বাগানে মোট জমির পরিমাণ ৮০ হেক্টর। যা প্রতি হেক্টরে গড়ে ৬ মেট্রিক টন উৎপাদন। আর মোট ৪৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন হওয়ার কথা বলছে কৃষি বিভাগ।
তবে সবচেয়ে বেশি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মাল্টা উৎপাদন হয়ে আসছে। এ উপজেলায় পনেরো হেক্টর জমিতে ৫৫টি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজারের মাটি কিছুটা এসিডিক সয়েল যেটা লেবু জাতীয় ফসল চাষের জন্যই উপযোগী। সেজন্যই মাল্টা চাষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। ২০১৮ সাল থেকেই বারি মাল্টা-১ পরীক্ষামূলকভাবেই শুরু করেছিলাম। এবছর খুব ভাল মাল্টা ফলন আমরা লক্ষ্য করছি। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়ে গেছে। ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারছেন তারা। এই মাসের শেষে পুরোপুরি মাল্টা বাজারজাত করা যাবে বলে আশা করছি।
|