মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে জেলা শহরের কুসুমবাগ, বড়হাট, গোবীন্দশ্রী, দর্জির মহল, দোয়ারক এলাকা থেকে বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেলেও মোস্তাফাপুর, কনকপুর ও আমতৈল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত রোববার সন্ধ্যায় জেলাপ্রশাসক তোফায়েল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে ৮জনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেন। তিনি জানান মৃতদের লাশ উদ্ধার হয়েছে তবে নিহতদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। রোববার রাতে মোস্তাফাপুর এলাকায় ছোবহান নামে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান যে এ পর্যন্ত ৫শত মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ ও ১০লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত ৪টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর লোকজন কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের মৌলবীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কালাইরগুল এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে মনুপ্রকল্পের ওয়াপধা বাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রকল্পের ভেতর রাজনগরের উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার, ফতেহপুর, সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ও খলিলপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মুখে পড়েছেন। ওই বাঁধের ভেতর দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওর পাড়ের লাখো মানুষ।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক জানান, এখানে যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে তিন দিন ধরে পাউবো কর্তৃপক্ষকে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু তারা সরেজমিনে আসেনি। হাওরে পানি ঢুকে যাওয়াতে তার ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবী জানান। তিনি আরো বলেন, কালারবাজার ও কেশরপাড়া এলাকায় বাঁধের ভেতর দিয়ে হাওরে প্রতিনিয়ত অল্প অল্প করে পানি ঢুকছে। সেই স্থান দুটি মেরামতের দাবী জানান । এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন গত সোমবার থেকে কালাইরগুল বাঁধ দিয়ে হাওরে জল ঢুকছে। মঙ্গলবার ভোর ছটায় বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে হাওরে পানি ঢুকে। পানির প্রবলবেগে ১শ ফুট প্রশস্থ হতে পারে ভাঙ্গনস্থল। কালাইরগুল গ্রামের ইউনুছ মিয়া ও হলদিগুল গ্রামের ফেরদৌস আলী জানান, ওই যায়গা দিয়ে ৫/৬ বছর ধরে অল্প করে হাওরে পানি ঢুকছে। কিন্তু কেউ লক্ষ্য রাখেনি। এছাড়াও ভাঙ্গন সংলগ্নের পশ্চিম পার্শ্বে পৃথক আরেক যায়গায় আরো দু’বার বাঁধ ভাঙ্গলে তা মেরামত করা হয়।
এদিকে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এভাবে প্রবল বেগে পানি হাওরে ঢুকতে থাকলে উত্তরভাগ ইউনিয়নের রাজাপুর, সুপ্রাকান্দি, সুরিখাল, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাও, শাফাতপুর, রুস্তুমপুর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি, কাজিরহাট ও মেদেনীমহল ও ফতেপুর ইউনিয়নের বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর এলাকাসহ শতাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপজেলার এসডিও মুখলেছুর রহমান জানান, যত দ্রুত সম্ভব আমরা বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি। বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনীর একটি টিম সার্বিকভাবে সহযোগীতা করতে দেখা গেছে।
এদিকে মৌলভীবাজার শহর ঘেষা মনু নদীর পানি কমে বিপদসীমার নীচে চলে গেলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার-শেরপুর সড়কের পৌর শহরের বড়হাট, এলজিইডি প্রাঙ্গন, সদর উপজেলা প্রাঙ্গনে এখনো পানি হাঠু সমান রয়ে গেছে।