মুক্তকথা নিবন্ধ।। বেশ আগের একটি খবর। RT TV প্রচার করেছিল। সে খবরের বিষয়বস্তু ছিল, সত্যি কি সাধারণ মানুষ বাঁচাতে ন্যাটো লিবিয়ায় আক্রমণ করেছিল? না-কি তলে তলে অন্য উদ্দেশ্য ছিল। RT-র মতে লিবিয়ার সাধারণ মানুষ বাঁচানোর দায়ীত্ব হঠাৎ করে ন্যাটোকে কে দিল? তা’হলে কি ঘটেছিল সেদিন? লিবিয়ায় সাধারণ মানুষের প্রান রক্ষার মুখোষে ন্যাটো দূর্বৃত্তরা হামলা করে বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মোয়ামের গাদ্দাফিকে কেনো হত্যা করেছিল?
RT TV ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে।
এখন বিষয়টি সকল মহলেই জানাজানি হয়ে গেছে যে সেদিন লিবিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বর্বর দস্যুবৃত্তির ন্যাটো বাহিনী বোমা ফেলেনি। বরং এটি ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা সংগঠিত তেলের জন্য এক ধরনের তেলেসমাতি। বিশেষজ্ঞদের অন্য এক অংশ মনে করেন শুধু তেল নয় গোটা আফ্রিকা নিয়ে “দিনার” নামের একটি স্বর্ণমুদ্রা চালু করার গাদ্দাফির প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ ও বানচাল করাই ছিল ওই আক্রমনের প্রধান ও মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্বশক্তির মোড়লরা যখন নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে পররাজ্যে আক্রমণ চালায় বা পররাজ্য গ্রাস করে তখন সে কাজকে সন্ত্রাসী, অমানবিক বলা হয় না। অথচ মামুলি কোন একজন মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে যখন অনুরূপ কিছু করতে যায় তখন তাকে আমরা সকলেই সন্ত্রাসী বলে হুঙ্কার ছাড়ি। বিশ্বের দস্যুশক্তি ন্যাটো সেদিন ঠিক অনুরূপ একটি বিশ্বসন্ত্রাসী কাণ্ড সংগঠন করেছিল এবং বিশ্ববরেণ্য নেতা মোয়ামের গাদ্দাফিসহ অসংখ্য নিরীহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। কেউ আমরা জোড়ে-সুরে প্রতিবাদ করিনি।
সাম্রাজবাদী শক্তি ভালকরেই বুঝেছিল যে গাদ্দাফি দ্বারা আ্যফ্রিকাজুড়ে ওই স্বর্ণমুদ্রা চালু হলে তাদের জমিদারী চিরতরের জন্য কাল-কবরে স্থান নেবে। সুতরাং গাদ্দাফিকে দুনিয়া থেকে তুলে দেয়া ছাড়া এ থেকে রক্ষার কোন উপায় নেই। সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা সংগঠিত এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা কেউ আজো দেননি কিংবা এর অবসান কবে কিভাবে হবে তাও বলেননি। তবে এটি স্থির নিশ্চিত যে আজ হোক আর কাল হোক এর অবসান হবে।
গাদ্দাফি তার দীর্ঘ জীবনের রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বুঝতে পেরেছিলেন যে পশ্চিমা সুদি ব্যবসার খপ্পর থেকে বের হয়ে আসতে হলে একমাত্র রাস্তা গোটা আফ্রিকার জন্য একই মুদ্রা ব্যবস্থা এবং সেটি শক্তিশালী হবে স্বর্ণমুদ্রা হলে। তাই ১৯৯৬সালে ও ২০০০সালে আফ্রিকান দেশগুলির দুই সম্মিলনে গাদ্দাফি এই প্রস্তাবনা এনেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বিশ্ব অর্থনীতিতে সমতা আনতে হলে ব্যবসার লেনদেনে ডলারের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার একমাত্র ব্যবস্থা সরাসরি স্বর্ণমুদ্রা। তার এ চিন্তার সাথে আফ্রিকার প্রায় সকল দেশই এ নমুনার কোন ব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে রাজী ও আস্তাবান ছিল। গাদ্দাফি জানতেন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার পিছু নেবে। কিন্তু তার স্বদেশপ্রেম, নিজের দেশ ও অঞ্চলকে শক্তিশালী করার স্বার্থে এ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। সেসময় লিবিয়ার সোনার সঞ্চয় ছিল ১৪৪টন। ওই সময় যুক্তরাজ্যের সোনার মওজুদ ছিল লিবিয়ার দ্বিগুন কিন্তু তাদের জনসংখ্যা ছিল লিবিয়ার চেয়ে ১০গুন বেশী। এ ছাড়াও লিবিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ তেলের বিনিময় মাধ্যম ইউরো’তে হোক এটি যুক্তরাষ্ট্র কখনও চায়নি। লিবিয়াও তার নিজের তেলের দাম সে নিজে কখনও ঠিক করতে পারে না। তাকে ইউরো’তে মূল্য গুনতে হয়। এসমূহ কারণে মোয়ামের গাদ্দাফি আফ্রিকার জন্য তেলের বিনিময় মুদ্রা ইউরো ও ডলারের বিপরীতে স্বর্ণ মুদ্রার চিন্তা করেছিলেন। এটিই ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তার অপরাধ। মহাভারতীয় ইতিহাসে দুর্যোধনও বহু উঁচুমাপের বীর ছিল কিন্তু করুক্ষেত্র তাকে রেহাই দেয়নি। সময় আসছে, যখন দুনিয়ার মানুষ ন্যাটো নামের অপশক্তিরও কঠোর বিচার চাইবে। আনবিক বোমামেরে লক্ষকোটী নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য আমেরিকাকেও কঠোর শাস্তি পেতে হবে।