আব্দুল ওয়াদুদ।।
মৌলভীবাজার অফিস: রোববার, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। মৌলভীবাজারে পার্থিব জীবন-সংগ্রামে লড়াই করা এক গর্বিত নারী শিরিন আক্তার। সংসারের যোগান বৃদ্ধি করতে জীবনের পদে পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। এই সমাজে এরকম লক্ষ্যে অনড় ও সুদৃঢ় মনোভাব নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে খুব কম নারীর গল্প শুনতে পাই আমরা । পড়াশোনা শেষ করে তিনি চেয়েছিলেন একজন ব্যাংক কর্মবর্তা হবেন। কিন্তু না! তার মনে বাজলো ভিন্ন ধারা। তিনি চাকুরী করবেন না, তাকে চাকুরী দিতে হবে। তাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে তার সাথে মিলিত হয়ে আরো অনেক মেয়েরা কাজ করে সাফল্যের দরজা পর্যন্ত পৌছাতে পারে।
শিরিন আক্তার। বয়স ত্রিশ-এর কাছাকাছি। শহরের শাহমোস্তফা গার্ডেন সিটিতে বসবাস করে আসছেন। গ্রামের বাড়ি ঢাকার মুন্সিগঞ্জে। বাবা মোঃ সুলেমান ও মা কুলসুম বেগমের ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আজ থেকে প্রায় ২৫/৩০ বছর পূর্বে তারা মৌলভীবাজার আসেন। শিরিন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে বিএ অনার্স সম্পন্ন করে ২০১৫ সালে সিলেটের মদনমোহন কলেজ থেকে একাউন্টিং-এ মাস্টার্স শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের পাগরিয়া গ্রামের এমরুজ আহমদ নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন।
শিরিনের সাথে তার বাসায় এক সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে এ প্রতিবেদকের সুদীর্ঘ আলাপচারিতা হয়। প্রতিবেদক জানতে চান তার সফল ব্যবসায়ীক জীবনের কাহিনী। শিরিন বলেন, আগে ব্যাংকার হবার ইচ্ছে ছিল। পরে নিজের মত বদলে ফেলি। আর তাই শুরুতে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে বুটিক্স ও পার্লারে কাজ করতে থাকি। এটির নাম দেই “ড্রিম্স বিউটি পার্লার এন্ড বুটিক্স হাউজ”। এটির সাফল্য দেখে ২০০৯ সালে শহরের পোষ্ট অফিস সড়কে “ড্রিম গার্ল নামে আরেকটি বিউটি পার্লার” খুলি। এরপর আহমদ ম্যানশনে “ড্রিম্স লেডিস টেইলার্স” নামে আরো একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। শিরিন জানান, ব্যবসার শুরুতে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে তা পরিশোধ করে আবার ওই ব্যাংক থেকে আরো ৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করি। এর পর মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আল আরাফাহ ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে আরো বড় করে ব্যবসা সাজাই।
শিরিনের স্বামীও কিন্তু ব্যবসায় সহযোগীতা করেছেন তাকে। শিরিন বলেন, ২০১২ সালে স্বামী এমরুজ আহমদকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে মৌচাক ফুড প্রোডাকট্স নামে একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি চাঁদনীঘাটস্থ গোজারাই এলাকায়। ওই সময় মিউচ্যুাল ট্রাষ্ট ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকার ধার নেই। ব্যবসায় উন্নতি হওয়ায় ওই ধারগুলি প্রায় শেষ করেছি। মৌচাক ফুড প্রোডাকট্স গড়ে তুলতে সিলেটের বাংলাদেশ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টম্যান্ট কোং-থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি অটো বিস্কুট কাটিং মেশিন কিনে মৌচাকের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। শিরিন বলেন সবগুলি ব্যবসায় তিনি লাভমান হয়েছেন। তিনি আরো জানান, তার অধিনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক নারী-পুরুষ কাজ করে। ব্যবসায় তাড়াতাড়ি উন্নতি হওয়ায় তিনি “বাংলাদেশ তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা”এর সাধারন সম্পাদক ও “বাংলাদেশ ওমেন মেম্বার চেম্বার অব কমার্স” এর সহ-সভাপতি দ্বায়িত্ব পান।
২০১২ সালে “নেপাল-বাংলাদেশ মাইকরো এন্টারপ্রাইজ ডেভলাপম্যান্ট এন্ড এজেন্ডা”এর মাধ্যমে স্বামী এমরুজসহ সংস্থার সভাপতি চন্দনা ঘোষ এর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি টিম নেপাল যান। ওখানে যাবার উদ্যোশ্য ছিল ওই দেশের নারী উদ্যাক্তাদের সাথে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে নিজেদের হাতের তৈরি পন্য আদান-প্রদান করে দেশের ব্যবসার উন্নতি ঘটানো। এছাড়াও বিভিন্ন মেলা উপলক্ষে উদ্যোক্তা নারীদের হাতের তৈরি টেইলরিং এর ছোট জামা, নকশিকাঁথা, কোশন কাবার, ছোট-বড় ব্যাগ ও জুয়েলারী দেখিয়ে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে প্রায় দেড় শ নারী কাজ করছে এর মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন ১৫জন। নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন তার আগের নারী উদ্যেক্তা ও নারী নেত্রী রুকেয়া মাহবুব চৌধুরী, হৃদয় টেইলার্স, তুলি গার্মেন্টস, অপরাজিতা বুটিক্স। এছাড়াও বাসা-বাড়িতে অনেক নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন হাতের তৈরি পন্য প্রস্তুত করে বাজারে বিক্রি করেন।
সর্বশেষে নতুন উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে শিরিন বলেন, লক্ষ ঠিক রেখে যে কোন কাজে এগিয়ে গেলে সাফল্য নিশ্চিত। নারী উদ্যোক্তারা একদিন নিজেদের বদলে দেবেই!