1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
হারঘাদা সমুদ্রসৈকত থেকে লিখছি - মুক্তকথা
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

হারঘাদা সমুদ্রসৈকত থেকে লিখছি

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৪৪৭ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ

সে অনেক পুরোনো দিনের কথা। তখন আমি তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। দাদার কাছে শুনা গল্প। আমরা ভাইদের মাঝে আমিই দাদাকে পেয়েছি ও দেখেছি খুব কাছ থেকে। দাদার সাথে বাড়ীর উঠোনে বা টঙ্গিঘরে কিংবা দাওয়ায় বসে গল্প করার সুযোগ আমি ছাড়া আমরা আট ভাই-বোনের মধ্যে আর কারো সৌভাগ্য হয়নি।

আমার ৩ দাদা সকলেই ছিলেন জাহাজের নাবিক। নাবিক এই অর্থে যে জাহাজের কর্মী। ভাই-বোনদের মাঝে আমার দাদা সবার বড় ছিলেন। আমার পৌরদাদা হামিদুল্লাহ খান অকালে মারা যাবার পর দাদা তার যৌবনের প্রথম বেলায়ই জাহাজে চাকুরী নিয়ে কলকাতায় গিয়ে যোগ দেন। পরে ছোট দুইভাইকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে জাহাজের চাকরীতে লাগিয়ে দেন। অতীত সেসব দিনের মজার মজার কাহিনী শুনতাম দাদার কাছে তার পাশে বসেই। বৃটিশ-মিশরী “বি.বি.লাইন” কোম্পানীর জাহাজে দাদারা চাকুরী করতেন। বছর চারেক পর ছোট দাদারা তাদের বড়ভাইকে বাড়ী দেখা-শুনা করার নিমিত্তে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করেন এবং এক সময়ে আমার দাদা জাহাজের চাকুরী ছেড়ে বাড়ীতে চলে আসেন। এসকল কথা কাহিনী দাদা-দাদী ও নানীর কাছ থেকেই শুনা।

 

 

আমি সপ্তম শ্রেনীতে পড়ার সময় মিছিল করতে গিয়ে বাসায় মামার কাছে যখন আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী আমাকে নজরে রাখার বিষয়ে আগাম জানিয়ে দিলেন তখন ভয়ে বাড়ীতে চলে গিয়েছিলাম দাদার কাছে। দাদার সেদিনের কথাগুলো আজও আমার কাছে ইতিহাস হয়ে শব্দ তৈরী করে। দাদা সেদিন হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “মিছিল করেছিস ভাল করেছিস। দরকার হলে আরো করবি। আমিওতো কলকাতায় মিছিল করেছি। সে ছিল খেলাফত আন্দোলনের মিছিল। আমি সে মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম। সেদিন যদি বুঝতাম, দাদার সে কথাগুলো আজকের দিনের জন্য নিজের কাছেই ইতিহাস হয়ে যাবে তা’হলে পই পই করে দাদাকে জিজ্ঞেস করে লিখে রাখতাম। দাদা বলছিলেন মিছিলের কাহিনী। ওই দিন কলকাতায় মিছিল ছিল খেলাফত আন্দোলনকারীদের। দাদাও একজন সচেতন বাঙ্গালী হিসেবে খেলাফতের সেদিনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। দাদা আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, “মিছিলে গিয়েছিস ভাল করেছিস। মিছিলেতো মানুষই যাবে। চিন্তা করিস না মিছিলেতো আমিও গিয়েছি। মিছিল মানুষই করে নিজেদের দাবী-দাওয়া আদায়ের কারণে। কিচ্ছু ভাবিস না-তো! মোসাব্বিরকে[আমাদের অভিভাবক মামা] আমি বলে দেবো। ও তোকে কিচ্ছু বলবে না। দাদার কথা ঠিকই কাজে লেগেছিল। এর পর থেকে মামা কোন মিছিলে যোগ দেয়া নিয়ে আমাকে কোনদিনই কিছু বলেন নি। এখানে বলে রাখা ভাল আমার দাদা তার সময়ের কংগ্রেসের অনুসারী ছিলেন। তিনি এবং খা’র গাঁয়ের কানোঙ্গ নানা একই সাথে কংগ্রেসের সহযোগী ছিলেন।

