কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরের ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ছোট-বড় ৩১টি বাঁক রয়েছে। এছাড়া সড়কের উভয় পার্শ্ব ঝোপঝাড় ও জঙ্গল পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন আঁকাবাঁকা মোড়ে সড়কের ইউ ড্রেনের উপর সড়ক সংকুচিত করে পিলার বসানো হয়েছে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় এক গাড়ী অন্যগাড়ীকে অতিক্রম করতে সমস্যার সম্মুখিন হয়। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যানচলাচলকারী চালকদের। বিশেষ করে সড়কের বাঁকগুলো অতিক্রমের সময় একপাশ থেকে অন্য পাশের যানবাহন দেখা যায় না। ঝুঁকির মধ্যে দিন ও রাতে যানবাহন চলাচল করলেও সংশিষ্ট সড়ক ও পথ বিভাগ নির্বিকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথের আওতাধীন কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের বটতলা নামক স্থান হতে নূরজাহান নামক এলাকা পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ১৩ কিলোমিটার জুড়ে সারা সড়কের উভয় পার্শ্বে বিভিন্ন গাছগাছালি বড় হয়ে ঘন ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গল সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গলের কারনে ১৮ ফুট সড়ক ১৩ ফুটে নেমে সরু হয়ে গেছে। সড়কের মধ্যে ছোট-বড় ৩১টি বাঁক রয়েছে। বাঁক গুলো খুবই ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠেছে। যার ফলে চলাচলকারী যানবাহন অনেক সময় সাইট দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। গত কয়েক মাসে ছোট-ছোট প্রায় ১০/১২টি দূর্ঘটনা ঘটলেও মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ নীরব রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি শমশেরনগর এয়ারর্পোট এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কিঃমিঃ সড়কের পুনঃসংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় আঁকাবাঁকা মোড়গুলো সম্প্রসারন না করে অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন মোড়ে পিলার বসানো হয়েছে। পিলার গুলো বসানের কারনে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সড়ক সংকীর্ন হওয়ায় একটি গাড়ি অপর গাড়িকে সঠিকভাবে অতিক্রম করতে না পারায় দূর্ঘটনায় পতিত হতে হয়।
কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের লাউয়াছড়া বনের বাঁকে পিলার স্থাপনের কারণে সড়ক সংকুচিত সড়ক খুবই ঝুঁকিময় হয়ে উঠেছে। ছবি: মুক্তকথা |
লাউয়াছড়া বনের ভেতরের সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাজার হয়ে শ্রীমঙ্গলের দূরত্ব কম হওয়ার কারনে, কমলগঞ্জসহ কুলাউড়া ও এর আশপাশের কর্মজীবী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ যাত্রীরা এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করেন। এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেইক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতি সৌধ, হামহাম জল প্রপাতসহ নান্দনিক দর্শনীয় স্থান হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা বড় বড় গাড়ী নিয়ে সড়ক দিয়ে ঘুরতে আসেন। তাছাড়া চাতলাপুর স্থল বন্দর থাকায়, প্রতিদিন সড়কটিতে শত শত বড় বড় ট্রাক সিমেন্ট, ফলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি ও রফতানি হয়। বর্তমানে সড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরের সড়কের মোড়গুলো প্রশস্তকরণ ও অপরিকল্পিত ভাবে পিলার বসানো এবং বিপদজনক স্থানে গাইড ওয়াল না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লাউয়াছড়ার মোড়গুলো প্রশস্তকরণ ও বিপদজনক স্থানে গাইড তুলতে গ্যাসলাইন ও বনবিভাগ বাঁধা দেয়ায় তা বড় করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন মোড়ে পানি নিঃস্কাশনের জন্য ড্রেন গভীর করায় পিলার দেয়া হয়েছে যাতে কোন গাড়ির চাকা ড্রেনে পড়ে কোন দূর্ঘটনা না ঘটে। লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিছুর রহমান জানান, লাউয়াছড়ার ভেতরের আঁকাবাঁকা মোড় বড় করার কাজে বাঁধা দেইনি, তাদেরকে লাউয়াছড়া মেইন গেটের সামনে পাহাড় কাটতে নিষেধ করা হয়েছিলো। তিনি আরো জানান, বাঘমারা ক্যাম্প, লাউয়াছড়া মেইন গেইট ও জানকিছড়া এলাকায় আমাদের বন্যপ্রাণী অবাদ বিচরনে বাঁধাগ্রস্ত সহ তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাদেরকে ৩টি স্থানে গতিরোধক বসানোর অনুরোধ করলেও তা রক্ষা করা হয়নি।