|
সাহায্য সহায়তার নামে লণ্ডনের বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে কিছু লোকের(?) অর্থআদায়কে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে তুলনা করে একজন বিদগ্ধ প্রবাসীর চৈতন্যবোধ থেকে একটি প্রতিক্রিয়া-(ফেইচবুক থেকে সংগ্রহ)
মৌলভীবাজারের বন্যা ও লন্ডনের টিভিতে ভিক্ষা তোলা
মৌলভীবাজারের বন্যা নিয়ে লন্ডনের বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে লাইভ টিভি আপিলের ভিক্ষাবৃত্তি শুরু হয়েছে উদ্যোগটির নিহিত চেষ্টা মহৎ, সন্দেহ নেই। কিন্তু এর এখনকার প্রক্রিয়া আর বর্তমান বাস্তবতার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে আমি কোনভাবেই একমত নই।
প্রতিটি অনুষ্টানে আমাকে যুক্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলেও আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, মৌলভীবাজারের বন্যার সাথে দেশের অন্যান্য দুর্যোগ ও আর্ন্তজাতিক সংকটের ফারাক রয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে তো এখানে সারাবছর জুড়ে নানা ইস্যুতে রাতভর টাকা তুলেন চ্যারেটি আপীলের মাধ্যমে। আমি চ্যারেটি আপিলের বিরোধীতা করছি না। কিন্তু কমিউনিটির ধনাঢ্য নেতারা যখন রাতভর টিভিতে বসে সারাদেশের প্রবাসীদের কাছে মৌলভীবাজারের মানুষের জন্য সাহায্য চান, একেবারে বন্যার শুরুতেই… তখন লজ্জা লাগে, মৌলভীবাজারী হিসেবে। মানুষ হিসেবে জন্মমাটির প্রতি প্রতিটি ব্যক্তির ও তো কিছু দায় থাকে।
কিন্তু, দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীবহুল জেলা মৌলভীবাজারের একজন প্রবাসী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের এখানে নিজেদের কিছু করার রয়েছে। ব্যক্তিগত দায় থেকে যায়। নিজে এখানকার একটি টিভি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক হিসেবে তিন বছর কাজ করেছি। কিন্তু, গত সাড়ে সাত বছরের প্রবাসী জীবনে কখনো কোন লাইভ টিভি চ্যানেলে চ্যারিটি আপিলের কোন ধরনের প্রক্রিয়ায় সচেতনভাবে নিজেকে যুক্ত করিনি।
অন্তত, যুক্তরাজ্যে আমরা যারা মৌলভীবাজারের আছি, তাঁদের সবার এলাকার বন্যার্ততের জন্য অন্তত দু-তিনশ পাউন্ড করে ব্যক্তিগত সহযোগীতার সামর্থ আছে। কিন্তু,নিজের সামর্থ থাকার পরও সেটি না করে শুরুতেই বন্যার্ত মৌলভীবাজারবাসীর জন্য সদগাহ, লিল্লাহ সংগ্রহ করার যুক্তিগুলি আমার কাছে যুক্তিহীন মনে হয়। অন্তত মৌলভীবাজারের অনেকে এখানে আছেন, যাদের সামর্থ্য আছে বছরে কয়েক কোটি টাকা অসচ্ছল মানুষকে সহযোগীতা করবার। আর বন্যার্ত প্রতিবেশীকে সহযোগীতা প্রতিবেশীর হক। প্রতিবেশীর হক আর লিল্লাহ কিন্তু এক জিনিস নয়।
