এম শামসুদ দোহা
১৪ই জানুয়ারী।।
“লালচে মুড়ি” দেখতে কদাকার হলেও ১০০% ভেজাল মুক্ত খাঁটি মোখরোচক খাবার। বাজারের ধবধবে সাদা ভেজালযুক্ত মুড়ির চেয়ে স্বাদেও অতুলনীয়। এই শীতে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ধুম পড়ে মুড়ি ভাজার। মা বোনেরা হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও এই মুড়ি ভাজার পর্ব ঠিক সামলিয়ে নেয়। সঠিক উপকরন মিশ্রিত করার ফলেই তো চাউল ঠিক ভাবে ফুটে খাঁটি মুড়ি বেরিয়ে আসে। আর এই মুড়ি দিয়ে চলে শীতের মুখরোচক নানা রকমের খাবার। গুড় মুড়ি, মুড়ির মোয়া এরকম বহু রকম মুড়ির খাবার দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা কিংবা সকাল বিকেলের নাস্তা পর্ব সম্পন্ন হয়। শীত এবং মচমচে মুড়ি এ দু’টোতে বাংলা মুখরিত, পিঠা পার্বন কিংবা অতিথি আপ্যায়ন এ সময়ের বাংলার ব্যস্ত রূপ, অপরূপ।
“চড়াই ভাতি ” উপচে পড়া আনন্দের এক মহা আয়োজন। পরিবারের বড়রা যেখানে শীতের পিঠা পার্বণ এবং সদুর( মেহমান) নিয়ে ব্যস্ত, এই সুযোগে ছোটরা কম যায় কিসে! শুরু হয়ে যায় বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে চড়াই ভাতির আয়োজন। এ ঘর ও ঘর থেকে চাউলসহ রান্নার সামগ্রী বড়দের নজর এড়িয়ে সংগ্রহ করা হয়। কিছু সংখ্যক উদার মনের মায়েরা এ আয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়ায়। নয়ত বেশীর ভাগই ধমক কিংবা বাঁকা চোখে শাসিত করে, ঘরে খাওয়া বন্ধ হবে বলে জানিয়ে দেয়। মায়েদের শাসন কিংবা ধমক কোনটাই এই মহা আয়োজনকে থামিয়ে দিতে পারে না বরং তা আরও বহু গুণ বেড়ে যায়।
কুড়ানো খড়ির ধোঁয়ায় চোখের পানিতে ভেসে রাধুনীর সেই কি অবস্হা! অবশেষে আনাড়ি হাতের সেই আধা সিদ্ধ রান্না পরিবেশন করা হয়। বড় হয়ে বহু নামীদামী খাবার হয়ত খাই কিন্তু চড়াই ভাতির সেই আধা সিদ্ধ খাবারের মজা কোথাও খুঁজে পাই না। বড় হয়ে আজ চড়াই ভাতিকে পাই বন ভোজন রূপে। বন ভোজনে হয়ত নতুন নতুন জায়গা দেখা হয় কিন্তু চড়াই ভাতির সেই লুকোচুরী খেলার আনন্দ কি তাতে খুঁজে পাওয়া যায়! এই শীতে মন চলে যায় গাঁয়ে চড়াই ভাতির টানে।