মৌলভীবাজারে স্টিকার বাণিজ্যে অর্ধকোটি মাসিক আয়স্টিকারে বৈধ নম্বর বিহীন সিএনজিমৌলভীবাজার, ০১ অক্টোবর ২০২১ইং মৌলভীবাজারে মাসোয়ারা স্টিকার বাণিজ্যে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ট্রাফিক বিভাগ, সিএনজি শো-রুম ও শ্রমিক নেতারা। সিএনজি ও টমটমে স্টিকার বিক্রি করে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে। গাড়ির লাইসেন্স থাকুক বা নাই থাকুক মাসোয়ারা স্টিকার থাকলেই গাড়ি রোডে চালানো যায়। গাড়ির কাগজ কিংবা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ সিএনজি কিংবা টমটমে স্টিকার দেখলেই ছেড়ে দেয়। এতে বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছেন ড্রাইভাররা। বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রতি মাসে দূর্ঘটনার ৭০ শতাংশ সিএনজির কারণেই হয়ে থাকে। অধিকাংশ স্টিকার শো-রুম ও শ্রমিক নেতারা বিক্রি করলেও ওই অবৈধ কাজের কালিমা জেলা পুলিশ বিভাগের কপালে লেপন হচ্ছে। যার ফলে গোটা পুলিশ বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। কিন্তু জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পরোক্ষভাবে ট্রাফিক পুলিশ স্টিকার বাণিজ্যের সাথে জড়িত। একটি সূত্র জানায়, আদায়কৃত টাকার একটি অংশ ভাগবাটোয়ারা হয় বিভিন্ন মহলে। বিআরটিএ অফিস থেকে জানা যায়, এ যাবত জেলায় ২৪ হাজার সিএনজি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কাগজ আপডেইট আছে ১০ থেকে ১২ হাজারের। এদিকে ১ হাজার ৫’শ টমটমের রেজিস্ট্রেশন দিলেও এখন কোনোটারই কাগজ আপডেট নেই। রেজিস্ট্রেশনের বাহিরেও ৪ থেকে ৫ হাজার অনটেস্ট গাড়ি রয়েছে। লাইসেন্স না নিয়েও স্টিকার দিয়ে গাড়ি চালাতে পারায় বছরে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশেষ করে স্টিকারের আওতায় আনা হয়েছে জেলার প্রায় ১৫ হাজার সিএনজি, অটোরিক্সা ও টমটমকে। প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগাতে হয় সিএনজি শো-রুম, ট্রাফিক পুলিশ ও সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সরবরাহকৃত নির্ধারিত মাসোয়ারা স্টীকার। স্টিকারে লেখা থাকে সাংকেতিক বিভিন্ন স্লোগান। আবার কোনো কোনো শো-রুম মাসের নাম কিংবা নম্বর লিখে স্টিকার মাঠে ছাড়ে। ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা গাড়ির কাগজ অনিয়মিত এবং সদর উপজেলার মধ্যে গাড়ি চললে ২’শ ৫০ টাকা এবং অনটেষ্ট ও পুরো জেলা হলে ১ হাজার টাকা মূল্যের স্টিকার কিনতে হয় ড্রাইভারদের। টমটমের জন্য ২’শ টাকার স্টিকার। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার সিএনজি অটো রিক্সা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ, মৌলভীবাজার সিএনজি ইউনিট কমিটি ও মক্কা-মদিনা সহ বিভিন্ন স্লোগান ও সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে গাড়ির সামনে স্টিকার লাগানো। হানিকম জাতীয় স্টিকার লাগানো হয় যাতে দূর থেকে কেউ এটা বুঝতে না পারেন। সেপ্টেম্বর মাসের স্লোগান ছিল “স্বাস্থ্য বিধি না মানলে মৃত্যু ঝুঁকি আছে”, “স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন নিরাপদে পথ চলুন”। এদিকে টমটমে রয়েছে চৌমুহনা অটো টমটম গ্রুপ পরিচালনা কমিটি, ডি বি, বি এস, কে এস ও সি এস সহ একাধিক সংগঠন। ওই সকল স্ট্যান্ড থেকে স্টীকার সরবরাহ করা হয়। মাসের শুরুতে স্ট্যান্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো হয় স্টিকার। ড্রাইভাররা মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে কিনে গাড়িতে লাগাতে হয়। অন্যথায় রোডে গাড়ি চালানো যায়না। পৌর শহরের মাছের আড়ৎ, ভুজবল, ভৈরববাজার, শ্রীমঙ্গল, শেরপুর, সরকারবাজার, খলিলপুর, ঘয়গড়, কাগাবালা, দিঘীরপাড়, আটঘর, বাহারমর্দন, মোহাম্মদপুর, সমসেরগঞ্জ, নতুনবাজার, রাজনগর, মুন্সিবারজার, টেংরাবাজার ও অফিসবাজারসহ একাধিক সিএনজি স্ট্যান্ড ঘুরে পরিচয় গোপন রেখে ড্রাইভার ও ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোডে স্টীকার ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করলে ট্রাফিকের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। স্টীকার থাকলে গাড়ির লাইসেন্স অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও আটকানো হয়না। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া বলেন-
|
|
দেড় হাজার টমটম তালিকাভুক্ত থাকলেও কোনটারই কাগজপত্র হালনাগাদ করা হয়নাই। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শমশেরনগর স্ট্যান্ডের ড্রাইভার রাজা মিয়া বলেন, মাসের শুরুতে স্ট্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মিয়ার কাছ থেকে ২’শ ৫০ টাকার স্টিকার লাগাতে হয়। কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার স্ট্যান্ডের ড্রাইভার হাসান বলেন, চৌমুহনী ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে মাসের শুরুতে স্টিকার কিনে নেই। আগামী মাসের জন্য ৫টা স্টিকারের অর্ডার করেছি। শমশেরনগর রোডের মেসার্স এম এফ ফিলিং এন্ড সিএনজি ষ্টেশনে ১০ থেকে ১২ জন ড্রাইবারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, স্টিকার ছাড়া কোনো সিএনজি রাস্তায় চালনো যায় না। যে অবস্থা শুরু হয়েছে কয়েকদিন পরে ড্রাইভিং ছেড়ে কৃষি কাজে লাগতে হবে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পাবেল মিয়া বলেন, |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সিএনজি ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ জহির আহমদ বলেন, আমরা কেবল গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্টিকার দেই। তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। ড্রাইভাররা বলে ১ হাজার টাকা দিয়ে আপনাদের কাছ থেকে স্টিকার কিনে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো আমরা এখন বাদ দিয়ে দিছি। |