মুক্তকথা সংবাদ।। আরো দু’জন জিহাদি বধু যারা তাদের বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সিরিয়ার শ্মরণার্থী কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে নিজের দেশে ফিরে আসার চিন্তায় অধীর আগ্রহে সময় পাড় করছিলেন, অবশেষে তাদেরও নাগরীকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে সর্বশেষ জানা গেছে। এটি এমন এক সময় ঘটলো যখন জঙ্গীবধু শামিমা বেগমের দেশে আসা নিয়ে বিস্তর রাজনীতি চলার পথে তার ৩সপ্তাহ বয়সের শিশু সন্তানটি সিরিয়ার ওই আশ্রয়কেন্দ্রেই বিনা চিকিৎসায় নিউমুনিয়ায় মারা যায়।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৮বছর বয়সের নিচে ৫টি সন্তানের ওই দুই জননী সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়ে আইএস সন্ত্রাসীদের বিয়ে করেছিল, যে সন্ত্রাসীরা পশ্চিমা আটকে রাখা বন্দীদের ঠাণ্ডামাথায় খুন করেছিল বলে অভিযোগ আছে। আর এ কারণেই তাদেরও নাগরীকত্ব বাতিল করা হলো।
সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় যে বৃটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরের কেউ কোন একজন ব্যক্তির মামলা নিয়ে কিছু বলতে রাজী নয়। অবশ্য একজন মুখপাত্র বলেছেন, কোন একজন ব্যক্তির নাগরীকত্ব বিষয়ে হোম অফিসের সিদ্ধান্ত অবশ্যই হাতে থাকা সাক্ষ্যপ্রমানের ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছে এবং বিষয়টি কোনভাবেই তরলভাবে দেখার বিষয় নয়।
সংবাদ মাধ্যম আইনী সূত্রের বরায় দিয়ে লিখেছে, যাদের নাগরীকত্ব বাতিল করা হয়েছে তাদের নাম হলো- ৩০বছর বয়সী রীমা ইকবাল ও তার বোন ২৮ বছর বয়সী জারা যাদের অভিবাবক পিতা-মাতা পাকিস্তানের। তারা ২০১৩সালে সিরিয়ায় পালিয়েছিল। বয়স্ক রীমা ইকবাল যখন সিরিয়ায় যান তখন তিনি ২য় দফায় খুবই বেশীদিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরে তিনি ৩য় এক সন্তানেরও জন্ম দেন। ছোটবোনের দুই পুত্র যার একটি বৃটেনে জন্ম নেয়।
শামিমা বেগমের নাগরীকত্ব বাতিল ও পরবর্তীতে সিরিয়ার তাবুতে তার ৩সপ্তাহ বয়সের শিশু পুত্রের মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাবেদ নতুন করে গভীর সমালোচনার মুখে পড়েন। এই শামিমা বেগম সন্ত্রাসী দলে যোগ দিতে ১৫ বছর বয়সে লন্ডন থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং কয়েকদিন আগে তার শিশুসন্তান নিয়ে বৃটেনে ফিরে আসার জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিলেন। অথচ সাজিদ জাবেদ এ সময়ই মানুষের সমালোচনার ভয়ে তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেন।
কেবলমাত্র একজন মানুষের দ্বৈত নাগরীকত্ব থাকলে একটি বাতিল করা যায় অন্যতায় নয়। শামিমার নাগরীকত্ব বাতিলের সময় মনে করা হয়েছিল যে সে বাঙ্গলাদেশী মানুষ সুতরাং নিশ্চয়ই তার বাংলাদেশী নাগরীকত্ব রয়েছে। কিন্তু বাতিলের পর জানা যায় যে শামিমার বাংলাদেশী কোন নাগরীকত্ব আদৌ নেই এবং ছিল না, বাংলাদেশ সরকার তাই জানিয়ে দেয়।
শামিমা এখন ১৯বছর বয়সের নারী এবং ইতিমধ্যেই সে তার তৃতীয় সন্তানকে হারিয়েছে।
সিরিয়ায় শামিমার শিশুমৃত্যু ও তার নাগরীকত্ব বাতিল নিয়ে বৃটেনের রাজনৈতিক মহলে জোড় আলোচনা চলছে। স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাবেদ খুবই চাপের মুখে আছেন। শ্রমিকদল ও লিবারেল ডেমোক্রেট দলের মতে শামিমাকে তার বাচ্চা নিয়ে দেশে আসতে দেয়া সরকারের উচিত ছিল। সে দেশে আসলে বৃটেনের আইনে তার যে শাস্তি হয় তা হতো। এতে করে তার শিশু সন্তানটির অকাল মৃত্যু হতো না। আর এই শিশুটি ছিল অতীব নিরপরাধ একটি বৃটিশ শিশু। একজন শিশু বৃটিশ নাগরীকের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সরকার নির্লজ্জ্বভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য।
গতকাল সোমবার সংসদে প্রশ্নউত্তর কালে সচিব সাজিদ জাবেদ শামিমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করার বিষয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সিরিয়ার সেই সন্ত্রাসীরাই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।