ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক আর নেই(মহান স্রষ্টা যেভাবে রাজী আমরাও তাতেই খুশী)। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র খুলে নেন। এরপর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া তার পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের সমূহ সংবাদপত্র এ খবর দিয়েছে। লন্ডনের বাংলা গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা যায়, আনিসুল হক লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৪ মিনিটে যা বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৪ মিনিটে পরলোক গমন করেন। তাঁর পাশে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা। শুক্রবার জুম্মা নামাজের পরে লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। একই সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাগুলো লিখেছে যে আগামী শনিবার বেলা ১১টা ৪০মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়া হবে। ওই দিন বাদ আসর তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে মেয়র আনিসুল হক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
উল্লেখ্য, নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে যান আনিসুল হক ও তার স্ত্রী রুবানা হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। তার মস্তিস্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। আগস্ট থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনিসুল হকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাঁর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেওয়া হয় এবং গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে ফিজিওথেরাপি দেওয়ার জন্য রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা বলেছিলেন, মেয়র শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। । কিন্তু মঙ্গলবার মেয়রের পরিবারের একজন সদস্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। ওই দিন লন্ডনে ও বাংলাদেশে তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল। লন্ডন সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেয়রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, ব্যবসায়ী ও একসময়কার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আনিসুল হক ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর শৈশবের একটি বড় সময় কাটে ফেনীর সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি।
২০০৫-০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক। মোহাম্মদি গ্রুপ ও দেশ এনার্জি লি: এর কর্নধার ছিলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের নেতা উল্লেখ করে ইত্তেফাক লিখেছে, আনিসুল হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসাবে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং গন পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যেগ নেন তিনি। বিশেষ করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, অভিযাত এলাকা গুলশান-বনানীতে ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গনপরিবহন চালু ও বেপরোয়া রিকশা নিয়ন্ত্রনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত অন্যান্য বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিকমহলে বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন ও বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ীর কাছে এবং তাঁর জন্য দোয়া চেয়েছে তার পরিবার।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বলে বাংলাদেশের সংবাদপত্র উল্লেখ করেছে।