1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
অবহেলা ও কালের স্বাক্ষী হয়ে পড়ে আছে বহু বধ্যভূমি - মুক্তকথা
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

অবহেলা ও কালের স্বাক্ষী হয়ে পড়ে আছে বহু বধ্যভূমি

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৫৪৯ পড়া হয়েছে
অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে গণকবর

পাঁচগাঁও’র গণকবরের স্থানটি আলাদা করা হলেও, এখন পর্যন্ত একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি

আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার॥ মৌলভীবাজারে পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ আর ধর্ষণের সেই কাহিনী আজো জেলার বিরঙ্গনা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের শিউড়ে তুলে। তারা নিজেদের সামলে রাখতে পারনেনা। কান্না বিজড়িত কন্ঠে ও চোখের জলেই যেন ভেসে উঠে ওইসব ফেলে আসা কাহিনী। অসংখ্য তাজা প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১এর ৫ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ৬ডিসেম্বর মির্জা আজিজ আহমদ বেগ ভারতীয় একজন সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে তৎকালীন মহকুমা কর্মকর্তার (এসডিও) অফিস সন্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে মনু ধলাই নদীর পলিবাহিত জল শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়। বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয় জেলার আকাশ-বাতাস। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক যুদ্ধ হয়। এক সূত্র জানিয়েছে, হানাদার বাহিনী ৫৬টি স্থানে চালিয়েছিল নারকীয় গণহত্যা। সম্মুখযুদ্ধের স্থানগুলোর মধ্যে শেরপুর ছাড়া অন্য স্থানগুলো এখনও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। জেলাজুড়ে ৫৬টি বধ্যভূমির মধ্যে কয়েকটি মাত্র সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত বধ্যভূমি ও সম্মুখসমরস্থল সংরক্ষণের কথা বলা হলেও বাস্তবতার সাথে এর মিল নেই। সংরক্ষিত বধ্যভূমি ও স্থাপনার পরিচিতি ও হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় পর্যটন জেলাখ্যাত মৌলভীবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং নতুন প্রজন্ম ঐতিহাসিক পটভূমি জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের কাছে এসব স্থানে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র সম্পর্কে কোনো তথ্য পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে না এখনো।
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্থানি বাহিনী নিরীহ জনসাধারণকে ধরে এনে প্রথমে নির্যাতন চালাত। পরে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটিচাপা দিত। তাদের নিষ্ঠুর বর্বরতার চিহ্ন হয়ে আছে এসব বধ্যভূমি ও গণকবর। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে স্থানীয় জনসাধারণ গণহত্যার স্মারকগুলোকে চিহ্নিত করেন। কিন্তু স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়ায় অনেক স্থানকেই এখন গণকবর হিসেবে চেনা যাচ্ছেনা। আবার অনেক স্থানে গণকবরের স্থানগুলো উন্মুক্ত পড়ে আছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্থানি বাহিনী মৌলভীবাজার জেলার যেসব স্থানে গণহত্যা চালিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সে রকম ৫৬টি গণকবরের স্থান থেকে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ১৯৯৯ সালে আটটি স্থান বাছাই করা হয়। এগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের বাড়ন্তি, নালিউড়ি সড়কের উত্তর পাশের গণকবর, কাগাবলা ইউনিয়নের নড়িয়া গ্রামের কামিনী দেবের বাড়ির দক্ষিণ পাশের গণকবর, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের হিরণময় দাসের দীঘিরপাড়ের গণকবর, কুলাউড়া উপজেলার হাকাতির দীঘিরপাড়ের গণকবর, কুলাউড়া রেলস্টেশনের দক্ষিণে রেললাইনের পূর্ব পাশের গণকবর, বড়লেখা উপজেলার সায়পুর গণকবর, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানঘাঁটি সংলগ্ন গণকবর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া গণকবর।
বাছাই করা গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে বধ্যভূমির বর্তমান মালিক ও দখলদারদের বিবরণ, গণকবরের স্কেচ ম্যাপ তৈরি ও ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ কার্যক্রম আর এগুতে পারেনি। তবে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানঘাঁটি সংলগ্ন গণকবর, শ্রীমঙ্গলের বিজিবি সেক্টর সংলগ্ন ভাড়াউড়া গণকবর, ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা সড়কের গণকবর এবং কুলাউড়া শহরের মাঠে সরকারি ও সাধারণ মানুষের আর্থিক অনুদানে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। মৌলভীবাজার শহরের মনু নদীর তীরে চাঁদনীঘাটে প্রদর্শনী করে পাকিস্তানি বাহিনী তিনজনকে হত্যা করে। সেখানে তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আংশিক নির্মাণকাজ করা হয়। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর বাজারে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ গড়ে তোলে প্রতিরোধ।

