মুক্তকথা প্রতিবেদন।। করোনায় ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেবে সৌদি। চমকপ্রদ কৌশলবাজীর সাংবাদিকতা নতুন কিছু নয়। বেশ পুরোনো একটি বিষয়। তবে এ নমুনার সংবাদে মানব সমাজে যে একটি ভীতির অবস্থা তৈরী হয় সে বোধহয় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকগন বুঝতে পারেন না। সেদিন অর্থাৎ গত ১২জুন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে দেখলাম সে নমুনারই কিছু খবর বেশ বড় বড় দাগের অক্ষর বসিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। খবরটির অবশ্য মহিমা আছে। কারণ এর সাথে জড়িত দুনিয়ার সবচেয়ে বিলাসবহুল রাজতন্ত্রের দেশ সৌদি আরব। যদিও ইসলামের তীর্থভূমি হলেও ইসলাম ধর্মে রাজতন্ত্রের কোন স্থান নেই।
আল সাউদ বংশের রাজ্য পাওয়া ও রাজা হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইংরেজদের মদতে। সে ব্যাপক বিস্তৃত কাহিনী। আপাততঃ সেদিকে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তবে রাজ্যসহ বাদশাহী পাওয়ার সেই সুবাদে নিমকহালালি দেখাতে গিয়ে সৌদিদের বড় বড় অংকের সকল বিনিয়োগই হয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্বে। সৌদির ‘পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে’র শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে ম্যারিয়ট, সিটি গ্রুপ, বোয়িং, ওয়াল্ট ডিজনি, ফেসবুক কিংবা স্টারবাকস এর মতো বড় বড় কোম্পানিতে। তেলক্ষেত্রের নামকরা প্রতিষ্ঠান বিপি, টোটাল ও রয়্যাল ডাচ্ শেলেও রয়েছে তাদের অংশীদারীত্ব।
বিষাক্ত দূষিত ভয়াবহ রোগবীজ করোণা মহামারি মোকাবেলায় খুবই সংকটময় অবস্থার সন্মুখীন হয়েছে সৌদি অর্থনীতি। করোণা বীজাণূ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সৌদিও আক্রান্ত হয়। ফলে তাদের প্রধান সম্পদ তেলের দাম নেমে যায় বাজারে। এ অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে তেল তোলা কমিয়ে আনা হয়। এমন অভাবিত ঘটনায় দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে মূল্য সংযোজন কর দুইগুণ বাড়িয়ে দেয় সৌদি সরকার। সেই সাথে বেসামরিক কর্মচারীদের মাসিক ভাতা স্থগিত রাখা হয়। করোণা মোকাবেলায় এমন ধরনের অনেক কঠিন কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সৌদি সরকার। এমনটাই স্বাভাবিক।
ভয় দেখানোর সেই খবরটি হলো সৌদিরা ভয়ঙ্কর করোণা বীজাণুর কারণে ঘোর সংকটে পড়েছে। তাই বিশ্ববাজার থেকে তাদের বিনিয়োগের প্রায় ৮০০কোটি ডলার ফেরৎ নিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো থেকে তাদের বিনিয়োগের মোট ৮০০ কোটি ডলার তুলে নেবে সৌদি সার্বভৌম তহবিল। করোনা সংকটের এই সময়ে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ হিসেবে এই অর্থ তুলে নেওয়া হবে। এসব লিখে খবরের নির্ভরতা দেখানো হয়েছে সম্ভবতঃ। এমন খবরটির জোগান দিয়েছেন বার্তা সংস্থা এএফপি। খবরটি মিথ্যা কিংবদন্তীর কাহিনী বলছি না তবে এটি নতুন কিছু নয়। বাজারে যখন শীর্ষ খবরের আকাল পড়ে তখনই মনে হয় এমনধর্মী চমকপ্রদ কৌশলী খবর প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে নামী দামী সংবাদপত্র চমকপ্রদ কৌশলবাজী কাজে শরিক হয় জানতাম না।
হাস্যকর হলেও এখানে উল্লেখ করতেই হয় যে সৌদির এ নমুনার তহবীল তুলে নেয়ার খবর আজ থেকে ৫বছর আগে ২০১৫সালের ২৭সেপ্টেম্বর ‘সিএনবিসি’ লিখেছিল, ফিনানসিয়েল টাইমসও প্রকাশ করেছিল। ১৫এপ্রিল ২০১৬তে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল। ২০১৭সালের ৮নভেম্বর লিখেছিল তুরাণ নামের বাকুর একটি অনলাইন। এমন ফর্দ দিতে গেলে পুরো এক পাতা ভরে উঠবে।
সেই খবরগুলো পড়ার পর যে কেউ এ খবরকে হাস্যকর বলেই মন্তব্য করবে। আমরা কবে যে এমন ধর্মী চিন্তা চেতনা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবো, একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।
হারুনূর রশীদ, লন্ডন, বুধবার, ৩ আষাঢ় ১৫২৭বাংলা। ১৭জুন ২০২০সাল