মুক্তকথা প্রতিবেদন।। একটি প্রেমের ছোট্ট কাহিনী। প্রেম-ভালবাসা বিশ্বচরাচরে সর্বত্র বিরাজমান। বহু জ্ঞানী-গুণীর কথা ভালবাসায় বিশ্বগড়া। বস্তুজগতের সকল কর্মে ভালবাসার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রতিটি ধূলির কণায় কণায় ভালবাসা কাজ করে যায় নিরবে নিভৃতে। ভালবাসা ছাড়া কোনকিছুই গড়ে উঠতে পারে না। সে ইমারত থেকে মানব জনম সর্বত্র সমানভাবে কাজ করে যায়। এক জিনিষের প্রতি অন্য জিনিষের আকর্ষণ ও বিকর্ষণ, এক প্রাণীর প্রতি অন্য প্রাণীর মায়া, মমতাই এ সৃষ্টিকে টিকিয়ে রেখেছে। টান, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, মায়া-মমতা, ভালবাসা এসকল প্রাকৃতিক কাজ উঠে গেলে এ মহাবিশ্ব টিকে থাকতে পারবে না।
ভালবাসা তাই প্রাণীজগতের অমোঘ এক বিধান। মানুষের বেলায় প্রেম বা ভালবাসা আদেখা মনোজগতের কিছু লেন-দেন। মানুষের প্রতি মানুষের মনের গহীন থেকে মমতার টান অনুভব করা। সে অনুভব এমনও হয় যে অনেক সময় মানুষ নিজেকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করেনা। আবার মনের এ টান দু’টো মানুষকে মহাত্মায় পরিণত করতে পারে। এ বিশ্বে এ ধরনের প্রমাণ ভুরি ভুরি রয়েছে।
জীবনে যারা প্রেম করেছেন এমন পরিচিতজনদের কাছ থেকে শুনেছি যা তাদের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে; জীবনকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। অর্জন, তাদের বাস্তবতায়, আকাশছোঁয়া। আবার এমনও মানুষকে চিনি যাদের প্রেম বা ভালবাসা জীবনকে তেঁতো করে তুলেছিল। এই তেঁতো অবস্থায়ই তাদের দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। মনের টান, প্রেম বা ভালবাসা এমনই, অভিজ্ঞজনের কথা এটি। ভালবাসাকে ঘড়ির কাটার মত ঘাটে ঘাটে মিলিয়ে চালাতে না পারলে ভালবাসা অনেক সময় উল্টো ফল দেয় এ যেমন সত্য আবার নিষ্ঠার সাথে নিষ্কলুষ সুহৃদমনে সাধকের মত লালন করলে জীবনকে অমর চিরস্মরণীয় করে তুলে।
এ কন্যার চেহারায় কষ্ট ক্লিষ্ট দারীদ্রের ছাপ আছে। আছে ভয় নিরাপত্ত্বাহীনতার ভাব। পাপ এমন দারীদ্রে যায় না, পাপ ধনীর বিলাস। ছবি: মুক্তকথা |
এতো কথা যে ঘটনাটির জন্য, সে অনেকটা খুবই তুচ্ছ ঘটনা বলে অনেকেরই কাছে মনে হবে। চা-শ্রমিক জীবনের ছোট্ট গলিতে পড়ে থাকা দুই মানব সন্তানের কাহিনী। এ আর এমন কি! এরাতো সম্ভ্রান্ত কোন মানুষ নয়। কিন্তু আমাদেরকে ঘটনাটি বেশ চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে। উপর থেকে ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। আমাদের সমাজে এখনও বিয়ে বিষয়ে ছেলে-মেয়ের মতামতকে অনেকটাই উপেক্ষা করা হয়। যা কোন অবস্থাতেই সঠিক নয় বলেই আমরা মনে করি।
উল্লিখিত ঘটনাটি ২০১৯সালের অক্টোবর মাসের। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের দুই শ্রমিক পরিবারের কাহিনী। স্বামী ত্যাগ করে চলে গেছেন এমন এক চা-শ্রমিকবধুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে পরিচিত এক চা-শ্রমিকপুত্র স্বপন কুমারের। অবশ্য এ স্বপন কুমারের বিরুদ্ধে বহু প্রেমের অভিযোগ আছে জানা গেছে। সে সত্যি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠেনি।
