মৌলভীবাজার অফিস।। এ যাত্রায় মৌলভীবাজার শহরের পূর্বাংশ বেঁচে গেলেও পশ্চিমাংশের অবস্থা করুণ। এমনিতেই বাঁধ ভেঙ্গে শহর তলিয়ে যাবে এই ভয়ে ঈদের দুই দিন আগ থেকেই মানুষ যে আতংকের সময় কাটাতে শুরু করেছিল তার এখনও শেষ হয়নি। এখন আতঙ্ক রোগবালাই, খাদ্যাভাব, ফসল হানি, বন্ধ যোগাযোগ, সুচিকিৎসার অভাব, ইত্যাদি। গণমাধ্যম ঘেঁটে জানা যায় পুরো মৌলভীবাজার জেলায় বন্যায় প্রানহানীর সংখ্যা ৭জনে পৌঁছেছে। জানা যায়, শহরের পশ্চিমাংশের বড়হাট গ্রামের কাছে মনুপ্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে প্রথম পানি ঢুকেছিল শহরের কুসুমবাগ, দোয়ারক, মোস্তাফাপুর, ধরকাপন, খিদুর, শেখের গাঁও এলাকায়। গণমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন প্রথমে বড়হাট গ্রামের কাছে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং বানের পানি শহরের পশ্চিমাংশে ঢুকে পড়ে। পরে বরইকোনায় নতুন ভাঙ্গন দেখা দিলে শহরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা ভীতি থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু পশ্চিম প্রান্ত ডুবে যায়। কুসুমবাগ এলাকার কাছে যে সরকারী খাদ্য সংরক্ষনাগার ছিল তার ভেতরে বানের জল ঢুকে অধিকাংশ চাল বিনষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু কেনো এমন হলো তার কোন জবাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ জানামতে বারৈকোনার ভাঙ্গন দিয়ে এখনও বিপুল স্রোতে বানের পানি ধেয়ে নামছে পশ্চিমের দিকে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে এবং ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। এখনও মৌলভীবাজার-সিলেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরের প্রতিরক্ষায় সামরিক বাহিনী এখনও শহরে আছে।
শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ডাঃ আব্দুল আহাদ তার ফেইচবুকে লিখেছেন-‘এম, সাইফুর রহমান সড়কের(সেন্ট্রাল রোড) একেবারে পশ্চিম অংশে জল প্রবেশ করেছে, কুসুমবাগের পিছনে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াতে। একটু পশ্চিমে বারইকোনাতে আরেক জায়গায় ভেঙ্গেছে। যার ফলে শহরের দক্ষিন পশ্চিমে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমার বাড়ীতে ও জল! এর পূর্বে কখনও দেখিনি। সিলেট মহাসড়ক প্লাবিত হওয়াতে বাড়ীতে যেতে পারছিনা। ছবিতে ওই এলাকা বেলা দুপুর ১২টা। এখন বেলা ৩টা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।’
সাংবাদিক আমীনুর রশীদ লিখেছেন- ‘মৌ: বাজার, ১৭ জুন: আপাতত মৌ: বাজার পৌরবাসী ভয়াবহ বন্যা কবল থেকে পরিত্রান পেয়েছে। গত কাল মধ্য রাতে সদর উপজেলার বরই কোনা নামক স্হানে মনু নদী এক বিরাট ভাঙ্গন দিলে শহরের আংশিক এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পরে, এতে পৌর সভার তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ আছে। আজ সকাল থেকে মনু নদীর পানি প্রায় ৪ মি: কমে গিয়ে বিপদ সীমার ১৩১ সে: মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি দ্রুত কমার দিকে।’
সাংবাদিক সুধাংশু শেখর হালদার লিখেছেন- ‘নতুন করে প্লাবিত এলাকা মোস্তফাপুর, দর্জির মহাল। বন্যা আমার বারান্দায়। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হয়তো ঘরে প্রবেশ করবে।’
সাংবাদিক হাসনাত কামাল লিখেছেন- ‘…কুসুমবাগ এলাকা থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। অনেকের বাসাবাড়ি থেকেও পানি নামছে। তবে শ্রীমঙ্গল রোডের পশ্চিম প্রান্ত এলাকায় পানি এখনও আছে। শহরেরর পশ্চিম অঞ্চলের বাঁধ ভেঙে যে কয়েকটি এলাকা বন্যার পানির নিচে সেগুলোরই ছবি তুলে আমরা এমন করে ছড়িয়ে দেশ বিদেশে আতংক সৃষ্টি করছি যে, মনে হচ্ছে সমস্ত মৌলভীবাজার শহর বন্যার পানির নিচে।…’
সালিম আহমদ তার ফেইচবুকে লিখেছেন- ‘মৌলভীবাজার শহরে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা…।
শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: তোফায়েল ইসলামের নির্দেশে মাইকিং করে এই নির্দেশনা শহরবাসীকে জানানো হয়। আশ্রয়কেন্দ্র গুলো হলো-
১.মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ
২.মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ
৩.প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট
৪.পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
৫.টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ
জেলা প্রশাসক শহরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন। প্রয়োজনে উক্ত কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন।