লন্ডন: বুধবার, ২২শে চৈত্র ১৪২৩।। রামায়ণ অনুসারে শ্রীরামচন্দ্র রামনবমীর দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। রামকেই এই পৃথিবীতে জাত শ্রেষ্ঠ পুরুষ বলে মানেন তার অনুগামীরা। কিন্তু জানেন কি আসলে নারদের অভিশাপে জন্ম হয়েছিল রামচন্দ্রের। তাঁর জন্মের পেছনে রয়েছে এক কিংবদন্তীর রাজা-রাণীর আকর্ষণীয় কাহিনী। এই রামনবমীতে সেই কাহিনী নিশ্চয়ই অনেকের গল্পভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে, একটু বিনোদন দেবে।
রামায়ণের রচয়িতা ঋষি বাল্মিকী তা কে-ই না জানে। সেই মহাকাব্য মতে অযোধ্যার রাজা দশরথের ৩ রাণি কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কিন্তু তাদের কারোরই কোন সন্তান ছিল না। উত্তরাধিকারী পাওয়ার আশায় রাজা দশরথ ঋষ্বশৃঙ্গ মুনির পৌরহিত্যে এক বিশাল যজ্ঞ করেন। যজ্ঞের শেষে অগ্নিদেব যজ্ঞের আগুন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তার আশীর্বাদ হিসেবে এক বাটি পায়েস উপহার দেন। তিন রাণী এই পায়েস ভাগ করে খেলে তাঁদের গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মাবে বলে বরদান করেন অগ্নিদেব।
এ সময়ই লঙ্কার রাজা রাবণ তার এলাকায় ভয়ঙ্কর অত্যাচার শুরু করেন। ব্রহ্মার আরাধনা করে তিনি এমন এক বর পেয়েছিলেন যাতে কোনও দেবতা, গান্ধর্ব্য, যক্ষ কিংবা রাক্ষস কেউই তাকে হত্যা করতে পারবেনা। কোন মানুষের পক্ষে তাকে বধ করা সম্ভব নয় জেনে ও বুঝে এবং নিজেকে অপরাজেয় বীর পুরুষ ভেবে দশানন রাবণ আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন। তার অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেলে রাবণ বধে ভগবান বিষ্ণুর দ্বারস্থ হন অন্যান্য ভগবানগন। নারায়ণ যাতে দশরথের ঔরসে তাঁর তিন রাণীর কোনও একজনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন দেবতাগন। কারণ মানুষের অবতারে বিষ্ণু জন্ম নিলে তবেই রাবণকে পরাজিত করা সম্ভব হবে। এর পরই কৌশল্যার গর্ভে জন্ম নেন রাম।
অন্যদিকে ওই সময়ই একদিন নারায়ণের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন দেব ঋষি নারদ। একদা এক সুন্দরী রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যান নারদ। সেই রাজকন্যার তখন স্বয়ম্বরের আয়োজন চলছিল। নারদ সুদর্শন না হওয়ায় বিষ্ণুর কাছে আবেদন জানান যাতে স্বয়ম্বরের সময় বিষ্ণু নিজের রূপ নারদকে দান করেন। বিষ্ণুর আশির্বাদ পেয়ে নারদ স্বয়ম্বর সভায় যান। কিন্তু রাজকন্যা বরমাল্য হাতে তাঁর সামনে এসে হো হো করে হেসে উঠেন। কারণ নারদের মুখের জায়গায় একটা বানরের মুখ বসিয়ে দিয়েছিলেন নারায়ণ।
বিষ্ণুর এই ঠাট্টায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে নারদ তাকে অভিশাপ দেন, যেভাবে নিজের প্রেমকে কাছে না পেয়ে তিনি ব্যাথিত হয়েছেন, সেরকমই যেনো একদিন নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে দুঃখে কাতর হতে হয় বিষ্ণুকে। আর তাই, রাম রূপে জন্মগ্রহণ করে সীতার সঙ্গে চির বিচ্ছেদের বিরহ ভোগ করতে হয়েছে নারায়ণকে। (এইসময় অবলম্বনে)