‘৭১-র এপ্রিলের শুরুর দিকে দু’দিন সম্মুখযুদ্ধ হয় শেরপুরে। ঐতিহাসিক শেরপুর যুদ্ধের কথা তৎকালে বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার হয়। এই যুদ্ধে শহীদ হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুনীল ভৌমিক, আজিম উদ্দিন মাস্টারসহ চার-পাঁচজন। এই সম্মুখ সমরস্থল, বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথাকে স্মরণীয় করে রাখতে শেরপুর গোলচত্বর এলাকায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ভাস্কর্য। এই চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর। সম্মুখ সমরে যারা শহীদ হলেন, তাদের নাম কিংবা কোনো স্মৃতি এখানে সংরক্ষণ করা হয়নি। শ্রীমঙ্গলস্থ বিজিবি সেক্টরের নিকটবর্তী ভাড়াউড়া গণকবরে শায়িত বীর শহীদদের নামফলক লাগানো হয়নি। যেসব স্থানে স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বীর শহীদদের নামফলক লাগানো হবে এমনটা জানা গেছে।
রাজনগর পাঁচগাঁওয়ের গণকবর : ১৯৭১ সালের ১ মে থেকে পাকিস্তানি বাহিনী রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যাকান্ড শুরু করে। এদিন হানাদার বাহিনী উপজেলার পঞ্চেশ্বর গ্রামে নগেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস ও তার ভাতিজা মণি বিশ্বাসকে হত্যা করে। একই দিনে মুন্সীবাজারে লুটপাট চালায় এবং গ্রামে ঢুকে সনৎ ঠাকুর, ছায়া শীল, খোকা দেব, মুকুল দাস ও ডা. বনমালী দাসকে হত্যা করে। এছাড়াও উপজেলার ফতেপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদী পথে নদী পাড়ের সাদাপুর, তুলাপুর, সুনামপুর, যোগীকোনাসহ আরো বেশ কিছু গ্রামে ঢুকে তান্ডব চালিয়ে লোক ধরে নিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনারা প্রায় ৫০ জনের একটি দল দু’টি ট্রাকে করে পাঁচগাঁওয়ে ঢুকে। দালালদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা গ্রামের লোকদের ধরে একটি দীঘির পাড়ে এনে হাত-পা বেঁধে এক জায়গায় জড়ো করে। গ্রামের ঘরে ঘরে তখন পাকিস্তানি সেনারা আগুন লাগিয়ে দেয়। এক সময় জড়ো করা গ্রামবাসীর শরীর থেকে কাপড় খুলে একজনের গলার সঙ্গে অন্যজনের পা বেঁধে জোড়ায় জোড়ায় দীঘির জলে নিক্ষেপ করে। এরপর ভাসমান লোকদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাশফায়ার করে। হাত-পা বাঁধা ৫৯ জন গ্রামবাসী সেদিন এখানে শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনারা চলে গেলে গ্রামবাসী স্বজনদের লাশ তুলে এনে দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি গণকবরে মাটিচাপা দেন। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে সেদিন একটি লাশেরও দাহ করা সম্ভব হয়নি। পাঁচগাঁওয়ের হত্যাযজ্ঞে সেদিন শহীদ হয়েছিলেন যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন বসন্ত নমঃশূদ্র, উমেশ নমঃশূদ্র, সনাতন নমঃশূদ্র, নগবী শব্দকর, গোপাল শব্দকর, অভি শব্দকর, রমণ শব্দকর, নীরোদ শব্দকর, মশাই শব্দকর, ইরেশ শব্দকর, ব্রজেন্দ্র শব্দকর, সার শব্দকর, নিত্যবালা শব্দকর, নরেশ শব্দকর, পুতুল অধিকারী, ইরেশ মালাকার, উমেশ মালাকার, আদাই মালাকার, টনা মালাকার, পুতুল মালাকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি দেয়াল তুলে গণকবরের স্থানটি আলাদা করা হলেও, এখন পর্যন্ত একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায়নি।
মৌলভীবাজার প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(পিটিআই): মৌলভীবাজার প্রাইমারি টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে(পিটিআই) ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার। এখানে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। এখনও মুখে মুখে শোনা সেই নির্যাতনের কাহিনী বলে অনেকেই আচমকা শিউরে ওঠেন। ‘মৌলভীবাজার পিটিআইতে পাকিস্তানি মিলিটারির টর্চার সেল ছিল। এখানে অনেকের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে কবর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার বর্তমান বিডিআর ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানি আর্মির ক্যাম্প। অনুমান সেখানেই  মুক্তিযোদ্ধা সুদর্শন, মুকিত, রানু, সমীর, শহীদ ও সোমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT