গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি এসেছে গ্রিক শব্দ দেমোক্রাতিয়া থেকে। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হলো গ্রিস। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ‘দ্যা ফাদার অফ এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি’ খ্যাত ক্লিসথেনিসের নতুন ধরনের সরকার চালু এবং সে থেকে বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র শুরু হয় গ্রিসের ছোট শহর-রাষ্ট্র এথেন্স থেকে। অবশ্য গ্রিক আইন প্রণেতা সোলোনকেও আখ্যায়িত করা হয় গণতন্ত্রের জনক হিসেবে।যুক্তরাজ্য হলো সংসদীয় বা আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার। এমন গণতন্ত্রে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাইকেই জবাবদিহি করতে হয়। প্রশাসনিক কাজে কেউ কৈফিয়ত প্রদানে ব্যর্থ হলে কিংবা সামান্য হলেও কেলেঙ্কারি করলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়। ক্ষমতা বা দায়িত্ব চলে গেলে উনারা অতীত হয়ে যান। তখন শুধু ইতিহাসেই উনাদের নাম স্থান পায়।
কিছুদিন আগের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন তাঁর আমলে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ইকুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশনের ‘ইকুয়ালিটি অ্যাক্ট’ ভঙ্গ করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেরেমি করবিন তা প্রত্যাখ্যান করে যেসব মন্তব্য করেছেন তার জেরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও জেরেমি করবিন মনে করছেন তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পারায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন থেরেসা মে। তিনি এখন শুধুই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন ব্যাকবেঞ্চার মাত্র। মনে আছে, একবার হিথ্রো বিমানবন্দরে নিকটজনকে বিদায় দিয়ে যখন কার পার্কে ফিরছি তখন হঠাৎ খেয়াল করি আমাদের পাশেই হ্যান্ড লাগেজ নিজেই টেনে হাঁটছেন তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বের তখন ক্ষমতাবান নেতা টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার। শেরিকে দেখে সেদিন কারো মধ্যে বিন্দু পরিমাণ উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রতিক্রিয়া খেয়াল করিনি; চোখে পড়েনি শেরি ব্লেয়ারের মাঝেও একটুখানি বিব্রতবোধ।
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের (গ্রাম/শহর/কেন্দ্র) নেতা বা জনপ্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্য সফরে প্রায়ই আসেন। উনারা আসলে উনাদের অনুসারীরা বিমানবন্দরে ব্যানার, ফেস্টুন, ফুল নিয়ে উপস্থিত থাকেন। স্লোগানও দেন। কখনো কখনো আবার বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বড় নেতার হোটেল পর্যন্ত মিছিল, ব্যানার টানাটানি, দেশীও স্টাইলে মারামারি, ডিম ছুড়াছুড়ি ইত্যাদি হয়ে থাকে। নেতাকে নিয়ে রাতের পর রাত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন। নেতাকে দাওয়াত আর উপহার দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। হুড়োহুড়ি শুরু হয় নেতার সাথে ফটো তোলা নিয়ে। নেতা গণতন্ত্রের দেশে এসে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেন, অনুসারীদের বাণী শোনান উন্নত গণতন্ত্রের। সেই নেতাই যখন আবার দেশে ফিরেন তখন আগে থেকেই উনার এজেন্টদের বলে রাখেন বিমানবন্দরে প্রচুর মানুষ অভ্যর্থনায় রাখতে, রাখতে মোটর শোভাযাত্রা!
আধুনিক গণতন্ত্রের এই দেশে থেকে না আমরা কিছু শিখলাম, না নেতারা এসে মিনিমাম কিছু শিখে যান। বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্র অনুসরণ করে ঠিক কিন্তু যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্র চর্চাকে অনুসরণ করে না।
|