অাদিবাসী
,
একদা মোদের, উপজাতি বলি
ডাকিতেন বাংলাদেশের প্রভুজন,
শুনিয়া ভাবিনু ইহার অর্থই বা কী?
ভাবিতে ভাবিতে দিন যায়-রাত যায়,
দিনকে দিন প্রভুদের প্রভুত গেল বাড়ি।
,
অতঃপর ঙাত হইয়া জানাইলাম প্রতিবাদ,
নই মোরা উপজাতি,
মোরা এখানকার মৃত্তিকা সন্তান,
মোদের দাদারও দাদা বাস করিতেন
অাদিকাল হতে,
তবে কেন মোরা উপজাতি হতি যাব?
মোরা তো এ অঞ্চলের “অাদিবাসী”।
-সুইহোলামং মারমা
উপরের কবিতাটি লিখেছেন সুইহোলামং মারমা। তিনিও একজন ফেইচবুকার। প্রায়ই তিনি তার ফেইচবুকে চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের আদিবাসীদের জীবনাচরণের কথা কাহিনী তার নিজের খেয়ালী ভাষায় লিখে থাকেন। তেমনি একটি কবিতা আজ দেখলাম। যদিও কবিতাটি খুব মার্গীয় কিছু নয়, নয় গোছানো বা ভাষাও তেমন কৃত্তিবাসি নয় কিন্তু কথাগুলি যে তার অন্তর্নিহিত আকুতির বহিঃপ্রকাশ তা বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না।
সভ্যতা-ইতিহাসেরও আগ থেকে সারা বিশ্বব্যাপী উঁচু-নিচু পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষজনকে আমরা বাংগালীরা উপজাতি বলে সম্ভোধন করে থাকি। কেনো করে থাকি, আমাদের কাছে তারও কোন উপযুক্ত তথ্য-তাবিজ নেই। আমরা আমাদের মনানন্দে বলেই থাকি। হয়তোবা অনেকেই মনের গভীরে খুব পুলক অনুভব করেন। সুইহোলামং এর আপত্তি এখানেই। তার অন্তরের অনুভুতি- কিকারণে তারা উপজাতি? একটি জাতি হতে যা প্রয়োজন তার কোনটি তাদের নেই। সবইতো তাদের আছে তবে কেনো তাদের উপজাতি বলে অবজ্ঞা করা হয়? এ প্রসঙ্গে ঢাকার আমার এক বিজ্ঞ বন্ধু বলেছিলেন, “কিছু কিছু পাহাড়ীদের নিজস্ব কোন ভাষা নেই। একটি জাতি হতে গেলে সেই জাতির নির্দিষ্ট অক্ষরসহ ভাষা থাকতে হবে।” তাৎক্ষনিক আমিও মেনে নিয়েছিলাম। মেনে নিয়েছিলাম বলতে আমি কোন বিতর্ক বাধাতে যাইনি। কিন্তু অনেক পরে ভেবেছি বিষয়টি নিয়ে। সেই বন্ধুর বক্তব্যের পক্ষে কোন সদুত্তর পাইনি। বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলে যারা বসবাস করে আসছেন তাদের অনেকেরই কথা বলার নিজস্ব ভাষা আছে, শব্দভান্ডারও আছে কিন্তু অক্ষর নেই। অন্য ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে তারা জীবন চালিয়ে আসছেন শতশতবর্ষব্যাপী। নিজস্ব অক্ষরের প্রয়োজন অনুভব করেননি। এখন প্রয়োজন হলে তাদের কথা বলার রীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি অক্ষর বানিয়ে নেবেন, তাতে সমস্যা বা অসুবিধার কি থাকতে পারে?
বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার মানুষের নিজস্ব বাচনভঙ্গি আছে, আছে নিজস্ব শব্দভান্ডার, কিন্তু অক্ষর নেই। তারা সকলেই শত শতবর্ষব্যাপী বাংলা ভাষা ও বিশেষ করে বাংলা অক্ষরকে নিজেদের মনে করেই চলে আসছেন। জীবন চালাতে তাদের কোন সমস্যা হয়নি ও হচ্ছে না। আর এভাবেই আমরা পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের সকলেই সাংস্কৃতিক কিছু কিছু অমিলের পরও ভাষাগতভাবে আমরা বাঙ্গালী হিসেবেই গড় উঠেছি। চলছি সামনের দিকে।
ভাষা গড়ে উঠে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে গ্রহন-বর্জন করে। এ বিশ্বপ্রকৃতি প্রতিমূহুর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাষারও রূপান্তর আছে। সুইহোলামং মারমাদেরও ভাষা আছে, বিপুল শব্দভান্ডার আছে। হয়তো নেই অক্ষর। কাছাকাছি ভাষিকদের অক্ষর ব্যবহার করে একসময় নিজেদের অক্ষরও নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তাই সুইহোলামং মারমাগন “এবঅরিজিন” হতে পারে তবে উপজাতি নয়।