মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে আবারও বিভক্তিঅন্ধকারে আগামীর নেতৃত্বমৌলভীবাজার, ২৪ আগস্ট ২০২১ইং আবারও দুই মেরুতে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পরপরই দু’বলয়ে বিভক্ত হয়েছেন তাদের অনুসারীরা। জেলায় দলীয় কার্যক্রম নেই বললেই চলে। হোটেলে কিংবা বাসা বাড়িতে ঘরোয়া আড্ডার মধ্যেই দলীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। দলের এই অবস্থা দেখে হতাশ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সভাপতি ও সম্পাদকের এমন কান্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন ত্যাগি নেতাকর্মীরা। এদিকে জেলা বিভক্ত হওয়ার পরপরই উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটিতেও এর প্রভাব পড়ছে। অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতাকর্মী বলেন, সাংগঠনিক ভিত্তি জাতীয় পার্টির চেয়ে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ইজ্জত সম্মানের ভয়ে অনেকেই দল ত্যাগ করছেন। অথচ সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের আমলে সাংগঠনিক মজবুদিতে দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল মৌলভীবাজার। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সম্মেলনের পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র দু’গ্রুপের সমন্বয়ে এম নাসের রহমানকে সভাপতি, খালেদা রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ও আব্দুল মুকিতকে যুগ্ম-সম্পাদক করে ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন কমিটির অনুমোদন দেন। এরপর উভয় গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্র থেকে একাধিকবার নেতৃবৃন্দ মৌলভীবাজারে এলেও পরস্পরবিরোধী অবস্থানের হেরফের ঘটেনি। দীর্ঘ ৮ বছর দু’গ্রুপে বিভক্ত থাকার পর পূণরায় কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড ২০১৭ সালের ২৫ মে এম নাসের রহমানকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। ৩দিনের মাথায় আবার উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন মেরুকরণে বিভক্তি দানা বাঁধে। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সভাপতির অনুসারীরা। পরবর্তীতে কেন্দ্রী হস্তক্ষেপে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্তির নিরসন ঘটে। কিন্তু কিছু দিন একত্রে সংসার করার পর আবারও দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলীয় একাধিক সূত্র ও সিনিয়র নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ আগস্ট জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে মুজিবুর রহমান মজনুকে আহ্বায়ক ও মনোয়ার আহমদ রহমানকে সদস্য সচিব করে পৌর আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এদিকে হঠাৎ করে চলতি বছরের ১৬ জুন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক কমিটির সাথে সমন্বয় না করে ওলিউর রহমানকে সভাপতি ও ফরহাদ রশিদকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এ থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। সভাপতির এমন সিদ্ধান্তের বিষয়টি লিখিত ও মৌখিকভাবে উর্ধ্বতন সংগঠনকে অবগত করে আহ্বায়ক কমিটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্দক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রীয় সংগঠন। এবিষয়ে পৌর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মনোয়ার আহমদ রহমান বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য চলতি বছরের ১১ জুন জেলা সভাপতির সাথে দেখা করলে তিনি প্রাথমিকভাবে ১৭ জুন নির্ধারন করেন। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করে ১৬ জুন আমাদেরকে না জানিয়ে গোপনে উনার মনোনীত লোক দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্য দলের দোসর এবং প্রকৃত বিএনপি নয় এমন ব্যক্তি সভাপতিকে ইন্দন দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে। জেলা বিএনপির অভিভাবক হিসেবে উনার কাছ থেকে আমরা এটা আসা করিনি। জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আব্দুল মুকিত বৃহস্পতিবার রাতে শহর থেকে বর্ষিজোড়ায় বাড়িতে যাওয়ার পথে তার গাড়ি হামলার স্বীকার হয়। এঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় তিনি একটি জিডি করেছেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, কে বা কারা হামলা করেছে তিনি সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। তবে ধারণা করছেন কয়েক দিন আগে পৌর বিএনপির কমিটি নিয়ে জেলা সভাপতি এম নাসের রহমানের সাথে ঝামেলা হয়। যার প্রেক্ষিতে হয়তো এ হামলা হতে পারে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন বকস বলেন, ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হলে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে যা চলছে এটা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রমান মিজান বলেন, জেলা কমিটির ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান পৈত্তিক সম্পত্তি মনে করছেন। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে দলীয় সংবিধান, নির্দেশনা ও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কিছুই মানছেন না। তিনি আরও বলেন, সভাপতির ইচ্ছামাফিক পছন্দের লোকদের পদোন্নতি ও অন্য গ্রুপের লোকদের বহিস্কার করেন। উনার যা ইচ্ছা তাই করছেন। কারো কথা মানতে নারাজ। জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, অনেকের পা থেকে জুতা বড় হয়ে গেছে। পা জুতার মধ্যে ঢুকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ২০ বছর যাবত এককভাবে আমার সিদ্ধান্তে চলছে এবং আগামীতেও চলবে। জেলায় দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “দলীয় সংবিধান মানা হচ্ছে না এটা কে বলে, কয়জন লেখাপড়া করেছে, এদের নেতা বানিয়েছি আমি। সংবিধান কয়জন বুঝে। এগুলো নিয়ে কথা বলে একটি ছেলে। সে উড়ে এসে জুড়ে বসে পদ পেয়ে দিশে হারা হয়ে গেছে। |