লণ্ডন অফিস।। লিভার ও হৃদপিণ্ড এক কিন্তু শিশু দু’টি। বুকে বুকে যুক্ত এমন অদেখা বিস্ময়কর দু’টি শিশুর জন্ম দিয়েছেন হণ্ডুরাসের এক মা। জেনিফার পামেলা মার্টিনেজ নামের ওই মায়ের বয়স মাত্র ২৭ বছর। জন্মদানের মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি বুঝতেই পারেননি তার শিশু দু’টির অবস্থা এমন। নিয়মানুযায়ী জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুকে বুকে যুক্ত শিশু দু’টির নাম রেখেছে মারিয়া জোস এবং মারিয়া ফার্নান্দেজ। যমজশিশু দু’টি সুস্থ অবস্থায় এখনও হাসপাতালেই আছে। এমন বিস্ময়কর খবর দিয়েছে দৈনিক মেইল অনলাইন।
মেইল লিখেছে, হণ্ডুরাসে বসবাসকারী ৪সন্তানের জননী বুকে বুকে যুক্ত যমজশিশু দু’টির জন্য সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। কারণ ডাক্তার যুক্ত শিশু দু’টিকে আলাদা করতে অপারগতা জানিয়েছে। ডাক্তারদের মতে বুকে বুকে যুক্ত শিশু দু’টিকে আলাদা করতে গেলে একটি শিশুকে মরতেই হবে। আর মা পামেলা তা কখনই চান না। যা দুনিয়ার কোন মা-ই চাইতে পারেনা। যমজ
শিশু দু’টি মুখোমুখি বুক ও পেট যুক্তঅবস্থায় হাসপাতালেই আছে। তাদের বাড়তি অক্সিজেন দিয়ে জীবিত রাখা হয়েছে। হণ্ডুরাসের রাজধানী তেগুচিগালপা শহরের ‘এসকোয়েলা ইউনিভারসিটারিও হাসপাতালে’ তাদের বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছে। তবে তাদের এভাবে বাঁচিয়ে রাখার খরচ যোগান দেয়া মা-বাবার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই বলে কোন হৃদয়ে মা-বাবা বলতে পারে তাদের আনন্দের ধন একটি শিশুকে মেরে ফেলতে। আর তাই মা পামেলা ও বাবা এমন বিষয়ে বিশ্বের নামী-দামী ডাক্তার বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাদের শিশু দু’টিকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা নিতে।
যুক্ত যমজশিশু জন্মের বিষয়ে কিছু জরিপের বিষয় ব্যাখ্যা দিয়ে ‘মেইল’ লিখেছে, সারা দুনিয়ায় প্রতি ২লাখে একটি করে যুক্তযমজশিশু জন্ম নেয়। তবে এদের মধ্যে গড়ে ৩৫ভাগ শিশুই দু’দিনের বেশী বাঁচেনা। কারণ এই নমুনার যুক্ত যমজ জন্ম খুবই বিচ্ছিন্ন ও কম। ফলে ডাক্তারগন এখনও সঠিকভাবে জানেন না যুক্ত যমজের আসল কারণ কি! বিশেষজ্ঞগন মনে করেন যে নারীদের ডিম্বাশ্বয়ে শিশু ভ্রুণ এখনও অজ্ঞাত অজানা কারণে দু’ভাগ হয়ে পড়ে। এই দু’ভাগ হওয়া অনেকটাই অজ্ঞাত কারণে যুক্ত থেকে যায়। যার কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
শিশু দু’টির একটি হৃদপিণ্ড থাকায় চাহিদামত অক্সিজেন তৈরী করতে পারছে না ফলে তাদের জীবিত রাখতে বাড়তি অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালেই থাকতে হবে। অবশ্য শিশু দু’টি ঠিকমত খাবার নিচ্ছে বলে হাসপাতাল জানিয়েছে।
ওই হাসপাতালের একজন মুখপাত্র মিগুয়েল ওসোরিও মেইল অনলাইনকে জানিয়েছেন যে এদের পৃথক করতে গেলে একটি শিশুকে বাঁচানো যাবে না। আর এমন কাজ তারা করতে পারেন না।
এদিকে যুক্ত যমজ শিশু দু’টির বাবার স্থায়ী কোন কাজ নেই। খণ্ডকালীন কিছু কাজ তিনি করেন যা দিয়ে শিশু দু’টির কোন ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা দুনিয়ার ডাক্তার বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়ের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য।
মা মার্টিনেজ এর শেষ কথা আমার আরো দু’টি বাচ্ছার মত এ দু’টিকেও জীবন দিয়ে ভালবাসি। আমি কি করে এমন পাষাণ হৃদয় হবো যে আমার একটি নিষ্পাপ শিশুকে মেরে ফেলতে চাইবো!
মেইল আরো জানিয়েছে যে এ ধরনের যুক্ত যমজ অবস্থার ডাক্তারী নাম “সিয়ামিজ”। কারণ ১৮১১-১৮৭৪ সাল সময়ে ‘চেং’ এবং ‘ইং বাঙকার’ নামের বিশ্বের প্রথম অনুরূপ যুক্ত যমজ শিশুর জন্ম হয় এবং তারা ছিল সিয়ামের মানুষ। সেই থেকে এই নমুনার যুক্ত যমজকে ডাক্তারগন “সিয়ামিজ” বলে অভিহিত করেন। ছোট একটি আশার বিষয় হলো ২০১৬ সালের ২৯শে ডিসেম্বর হুবহু একই ধরনের যুক্তযমজ জন্ম নেয় টেক্সাসে। তাদেরও হৃদপিণ্ড ও লিভার এক ছিল। তাদের কিন্তু সফলভাবে এই বিগত জানুয়ারীতে বিযুক্ত করা হয়। সূত্রঃ ডেইলি মেইল অনলাইন