নিজে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবেশীর হক আদায় করা উচিত প্রথমে। কিন্তু, তা ব্যক্তিগতভাবে না করে শুরুতেই লিল্লাহ সংগ্রহের যুক্তিগুলি আমার কাছে মনে হয় নিজের সাথে কানামাছি খেলা। বন্যার পানি কমার পথে। আর মৌলভীবাজারের মানুষ অন্যের লিল্লাহ কেন খাবে? যেখানে প্রতিবেশী সামর্থ্যবান ও প্রতিবেশীর হক বিদ্যমান। দেশে একটি সরকার বিদ্যমান। সে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রীও সচিব সোমবার সরেজমিন মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি দেখে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সর্বচ্চো সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সে প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট আপনি না হতে-ই পারেন। সামর্থ্য থাকলে নিজে উদ্যোগ নিন। আগে তো অন্তত নিজেরা নিজেদের এলাকার জন্য কিছু করুন। তারপরও যদি মনে হয়, পরিস্থিতিতে আরো ত্রান দরকার তখন নিজেরা মিলে এলাকার মানুষের জন্য টাকা তুলে সেটি এলাকায় বন্যার্তদের কাছে পৌছেঁও দিতে পারেন। তাতেও যদি মনে হয় মানুষের আরো সাহায্যের দরকার, যা নিজেদের পক্ষে অসম্ভব বা প্রয়োজনীয় সরকারী সহযোগীতা আসছে না, তখন শেষ মুহুর্তে হতে পারে টিভিতে চ্যারিটি আপীল।
কিন্তু বন্যা যে রাতে আঘাত হানল মৌলভীবাজার শহরে, পরদিনই টিভিতে বসে চ্যারেটি আপীল করে লিল্লাহ সংগ্রহ কেন যে অপরিহার্য হয়ে উঠে, আমি বুঝি না। দুদিনে আমার জনপদের বহু তরুনরা, প্রবীনরা নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছেন। মৌলভীবাজারের সন্তান হিসেবে, মৌলভীবাজার আমাকে শিখিয়েছে, এ জেলার মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি ঘৃনা করে। এ জনপদের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে বাচঁবার জন্য নিজের সবটুকু বাজি রাখতে পারে।
পুনশ্চঃ অনেকে হয়ত প্রশ্ন তুলবেন, মৌলভীবাজারের বন্যা, মানুষ বানভাসী- এ পরিস্থিতিতে আমি কি করেছি? আমি আর্থিকভাবে বিত্তবান নই সেটা সবার জানা। তারপরও আমার অগ্রজ সাংবাদিক আহমদ বখত চৌধুরী রতন ও আমি মিলে সোমবার এক ট্রাক অতি সামান্য ত্রান অনুজ সাংবাদিকদের মাধ্যমে পৌছেঁ দিয়েছি। মৌলভীবাজারের অনুজ সংবাদ ও সমাজকর্মী এমদাদ, আরিফ, মুবিন, বদরুল, সোহেল, মোজাহিদ, তানজিম, তানিম, ফাহিম, সপ্নিল, মিঠুন প্রমুখ তা পৌছেঁ দিয়েছেন। আর কোনভাবেই এটা সাহায্য নয়, এটা আমার প্রতিবেশীর পাওনা হক।
মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে মানুষের ক্ষমতা নেই মানুষকে সাহায্য করার। বন্যার্তদের সাহায্যের মালিক করুনাময়। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ও ত্রানের প্রয়োজন থাকা পর্যন্ত এ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে, কিছুদিন নিজের খরচ কাট-ছাট করবো। যা করবো আমি ও রতন ভাই দুজনের পকেট থেকে করবো। (নিজেদের অতি ক্ষুদ্র চেষ্টার বিষয়টি বাস্তবতার প্রয়োজনে উল্লেখ করতে হওয়ায় ক্ষমাপ্রার্থী, লজ্জিত।)
পাদটীকা-আপনার সামর্থ্য বা ইচ্ছা না থাকতেই পারে। সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, মৌলভীবাজারের মানুষের নাম দিয়ে বন্যার প্রথম রাতেই ভিক্ষা তোলবার সমাজসেবার দায়িত্ব কেউ কি কাউকে দিয়েছে? কে দিয়েছে দায়ভার আপনাকে ভিক্ষাবৃত্তির সমাজসেবার? ভিক্ষা করে আর যাই হোক, সমাজসেবা হয় না। ফটোরাজনীতি হয়। খারাপ লাগে, আমার-আমাদের গায় লাগে। কারন, বাড়ী মৌলভীবাজার। ব্রিটেনে এখন মৌলভীবাজারীর চতুর্থ প্রজন্ম চলছে। এ কমিউনিটির