1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
চলে গেলেন সাহিত্যিক দ্যতিয়েন - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

চলে গেলেন সাহিত্যিক দ্যতিয়েন

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬
  • ৫৯৩ পড়া হয়েছে

ফাদার দ্যতিয়েন ছিলেন বাংলা গদ্যের এক শক্তিমান লেখক

ImageGenerator.aspx.htmlমুক্তকথা: লন্ডন, শনিবার ৫ই নভেম্বর ২০১৬।।  বেলজিয়ামের প্রিস্ট, ফাদার দ্যতিয়েন এর বিস্ময় বিহ্বল জীবন কাহিনী। তিনি বঙ্গে এসেছিলেন সেই প্রায় ৭দশক আগে খৃস্টধর্ম প্রচার করতে। মানুষ আর মাটির মায়ায় আটকা পড়ে যান। বঙ্গের এটেল আর পলিমাটির সুধা গন্ধ তাকে বিমোহিত করে। থেকে যান বঙ্গে। তার এই থেকে যাওয়ার কাহিনী খুবই চমৎকার অলঙ্কারপূর্ণ ভাষায় লিখেছেন ড. শামসুজ্জামান খান। জনাব খান শুরু করেছেন এভাবে-
“বেশ ক বছর আগে ঢাকা ঘুরে গিয়েছিলেন সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরা শ্মশ্রুমন্ডিত এক বিদেশি সাহেব। হ্যাঁ, একটু কৌতুকের সঙ্গে তিনি নিজেকে ‘সাহেব’ও বলতেন মাঝে মধ্যে। সাধারণ পোশাক-আশাক এবং চলনবলনে তাঁকে কিন্তু এক সৌম্যকান্ত বাঙালি বৃদ্ধের মতোই মনে হত আমাদের। আসলে তিনি একজন বিদেশি মিশনারি– নাম ফাদার দ্যতিয়েন। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন পল দ্যতিয়েন।”

পল দ্যতিয়েনের জন্ম ১৯২৪ ইংরেজির ৩০শে ডিসেম্বর বেলজিয়ামের রস্ফয় নামের এক এলাকায়। তার বাবার নাম ফ্যানি আর মায়ের নাম ছিল এলিজাবেথ। তার নিজস্ব ভাষা ফরাসী হলেও কোন এক অজানা নেশায় বাংলা শেখায় আন্তরিক হয়ে উঠেন। সম্ভবতঃ বাংলাভাষী অধ্যুষিত এলাকায় ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে তিনি উপলব্দি করেন যে তাকে স্থানীয় ভাষা শিখতেই হবে। নতুবা ধর্মপ্রচার তো দূরের কথা এখানে থাকাও দূষ্কর হয়ে উঠবে। এ প্রয়োজনই তাকে বাংলা ভাষা শেখায় উৎসাহি করে তুলে বলে আমাদের ধারণা।

father-4-1ড. খান আরো লিখেছেন- “তাঁর মাতৃভাষা ফরাসি হলেও বাংলা ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি রীতিমত ঈর্ষণীয়। উইলিয়াম কেরীর পুত্র ফেলিক্স কেরী বহু বছর আগে বলেছিলেন, বাংলা তার দ্বিতীয় মাতৃভাষা। একথাটি খুব জোরের সাথে বলতে পারতেন ফাদার দ্যতিয়েনও। ১৯৭১-এ পুস্তকাকারে প্রকাশিত তাঁর বাংলা রচনা ডায়েরির ছেঁড়া পাতা এবং ১৯৭৩-এ প্রকাশিত রোজনামচা তাঁকে বাংলা ভাষার এক শক্তিমান লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসে বসে তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা হয় ১৯৯০-এর জুলাই মাসের ২৬ তারিখে। কথা ছিলো, সকাল দশটায় আসবেন। সোয়া নয়টায় তিনি হাজির হলেন, হেসে বললেন, “বাঙালি সময় না-সাহেবি সময় তো নয়ই– ‘অদ্ভুত’ সময়ে এলাম। পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে এসে গেলাম।” ‘এসে গেলাম’ কথাটি আবার উচ্চারণ করে হাসলেন এবং কৌতুকমিশ্রিত স্বরে বললেন : ‘এসে গেলাম’ আপনারা বাঙালিরা বলেন, এটি আপনাদের নিজস্ব বলবার ধরন। ‘এসে গেলাম’ মানে: ‘এসে পৌঁছলাম’, ‘এসে আবার চলে গেলাম নয়।’ কোন বিদেশি এটা না জেনে অনুবাদ করলে কেমন হবে বলুন তো।”

