হারুনূর রশীদ।।
আজ ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। বহু মানুষেরই ধারনা নারী স্বাধীনতা বা নারী ভোটাধিকারের জন্য বৃটিশ সাম্রাজ্যে কেবল সাদা চামড়ার মহিলাগনই আন্দোলন করেছেন এবং অধিকার আদায়ে সফলতাও এনেছেন। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। নারী অধিকার বিশেষ করে নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে ভারতীয় মহিলাদের অবদান কমতো নয়ই বরং বিভিন্ন হিসেবে সাদাদের থেকে অনেক অনেক বেশী।
নারী ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলনকারী ভারতীয় মহিলাদের মাঝে যার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তিনি ছিলেন ভারতের শিখ রাজ্যের সর্বশেষ মহারাজার কন্যা রাজকন্যা সোফিয়া দুলিপ সিং।
এই রাজকুমারী সুফিয়া যে শুধু, নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনে সহায়তা করেছেন তা নয়। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিছিল করেছেন। তার রাজকুমারী উপাধির গৌরবকে খুবই দক্ষতার সাথে কাজে লাগিয়েছিলেন নারী অধিকার অন্দোলনকে সাধারণে পৌঁছিয়ে দিতে।
এদের কতিপয়ের উপর খুব অল্প পরিসরে আলোকপাত করে, এক বঙ্গ ললনা হালিমা মানান(সম্ভবতঃ হালিমা মন্নান) ১৯১৬ সালের ১১ই মার্চ এক নিবন্ধ রচনা করেন এবং “গল-দেম.কম” তা প্রকাশ করে। এরা সকলেই শতাব্দীপূর্ব সেই ১৯শতকে নারী অধিকার ও ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
১৯১০সালের ১৮ নভেম্বর। নিজেদের দেশের মাটিতে সামন্তবাদী ফিরিঙ্গী পুলিশী জুলুমের আরেক কাহিনী। রাজকুমারী সোফিয়া দুলিপ সিং। মনে প্রচণ্ড সাহস রাখেন। শত হোক রাজার কন্যাতো। সাহসতো তার রক্তে আর ধমনীতে থাকবেই। রাজসীক সেই সাহস নিয়ে সেদিন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ৩ থেকে ৪শত মহিলা নিয়ে রাস্তায় মিছিলে নামেন। তাদের নিয়ে আসেন ঐতিহাসিক সেই পার্লামেন্টের সামনে। অভাবনীয় ফল দেয় সে মিছিল। সামন্তদের পদলেহী পুলিশ সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মিছিলকারী নারীদের উপর। খোলা আকাশের নিচে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন মিছিলকারী নারীগন। প্রায় ১৫০জন মহিলা জখমপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পড়ন্ত সামন্তবাদের মৃত্যুঘন্টা বাজাতে খুব কাজ দিয়েছিল সেদিনের ঐ পুলিশী নির্যাতন। সাধারণ মানুষের সামনে শান্তির নামধারী সামন্তপুলিশের লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর চেহারা দিনে-দুপুরে প্রকাশ হয়ে পড়ে। হাটে সকল হাড়ি ভেঙ্গে দেয় সোফিয়ার কয়েক ঘন্টার আন্দোলন।
বিশ্ব নারী দিবসের আজকের এ দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বীর সেই রাজকুমারীকে, দুনিয়ার নারী সমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সফলতার দরজায় পৌঁছে দিতে সামন্তপ্রভুদের একজন হয়েও নির্দ্বিধায় শ্রেণীচ্যুত না হয়ে নিজের শ্রেণী সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করতে এগিয়ে এসেছিলেন। স্মরণ করি সেই সকল বীর নারীদের যাদের বীরত্বপূর্ণ আন্দোলন দুনিয়ার নারী সমাজকে ঘোর অন্ধকার থেকে আজকের আলোয় নিয়ে এসেছে।
সূত্র: হালিমা মানান, আনসার আহমেদ উল্লাহ, স্বাধীনতা ট্রাস্ট
লণ্ডন, বুধবার ৭ই মার্চ ২০১৮ইং