জন্ম মৌলভীবাজারীর হাতে, শত বছর আগে। মৌলভীবাজার এখনো সারাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি সচ্ছল মানুষবহুল শহর। সে শহরে বন্যার প্রথম দিন আমাদের কিছু লোকই কি-না টিভিতে জেলাবাসীর নামে মুষ্টিবদ্ধ ভিক্ষা তোলেন। তাও ব্রিটেনের মতো দেশে। খুব লাগে, ভেতরে বাজে, কষ্ট লাগে। বন্যার প্রথম রাতে চ্যারিটির নামে লিল্লাহ তোলবার মতো কি এতটাই অক্ষম আমরা? প্রথম দিনটাও মৌলভীবাজারের অন্তত প্রবাসীরাও পাশে দাড়াতে পারলাম না নিজ এলাকার মানুষের। অন্য এলাকার মানুষের সাহায্য চাইতে টিভিতে লিল্লাহ সংগ্রহে বসতে হয় মৌলভীবাজারের বিলিয়নিয়ার(!) ব্যবসায়ীদের।
হায় আর্ত মানবতার সেবার নামে দায়িত্ব এড়াবার দায়িত্ববোধ…। পুরো ইউরোপের প্রবাসীদের দানের টাকা কে কত বেশি কান্না আর আর্তির ফুটেজ দেখিয়ে, ফুটিয়ে তোলে জড়ো করতে পারেন, তার অদ্ভুত প্রতিযোগীতা(!) ব্রিটেনের বাংলা টিভিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের নামে, নানা ইস্যুতে গত বিশ বছর ধরে প্রায় বছরজুড়ে রাতভর টাকা সংগ্রহ হয়। একেকটা টিভিতে এক রাতেও উঠে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা)। এ বিশ বছরে যত হাজার কোটি টাকা লিল্লাহ তোলা হয়েছে তা দিয়ে কতজন মানুষ, কতটি পরিবার প্রকৃতভাবে(শুটিং করা ভিডিও চিত্রের বাইরে) উপকৃত হয়েছে, সেটি অবশ্য বহু পুরনো প্রশ্ন।
বন্যার্ত মানুষের জন্য, প্রবাসীদের আবেগ পুজিঁ করে অনেক কিছু হচ্ছে, মানুষ জানে। কিন্তু, মৌলভীবাজারবাসীর তথা মানুষের আত্মসন্মানের জায়গায় আঘাত আসলে তার প্রতি উত্তরের শক্তিটা কতটা জোরালো, সেটা অনেকের ভাবনারও বাইরে।
টিভি স্ক্রীনে প্রবাসীদের অর্থ এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে যোগাড় করা ছাড়াও কিন্তু বন্যার্ত মানুষকে সহায়তার-সহযোগীতার বহু পথ আর মাধ্যম আছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য, আর্ত-মানবতার জন্য মৌলভীবাজারবাসীর আবেগের জায়গাটুকু সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকবার বিনীত অনুরোধ জানাই।
অন্য একজন ফেইচবুকারের একটা ভিন্নচিন্তার কথা-
Recently UN has upgraded Bangladesh from Less Develope Country to Developing Country . Bangladesh alao lanched sattellite into space.
These developments indicate that
Bangladesh has more better resolve in dealing with flood disasters of reasonable scale than say 30 years ago.
Therefore sometime our Londoni brothers need to wait and see how our Bangladesh National government and local government handle these disasters without forigen aid before they can organise their noble fundraising events in TV channels. Last but not least, it should be mention that central and local governments have obligation and accountability to utilise theire fully resources and experiences to help and compensate the affected population and restore public roads, building and other facilities. |