দ্যতিয়েন নিজদেশে দিনী নামের হাই স্কুলে পড়েছেন ১৯৩৬-৪২ পর্যন্ত। এরপরে সন্ন্যাসী সংঘ (Jesui) পরিচালিত আলৌ বিদ্যায়তনের আধ্যাত্মিক সাধনায় নবিশী (Noviciate) কোর্স করেন ১৯৪২-৪৪ সালে। ১৯৪৪-৪৬ সালে বি.এ. পাশ করেন ন্যামুর (Namur) থেকে এবং দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. করেন লুয়েন (Louvain) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে। এরপর দ্যতিয়েন ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন মিশনারি কাজ নিয়ে। জনৈক ফাদার আঁদ্রে দ্যোতান-এর কাছ থেকে মিশনে থেকেই বাংলা শেখা শুরু হয়। এ সময়েই শ্রীসজনীকান্ত দাশ-এর সংস্পর্শে আসেন দ্যতিয়েন। সজনীকান্তের কাছ থেকেও বাংলা শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

father-3“এরপরে ১৯৫১ সালে ফাদার দ্যতিয়েন চলে আসেন কলকাতায়। উদ্দেশ্য, বাংলা ভাষাটা আরো ভালো শেখা। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে প্রাইভেট ছাত্র হিসাবে বাংলার ক্লাস করতেন। তখন তাঁর শিক্ষক ছিলেন শ্রীলোকনাথ ভট্টাচার্য। ফাদার বললেন, লোকনাথের শিক্ষায় তিনি অল্প সময়ে পোক্ত হয়ে ওঠেন। মজার ব্যাপার, এসময়ে অর্থাৎ ১৯৫১ সালে তিনি শ্রীরামপুর মিশন থেকে ফাদার দ্যোতান সম্পাদিত ‘আমাদের জীবন’ শীর্ষক ক্যাথলিক পাদরীদের বাংলা পত্রিকায় তাঁর প্রথম গদ্যরচনা ‘রহস্যময় উপহার’ প্রকাশ করেন। সাধু ভাষায় লেখা যিশু খ্রিষ্টের এক কুঁজো বুড়িকে আপেল উপহার দান এবং গ্রহণ করে তার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারার বিষয় ওই গল্পে বর্ণিত। এই গল্প লিখে তখন তিনি খুব আনন্দ পেয়েছিলেন। যিশুর মহত্ত্ব বর্ণনা এবং বাংলা লেখার উত্তেজনা একসঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।”

১৯৫৯ সালে বাংলায় এম. এ পাস করলেন ফাদার দ্যতিয়েন শান্তিনিকেতন থেকে। শান্তিনিকেতনের শিক্ষা শেষ করে হাজারীবাগ চলে যান ১৯৫৯ সালে। এখানকার সেইন্ট স্ট্যালিনাস কলেজে ১৯৫৯-৬০ সালে ধর্ম ও অধ্যাত্ম সাধনায় কোর্স করেন এক বছর। ১৯৬০-এ ‘আমাদের জীবন’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ‘জীবন’ পত্রিকা সম্পাদনার সময় তিনি বাইবেল অনুবাদ করেন। এ সময় আসলে তিনি বাংলা গদ্যের ধরন ও প্রবণতা বিশেষ করে লক্ষ করছিলেন। ১৯৬০-এ সৈয়দ মুজতবা আলী ‘জীবন’ পত্রিকায় তাঁর গদ্য লেখা পড়ে আকৃষ্ট হন।

গত ৩১শে অক্টোবর  সেই ফাদার দ্যতিয়েন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। “তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে গত শতকের আশির দশকের শেষার্ধে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলাপের স্মৃতির সঙ্গে সঙ্গে মনে আসছে এই তো সেদিন ২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁকে আমরা সম্মানিত অতিথি হিসেবে নিয়ে আসি। সে অনুষ্ঠানে তাঁর অননুকরণীয় বাংলা বক্তৃতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সবাইকে খুব আকর্ষণ করেছিল।
ফাদার দ্যতিয়েনকে স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়।” লিখেছেন ড. খান। (উৎস:মান্যবর রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ফেইচবুক ও অনলাইন মিলেনিয়ামপোষ্ট)

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT