H&M Fashion কর্মক্ষেত্রে সব ধরনের খারাপ ব্যবহার বা হয়রানী করার বিরুদ্ধে সবসময় কাজ করছে। স্বেচ্ছা সেবা সংস্থা বলেছে, সর্বগ্রাসী যৌন হয়রানী, মৌখিক ও শারীরিক দূর্ব্যবহার পোষাক কারখানাগুলোর সর্বত্র রয়েছে। এমন মন্তব্য বড় বড় দু’টি প্রতিষ্ঠানের। তাদের এমন মন্তব্যের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এ মন্তব্য করেছিলেন “GAP”, “H&M” ও “ETI” এ বছরের গত জুন মাসে। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ‘নিউইয়র্ক টাইমস’। এর পর আর কোন অগ্রগতি হয়েছে কি-না এখনও আমাদের জানার সুযোগ হয়নি।
বিশ্ব ফ্যাশন শিল্পের পুরোধা H&M and Gap Inc. গত ৫ই জুন মঙ্গলবার ২০১৮ তাদের এক সংকল্পের কথা ঘোষনা করেছিল। তারা বলেছিল যে এশিয়ার বিভিন্ন কারখানায় পোষাক শিল্পের কর্মীদের উপর নানা ধরনের অসুভ আচরণ ও যৌন হয়রানীর বিষয়ে তারা উৎপাদন পদ্ধতির একেবারে ভেতরে প্রবেশ করে দেখবে। তারা আরো বলেছিল এসব হীন কাজের বিরুদ্ধে তাদের কাছে বহু খবর ও তথ্য আছে আর তাই তারা নিজেই সরজমিনে দেখতে চায়।
পোষাক কর্মীদের উপর যৌনহয়রানী ও দূর্ব্যবহারের প্রশ্নে তারা কোন আপোষের পক্ষপাতি নন। আর এ কারণে বিভিন্ন সময়ে তারা বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার ৫৩টি পোষাক কারখানার ৫৫০জন কর্মীর সাথে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এসব কারাখানা, বিশ্বের বড় বড় সড়কে অবস্থিত তাদের বিক্রি প্রদর্শনী কক্ষে কাপড় সরবরাহ করে থাকে। কারখানা কর্মীদের সাথে তাদের আলাপ-আলোচনায় উপরোল্লিখিত হয়রানীসমূহের তথ্য উঠে আসে। তারা জানতে পেরেছেন যৌনহয়রানী ও দূর্ব্যবহারের ভয়ে থাকতে হয় কর্মীদের। এসব আক্রমনের বিরুদ্ধে কোন নালিশ করতে গেলে উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
বিগত কয়েক বছর যাবৎ “গ্যাপ ও এইচ এণ্ড এম” এই যৌথ তথ্য তালাশ অভিযান পরিচালনা করে। কারণ, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের মাঝে পোষাক কর্মীদের উপর যৌন হয়রানীসহ বিভিন্ন নমুনার অপব্যবহারের অভিযোগ নানাভাবে সংবাদ মাধ্যমে আসে। পশ্চিমাবিশ্বে পোষাককর্মীদের পক্ষে জনমত তৈরী হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল মহল জানেন, অতি সামান্য মজুরীর বিনিময়ে যে পোষাক তৈরী হয় তার দাম হাজারগুণ বেড়ে গিয়ে উন্নত বিশ্বের হাজার হাজার দোকানে বিক্রি হয়। ফলে সভ্য জগতের মানুষ, পোষাক শিল্পের এ দুই বড় বড় ব্যবসায়ী কোম্পানীকে তাদের সরবরাহ নলের ভেতরকার এ দাসত্বকে স্থায়ীভাবে দূর করার পক্ষে দাবী তোলে। উল্লেখযোগ্য যে, পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় ৬৯টি দেশে “H&M”-এর কমপক্ষে ৪,৭৫০ টি দোকান রয়েছে। “গ্যাপ” দুনিয়ার ৯০টি দেশে ৩,৭০০টি কাপড়ের দোকান চালাচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান “যারা”র পরেই সুইডেনের “H&M”, বিশ্বের ২য় বৃহৎ কাপড় ব্যবসায়ী। তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছে, এসকল হয়রানী নিয়ে সুশীল সমাজ ও পোষাক কর্মচারী ইউনিয়নের দেয়া প্রতিবেদন তারা আবারো দেখবেন। প্রতিবেদনের প্রতিটি লাইন তারা নজর করে দেখবেন এবং উৎপাদনকারী দেশগুলিতে বিদ্যমান তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে প্রতিটি কারখানা পর্যায়ে ব্যবস্থা নেবেন। কোম্পানীর একজন মুখপাত্র এক লিখিত প্রতিবেদনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
আমেরিকান খুচরা পোষাক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান “গ্যাপ”, ইউনিয়ন ও সুশীল সমাজের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন বলে জানায়। তাদের মুখপাত্র আরো বলেন যে তাদের বৈশ্বিক দল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও বিহীত ব্যবস্থা গ্রহনে তাদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিবেদনে প্রতিটি পোষাক কারখানায় সর্বব্যাপী যৌন হয়রানী, গালিগালাজ এমনকি শারিরীক নির্যাতনেরও তথ্য রয়েছে। শুধু তাই নয় কারখানা প্রধানের সাথে যৌনকর্মে রাজী না হলে বিভিন্ন নমুনায় হয়রানী এমনকি কর্মচ্যুতিরও ঘটনা রয়েছে।
গত মাসে প্রকাশিত “দি এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ”{The Ethical Trading Initiative (ETI)}-এর ভিন্ন এক প্রতিবেদনে একই নমুনার অবস্থা বিরাজ করার কথা বলা হয়েছে। “The Ethical Trading Initiative (ETI)” হলো কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলার একটি প্রতিষ্ঠান। “এইচ এণ্ড এম” ও “গ্যাপ” এই সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানের সদস্য রয়েছে। তাদের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় বিশ্বের আরেক বৃহৎ খুচরা পোষাক বিক্রেতা কোম্পানী “ওয়ালমার্ট”-এর এশিয়ায় থাকা কারখানগুলিতে ওই একই অবস্থা বিরাজ করছে।
দেব্বি কোলটার নামের একজন “ETI”-এর কর্মী বলেন, এ ধরনের অবস্থা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। লিঙ্গ বৈষম্য বা যৌন হয়রানী, এসমূহ বিষয়ে ব্যবসায়ীকে তার সরবরাহ কারখানার কর্মচারীদের বিশেষ করে মহিলাদের জীবন ও কাজের সমূহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এ সমূহ কাজ মানুষকে দিয়ে দাস খাটানোর বাইরে কিছু নয়।