মুক্তকথা: মঙ্গলবার, ৯ই আগষ্ট ২০১৬।। ফেইচবুকার জনাব হিলাল উদ্দীন অতি চমৎকার একটি প্রশ্ন রেখেছেন তার ফেইচবুকে একটি ছবি দিয়ে। ছবিটির শিরোনাম তিনি ব্যবহার করেছেন এই বলে- “এমন দৃশ্য বদলাবে কবে”(?) ছবি এবং কথা মিলিয়ে নিয়ে বুঝতে পেরেছি যে তিনি আমাদের দেশের শ্বাশ্বত চিরপরিচিত বানভাসি আর ত্রাতাদের সহায়তাকে বুঝিয়েছেন। তিনি চমৎকারই বলেছেন। এই প্রলয়ংকরি বন্যা বা বানভাসিকে নিয়ে কি-ই-বা আর লিখার আছে!
আমাদের শুনা এবং কিছু কিছু দেখামতে পাকিস্তানের ২৪ বছর আর স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৫ বছর মিলিয়ে ৬৯ বছর ধরে এই বানভাসির উপর কত রংয়েরই না খবর, স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্র, ছায়াছবি দেখলাম। কত পুস্তক রচিত হতে দেখলাম আর এসব নিয়ে কত রমরমা ব্যবসা হতে দেখলাম তার হিসাব এখানে দেয়াই সম্ভব নয়। শুধু একটি বিষয় দেখার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি আর তা হল চিরায়ত এই বানভাসি থেকে সাধারণ মানুষের স্থায়ী মুক্তিলাভ। কেনো জানি মনে হয় এক পক্ষ মানুষ খুবই ইচ্ছেকরে বানভাসিকে জিইয়ে রাখতে চায়! তা না হলে ৫৭হাজার বর্গমাইলের একটি ছোট্ট দেশের বন্যা রোধে কত বছর লাগে? ৬৯ বছর কি প্রয়োজনের তুলনায় কম করে হলেও চার গুণ বেশী নয়? যে দেশ হাজার লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু বানাতে পারে, কি দিয়ে বিশ্বাস করি যে ওই দেশ নিজের চিরচেনা শত্রু ষানবাৎসরিক বন্যাকে স্থায়ীভাবে রোধ করতে অক্ষম? মোটেই বিশ্বাস হয়না। তা’হলে কারণটি কোথায় ও কেনো লুকিয়ে? কেনো বন্যা নিরোধের কোন আয়োজন চোখে পড়ে না।
আমাদের খেয়াল আছে, সে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। পাকিস্তানের শুরুতে পূর্বপাকিস্তানের বন্যা রোধের জন্য ১৯৫৪ কিংবা ১৯৫৬ সালে দেশের সবক’টি নদী-নালাকে খননপূর্বক তাদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার একটি জরিপ হয়েছিল কিন্তু কাজে রূপ লাভ করতে পারেনি।
আজই সকালে খবরে দেখলাম, মেঘনা নদীর একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে “অতীব বিপদসংকুল” এলাকা হিসাবে দেশের পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। নিষেধ করেছেন সকলকে নির্দিষ্ট ওই এলাকা দিয়ে কোন নৌযান না চালাতে। খুব ভাল করেছেন। প্রশংসা পাবার যোগ্য কাজ করেছেন। কিন্তু নিষেধ করে দিলেই কি দায় শেষ হয়ে যায়? যেসব খেটে খাওয়া মানুষকে দৈনন্দিন রুটি রুজির জন্য মেঘনা পাড়ি দিতে হয় তারা কিরূপে ওই নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে? ওই নিষেধ মানার অর্থই হলো উপোস থাকা। বিষয়টি যে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানেন না বা বুঝেন না তাতো নয়। তারা আরো ভাল করেই জানেন ও বুঝেন। তারাতো এই মাটি পানিরই মানুষ। সেক্ষেত্রে তাদের কি উচিৎ ছিল না খেটে খাওয়া কর্মজীবী ওই মানুষজনের জন্য বিকল্প একটি ব্যবস্থা দেয়া? তা হয়নি আর হবে বলেও কোন ইংগিত নেই। অতএব বলতেই হয় “এমন দৃশ্য বদলাবে কবে?”