১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মফিজ আলীর সমাধিতে বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণ। ছবি: মুক্তকথা
কমলগঞ্জে জননেতা মফিজ আলীর ১১ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তারা
সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ভারতের সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করুন
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী নেতা, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, প্রখ্যাত চা-শ্রমিক নেতা মফিজ আলী-এর ১১-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ১০ই অক্টোবর বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার সময় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, চা শ্রমিক সংঘ, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও স’মিল শ্রমিক সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীসূর্য্য-ধূপাটিলাস্থ প্রয়াত নেতার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ গ্রহণ করা হয়। পরে স্থানীয় মফিজ আলী চত্বরে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
সংগঠনের জেলা সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্টিত আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, প্রয়াত নেতার অনুজ রেজাউল করিম, বিশিষ্ট বাম রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক ডা. আব্দুল হান্নান চিনু, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, পতনঊষার ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নারায়ণ মল্লিক সাগর, বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশন রেজি নং বি-২২০০ এর কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন।
আলোচনা সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, জাতীয় ছাত্রদল মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাবেক আহবায়ক নুর মোহাম্মাদ তারাকী ওয়েছ, চা শ্রমিক সংঘের নেতা দিবা বৈদ্য, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল আহমেদ, স’মিল শ্রমিক সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ মতিউর রহমান, জাতীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আশরাফুল ইসলাম উজ্জল প্রমূখ।
সভায় বক্তারা সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ভারতের সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করার দাবী জানিয়ে প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজ শোষণহীণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, মফিজ আলীর জীবন ও সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। সংগ্রামী এই জননেতা ১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শ্রীসূর্য-ধূপাটিলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের বেশি রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্র আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, চা শ্রমিক আন্দোলন, বালিশিরা কৃষক আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলে মোট ৭ বার কারাবরণ করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শে বিশ্বাসী সাম্রাজবাদ সামন্তবাদ বিরোধীনেতা মফিজ আলী জননেতা হিসেবে শোষিত নির্যাতিত শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেমন নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন তেমনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে সংশোধনবাদ, সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
তিনি ইংরেজি ডন, সংবাদ, ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক জনতা, লালবার্তা প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। তিনি গণতন্ত্রের নির্ভীক মূখপত্র সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লেখেছেন। ২০০৮ সালে ১০ অক্টোবর সংগ্রামী এই জননেতা ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
|