দাদার সেদিনের সে অভয়বাণী আজো আমার জীবনের পদে পদে সাহসের যোগান দিয়ে যায়। দাদার সে অমোঘবাণী আমাকে মুক্তিযুদ্ধের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত নিজের অজান্তেই পৌঁছে দিয়েছিল। শুধু তাই নয় আজও জীবনের পাথেয় হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দাদার রক্তে বহে যাওয়া দাবী আদায়ের মিছিলে থাকার সে টান আমার জীবনে অন্যরকম এক স্বাদ এনে দিয়েছে। এ পর্যন্ত চলে আসা জীবনে দাবী আদায়ের কোন মিছিলে ভুলক্রমেও বাদ যাইনি। দেশে-বিদেশে সকল মিছিলেই অংশ নিয়েছি এবং আজও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। এবার মূল কথায় আসি।

আজ যখন মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ২৮৯.৫৬ মাইল দূরের অনুমান ৫ঘন্টা ১৬মিনিটের রাস্তা পার হয়ে ছোট্ট সমুদ্রসৈকত শহর ‘হারঘাদা’র স্বাস্থ্যনিবাস কামরায় বসে লিখছি তখন আমি নিজেও দাদা হয়ে গেছি। আমার ‘লেপটপ টেবিল’এর পাশেই আমার বিছানায় উপোর হয়ে খেলছে আমার একমাত্র নাতি ইসহাক। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে কপোল বেয়ে একফোঁটা অশ্রু নিচে নেমে গেলো। গল্পচ্ছলে দাদা বলতেন ভাল করে লিখাপড়া করো তা’হলে দিল্লী-মিশর দেখতে পারবি। এ মূহুর্তে দাদার কথাই বার বার মনে পড়ছে। ঠিকই জীবনযুদ্ধে পেছনে পড়ে গিয়েও আমি দিল্লী-মিশর দেখতে সক্ষম হয়েছি। এ যেনো দাদার সেই অমোঘবাণীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

আমার নাতি, আমরা সকলেই তাকে আদর করে আইজাক বলে ডাকি। ৭মাস বয়সের আইজাক দাদার স্বাস্থ্যনিবাসের বিছানায় ঘুমিয়ে খেলছে দেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে পড়ে গেলো দাদার কাছ থেকে শুনা সেসকল দিনের অতি ভয়ঙ্কর ও রোমাঞ্চকর সেসব কাহিনী। জাহাজে চাকুরীর সুবাদে দাদা বেশ কয়েকবারই মিশর এসেছেন, কায়রো শহর দেখেছেন। দাদার কাছে মিশরের মানুষজন তেমন ভাল ছিল না। দাদা মিশরীদের মিশ্রি বলে জানতেন। দাদার কাছে মিশরীয়রা বিশেষকরে কায়রো শহরের শ্রমিক কর্মজীবীগন প্রশংসা পাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তার বহুবিদ কারণ নিশ্চয়ই ছিল যা আর কোন কালেই দাদার কাছে জানতে চাইতে পারবো না। সেই কায়রোতে বসে আজ আমি লিখছি। কেমন যেনো একটা স্বপ্নবিভোর অবস্থা।

কায়রোর সরকারী নাম আল-কাহিরাহ যার অর্থ “বিজয়ী”। জেনারেল জাওহার আল-সিকিলির নেতৃত্বে ফাতেমিদের দ্বারা কায়রো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ফাতেমীয় খলিফা আল-মোয়েজ আল দিন-এর কাছ থেকে ফাতেমীয় রাজবংশের নতুন রাজধানী হওয়ার আদেশ নিয়েছিলেন। প্রথমে এটিকে আল-মানসুরিয়াহ নামকরণ করা হয় তারপর এটিকে পরিবর্তন করে আল-কাহিরা “কায়রো” করা হয়।[চলবে]

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT