লন্ডন: মাথা একেবারে ঘুরে যাবার মত খবর প্রকাশ করেছে এইবেলা। দুনিয়ার একমাত্র এবং সেরা বন ‘আমাজন’ না-কি প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়নি! মানুষই না-কি এই বনভূমির স্রষ্টা। হল্যান্ডের এক গবেষণা রিপোর্টের বরাত দিয়ে এইবেলা লিখেছে-‘ কমবেশি সবাই জানেন, অ্যামাজন জঙ্গল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রাকৃতিক বন। সেখানকার গাছপালা ও প্রাণীকূল প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছে। এবার চিরন্তন সত্যটিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণা। গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যামাজন প্রাকৃতিক বন নয়, মানুষের হাতে তৈরি।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে নেদারল্যান্ডসের ন্যাচারালিস বায়োডাইভার্সিটি সেন্টার ও ইউনিভার্সিটি অব আমাস্ট্রাডামের এক দল বিজ্ঞানী। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
গত ২ মার্চ সায়েন্স নামক জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এখন আমরা অ্যামাজন বনকে যেমন দেখছি, সেটি এরকম ছিল না। এক সময় আদিম মানুষ এ অঞ্চলে বসবাস করতো এবং তারাই এসব বনের গাছপালা রোপণ করেছিল।
কিন্তু আমাদের ধারণা, আজ থেকে মাত্র ৫শ’ বছর আগে ইউরোপীয়রা প্রথম সেখানে বসতি স্থাপন করে। কিন্তু বিষয়টি ঠিক না। আজ থেকে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে সেখানে আদিম মানুষ বসবাস করত। এবং অ্যামাজন জঙ্গলের আজকের যে গঠন সেটি তাদের কাছ থেকেই হয়েছে।
তারা এ গবেষণা করতে অ্যামাজন জঙ্গলের ১১৭০টি স্থানের গাছপালা রোপণের ধরনের সঙ্গে প্রায় ৩ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের গাছপালা রোপণের ধরনের তুলনামূলক গবেষণা করেছেন। দেখা গেছে, সেই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর গাছপালা রোপণের ধরন এবং অ্যামাজন জঙ্গলের গাছপালা রোপণের ধরন একই রকম। তাই গবেষকরা বলছেন, অ্যামাজন জঙ্গলের সেই গাছপালাগুলোও কোনো না কোনো জনগোষ্ঠী রোপণ করেছিলেন। তা না হলে গাছ রোপণের ধরনের এত মিল থাকত না।
তাছাড়া আদিম কলোম্বিয়ানরা যেভাবে গাছপালা রোপণ করতেন, অ্যামাজন জঙ্গলের গাছপালা রোপণের ধরনও ঠিক সেই রকম। তাই ধারণা আরও স্পষ্ট হয় যে অ্যামাজন জঙ্গলও সেই আদিম গোষ্ঠীর দ্বারাই নির্মিত।
অ্যামাজন জঙ্গলে বাদাম, কোকো, অ্যাসাই পাম, রাবার, কাইমিটো, হিজলি ও টুকুম পাম ইত্যাদি গাছের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। আর আদিম কলোম্বিয়ানরাও ঠিক এমন গাছপালায় রোপণ করেছিলেন।
ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব আমাজন রিসার্চের গবেষক কারোলিনা লেভিস বলেন, ‘অতীত সভ্যতা খুবই পরিবর্তন প্রেমী ছিলেন। তারা সচেতনতায় বা অসচেতনায় বার বার তাদের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ইত্যাদি পরিবর্তন করতেন।’
ইউরোপীয়ানরা এ অ্যামাজন জঙ্গল জয় করার সময় অ্যামাজনে প্রায় ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন মানুষ বাস করতো। এবং এ অঞ্চলের মানুষগুলো প্রায় ৪০০টি ভাষায় কথা বলত। তারা ছিল বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। এখনো মাঝে মাঝে অ্যামাজন জঙ্গলে নতুন গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায়। তাই এও ধারণা করা হচ্ছে, তাদের পূর্বসুরিরা অ্যামাজন জঙ্গলে গাছপালাগুলো রোপণ করেছিলেন।’ (এইবেলাডটকম থেকে)