মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। প্রাণবায়ূ বের হয়ে যাবার পর মানুষের কি হয়? আজো মানুষ সে বিষয়ে অন্ধকারে আছে। তার কিছুই মানুষ জানতে পারেনি আজ অবদি। তবে জানার চেষ্টায় মানুষ সাগরের তলদেশ থেকে শুরু করে চাঁদ অবদি ঘুরে এসেছে। রহস্যময় এ বিশ্বকে জেনে নেয়ার আগ্রহ মানুষ হারায়নি। বরং তা আরো বেড়ে গেছে। বিশ্ব জগৎকে জানার আকুতি মানুষের নতুন নয়, মানব সভ্যতার শুরু থেকেই ছিল এখনও আছে।
মানুষ মানুষকে ভালবাসে। এই ভালবাসা প্রাণীজগতে একমাত্র মানুষই প্রকাশ করে বলতে পারে। স্নেহ, মায়া বা মমতা মানুষের সেই ভাললাগার প্রকাশ। ভালবাসার এই মানুষকে মানুষ চিরতরে হারাতে চায় না। চায়না বলেই মানুষকে মানুষের জানার এতো আগ্রহ। খুঁজার এতো প্রয়াস।
মানুষ জানে প্রান অবিনশ্বর হলেও দেহ ছেড়ে চলে যেতেই হয়। একদিন রাখা এই দেহ মাটি হয়ে যাবেই। মাটি তাই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে আবারো মাটিতে মিশে যাবার সেই শ্বাশতঃ কাহিনী। মাটি তাই মানুষের কাছে মমতায়, ভালবাসায় আবেগ মথিতকরা মহাপবিত্র মাতা।
মানুষকে চিরবিদায় নিতে হয় মানুষের কাছ থেকে, প্রকৃতির কাছ থেকে। মানুষ ভাবে, কোথা থেকে আসে আর কোথা চলে যায়। সবই ঘোরআঁধার রহস্যময়। এর চেয়ে কঠিন কঠোর আর কি হতে পারে।
মানুষের প্রতি মানুষের এই ভালবাসাই মরণের পরও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার প্রিয়জনের মাঝে। মানুষের এই নিঃশ্বেস হয়ে যাবার পেছনের কারণ জানার দূর্নিবার আকাঙ্ক্ষা থেকে মানুষ খুঁজে খুঁজে নির্মাণ করে চলে ধর্ম, নিয়ম, কানুন, প্রথা, সংস্কার ইত্যাদি। সব কিছুর পেছনে প্রিয় মানুষকে মন থেকে হারিয়ে যেতে না দেয়া।
প্রাচীন মানুষের ধ্যানমার্গীয় গবেষণায় পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের প্রকাশ ঘটেছে ধর্মের মধ্যদিয়ে। সেই ধর্মের কিছু কিছু তথ্য মানুষকে জানিয়েছে যা আধুনিক মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর তথ্য ছাড়া আর কিছু নয়।
চিরতরে মানুষের এই চলে যাওয়ার চেয়ে বেদনাদায়ক আর কিছুই নেই। সেই আদিকাল থেকেই দুনিয়ার বিভিন্ন আদিম সমাজ মৃত্যু বিষয়ে তাদের নিজস্ব অনুমান বা বলা যায় নিজস্ব ধর্মীয় ধারনা থেকে মৃত মানুষের শরীর রাখার বিভিন্ন আচার নির্মাণ করেছে। যেমন মিশরীয়গন তাদের মানুষদের মমি বানিয়ে বাক্সবন্দী করে রেখে দিত।
ঠিক অনুরূপধর্মী শবরাখার প্রাচীন এক আচারের খবর পাওয়া গেছে ভূটানী একগুষ্ঠী মানব সম্প্রদায়ের মাঝে।
এরা ভূটানের লোহপ সম্প্রদায়। ভূটানের সামতসে এলাকায় তাদের বসবাস। বহুআদিকাল থেকে তারা তাদের মানুষের শবদেহ এ নমুনায় রেখে আসছে। শবদেহ রাখার এমন আচার ভূটানের দরোখা অঞ্চলের জিগমে, সিংগে, ওয়াংচুক এবং শাংলাং সাতাকা নামক গ্রামগুলিতে বহুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। অভিনব তাদের সে পদ্বতি। তারা কবরও দেয় না আবার জ্বালায়ও না। তাদের শব ধারনের পদ্বতি সম্পূর্ণ আলাদা।
এসব গ্রামের অদূরে “গাহালা” নামের দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি উপত্যকাভূমি রয়েছে। গ্রাম থেকে পায়ে হেটে ওই উপত্যকায় পৌঁছাতে একদিন সময় লেগে যায়। গ্রামের মানুষের আস্তা হলো মরণের পর তাদের সকল মানুষই বিশাল এই “গাহালা”য় শেষ অবসরে যায়। সে কারণে তারা মৃত্যুর পর মৃতদেহকে একটি কাপড় দিয়ে পেছিয়ে নেয়। মাথার উপর দিকে কাপড়ে একটি ফুর ও বাক্সের নিচের দিকে অপর একটি ফুর কেটে রাখা হয় মৃতদেহের শ্বাসপ্রশ্বাস ও শরীরের ক্লেদাদি নিঃসারণের জন্য। তাদের বিশ্বাস, “গাহালা”য় যাবার পথে শরীরের শ্বাস-নিঃশ্বাসের প্রয়োজন হবেই তখন এই ছিদ্র দু’টি কাজে লাগবে। কাপড় দিয়ে শবদেহ পেছিয়ে নেয়ার পর এক বিশেষ জাতের বাঁশের তৈরী একটি বাক্সে রাখে। পরে এক ধরনের বিশেষ নমুনার সাদা মাটি দিয়ে বাক্সটি লেপন করে নেয়। যাতে দেহ থেকে নিঃসারিত গলিতদূর্গন্ধ বাহিরে আসতে না পারে। তারপর পুরো বাক্সটিকে ঘিরে পাথরের উপর পাথর দিয়ে তৈরী করে একটি তাবুর মত ঘর। এভাবেই তারা তাদের শবদেহের সৎকার করে থাকে। তথ্য সূত্র: ভূটান নিউজ