সাদামাটা চোখে এ প্রেমিক যুগলের চলাফেরাকে অনৈতিকভাবে মেলামেশা হিসেবে দেখে প্রতিবেশীরা। ফলে চা শ্রমিকরা প্রেমিক ছেলেকে আটক করে তার বাড়িতে অভিবাবকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু পরে আবারও গভীর রাতে প্রেমিকার বাড়িতে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে প্রেমিক স্বপনকুমার। এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে ভোরে পুলিশ প্রেমিক ও প্রেমিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭ অক্টোবর ২০১৯সালের বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় মাধবপুর চা বাগানের পশ্চিম লাইন শ্রমিক বস্তিতে। প্রেমিক এই স্বপন কুমার নুনিয়া(৪০) মাধবপুর চা বাগানের বাজার লাইনের নারায়ণ নুনিয়ার ছেলে।
স্বপনকুমারের বহু প্রেমের বিষয়ে মাধবপুর চা বাগান সূত্রে জানা গিয়েছিল, এ চা বাগানের ইউপি সদস্যা সুমিত্রা বালা নুনিয়ার ছেলে স্বপন কুমার নুনিয়া বিবাহিত হলেও পশ্চিম লাইন শ্রমিক বস্তির রামু রবিদাসের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে(শান্তি রবিদাসের) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে দীর্ঘ দিন ধরে অনৈতিকভাবে মেলামেশা করছিল। বুধবার রাতে এভাবে অনৈতিক মেলামেশার কারণে(শান্তি রবিদাসের) স্বজন ও চা শ্রমিকরা তাদেরকে আটক করে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর রাতে প্রেমিকা(শান্তি রবিদাস) প্রেমিক স্বপন নুনিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রহন করে নেওয়ার জোর দাবি জানালে স্বপনের মা ইউপি সদস্যা সুমিত্রা বালা নুনিয়া ধমকিয়ে তাকে ফেরৎ পাঠান। এর পর আবার প্রেমিক স্বপন নুনিয়া প্রেমিকার(শান্তি রবিদাসের) বাড়িতে গিয়ে তার কক্ষেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যার চেষ্টা করে। ঘটনাটি টের পেয়ে বাড়ির লোকজন হাল্লা চিৎকার দিলে চা শ্রমিকরা এগিয়ে এসে দঁড়ি কেটে স্বপন নুনিয়াকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।
বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করে কমলগঞ্জ থানায় খবর দিলে ভোর ৫টায় একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে প্রেমিক ও প্রেমিকা দুইজনকেই থানায় নিয়ে আটকিয়ে রাখে। ওই সময় মাধবপুর চা বাগানের শ্রমিকরা আরও জানিয়েছিলেন, স্বপন কুমার নুনিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ইতিপূর্বে আরও ৫টি পরিবারের ক্ষতি করেছে। সে ইউপি সদস্যার ছেলে বলে ভয়ে কেউ তার প্রতিবাদ করে না।
মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চা বাগানে সামাজিক প্রথা খুবই শক্ত। এ ঘটনাটি দুই সম্প্রদায়ের সমাজপতি ও প্রতিনিধিরা সামাজিক বৈঠক করে সমাধান করার চেষ্টা করছেন।
কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ফরিদ মিয়াও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় মুচলেখার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোন পক্ষই কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না। তারা চা বাগানে সামাজিক বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। তাই এ ঘটনায় আইনী কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
কমলগঞ্জ থেকে ওই সময় খবরটি পাঠিয়েছিলেন প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ।