বিশ্ব প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্নতত্ত্বিক নিদর্শন হলো “সিগিরিয়া”। প্রত্নতাত্ত্বিকগন একে ‘সিগিরিয়া’ বলেই ডাকেন। অনুমান করা হয় এই ‘সিগিরিয়া’ হলো মহাভারতীয় ইতিহাসের রাম-রাবনের যুদ্ধ খ্যাত রাজা রাবনের রাজপ্রাসাদ। বিশ্বের সেরা এমন দর্শনীয় স্থানটি শ্রীলঙ্কার গিরিচূড়ায় অবস্থিত। অভিজ্ঞদের অনেকেই একে বিশ্বের ৮ম আশ্চর্য্য বলেও অভিহিত করে থাকেন। খুব স্বাভাবিক কারণেই ভাবনা আসতেই পারে যে, কোন কারণে একটি রাজপ্রাসাদকে বিশ্বের ৮ম আশ্চর্য্য বলে অভিমত পোষণ করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেখানে কয়েকশত অভুতপূর্ব রাজপ্রাসাদ রয়েছে সেখানে রাবণের প্রাসাদকে এমন চিহ্নিত করার কারণ কি হতে পারে? তার উত্তর একটিই আর তা’হলো এটি শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত একটি ‘একশিলা'(মনোলিথিক) পাথর খণ্ড। উচ্চতায় ৬৬০ফুট। এই পাথরের মাথার উপরিভাগ এমনই সমতল যে মনে হবে কেউ কোন এক দেও-দানা আকৃতির চাকুদিয়ে রুটি কাটার মত করে পাথর কেটে সমতল জায়গা তৈরী করেছে। আরও বিস্ময় ও রোমাঞ্চকর হলো সেখানে বিদ্যমান অচিন্তনীয় প্রাচীন কীর্তি। |
|
শুধু কি তাই। ওখানে ওই ৬৬০ফুট উঁচু পাথর পাহাড়ের কাটা সমতলের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অবাককরা সব ইটের তৈরী ঘর-বাড়ীর নমুনা। এ নিদর্শনগুলো শুধু দর্শকদের কাছেই আশ্চর্য্যজনক নয় স্বয়ং প্রত্নতত্ত্ববিদেরাই আজও বুঝতে পারেননি কি করে প্রাচীন মানুষ পুরো পাথুরে একটি পাহাড়ের এতো অস্বাভাবিক উচ্চতায় ইট তুলে নিয়ে ঘর-বাড়ী বানালেন। এবং কোন কাজের জন্য এসব বানানো হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদগন স্থির নিশ্চিত যে এসকল নির্মাণ কম করে হলেও ১৫০০ বছর আগের। বাড়ী-ঘর পুকুরের এই নমুনাগুলো আশ্চর্য্যের কিছুই নয়। আশ্চর্য্য বা অবাক করা বিষয় হলো কি করে এ অচিন্তনীয় উচ্চতায় ভুমি থেকে ইট নেয়া হলো? পাথর পাহাড়ের ওই উঁচুতে মাটি বলতে তেমন কিছু নেই যে ওখানে ইট তৈরী করা হয়েছে। পরের বিষয় হলো ওখানে কি করে এসকল পুকুর আর বাড়ীঘর বানানো হলো। পুকুরের দৈর্ঘ্য ৯০ফুট আর প্রস্থ ৬৮ফুট। গভীর ৭ফুট। এমন বিশাল পুকুর যা কি-না তৈরী করা হয়েছে প্রায় ৩,৫০০টন গ্রানাইট পাথর কেটে সরিয়ে। গ্রানাইট বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন শক্ত পাথর। প্রাচীন মানুষেরা কি দিয়ে এই বিশাল পরিমানের গ্রানাইট পাথর কেটে পুকুর নির্মাণ করলেন? এমন প্রশ্ন বিস্ময়ের বিশালতা নিয়ে এখনও প্রত্নতত্ত্ববিদ আর দর্শনার্থীদের মাথা ঘামায়। বলা হয়ে থাকে যে ওখানে প্রায় ৩০লাখ তৈরী ইট পাওয়া গেছে। পাথর পাহাড়ের এতো উঁচুতে এতো বিপুল পরিমান ইট তৈরীর মাটি মোটেই ওখানে নেই এবং ছিল বলেও কোন অনুমানে পাওয়া যায় না। নিশ্চয়ই নিচের মাটি থেকে ইট তৈরী করে উপরে তোলা হয়েছে। কিন্তু এতো উচ্চতায় এতো ইট সেই ১৫০০ বছর আগের কারিগরেরা কি দিয়ে উপরে তুলে নিয়েছিল? এ বিস্ময়ের কোন স্থির নিশ্চিত জবাব আজো পাওয়া যায়নি। ২০০ বছর আগের শ্রীলঙ্কা এই পাথরের উপরে কি আছে তার কোন কিছুই জানতো না। কারণ ওখানে উঠার কোন রাস্তাই ছিল না। |
তবে একটি বিষয় বিজ্ঞমহলে খুব করে আলোচিত হচ্ছে যে প্রাচীন মানুষদের কাছে এমন কোন কৃৎকৌশল ছিল যা আমাদের এই অত্যাধুনিক সময় থেকেও বেশী উন্নতমানের ছিল।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ১৮৩১ সালে জনাথন ফর্বস নামের একজন ইংলিশ এই একশিলা পাথরের পাহাড় ও তার উপরের প্রাচীন সব কীর্তি প্রথম খুঁজে পেয়েছিল।
|
|