লণ্ডন।। বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনা। মানুষের অদেখা প্রাগৈতিহাসিক সময়ের ঘটনা এটি। এ বিশ্ব তখন ছিল ডাইনোসারদের দখলে। প্রাণী তখনও মানুষরূপে বিকশিত হয়নি। অতি প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক সেই সময়ের কাহিনী এটি। সুপ্রাচীন মনুষ্যহীন অজ্ঞাত সে সময়ের তৈলস্ফটিক স্বচ্ছ পীতাভ রংয়ের দামী পাথরের ভেতরে পাওয়া গেছে বাচ্চা সাপের প্রস্তুরীভূত জীবাশ্ম বা জীবদেহ (ফসিলীকরণকৃত)। এমন সংরক্ষন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে জীবনসৃষ্টি ও এর ইতিহাসের উপাদান সরবরাহকর জীবাশ্মসংক্রান্ত বিজ্ঞানীগনের (paleontologists) ধারণা, বাচ্চা সাপের এই অসাধারণ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত জীবাশ্ম অন্ততঃ ৯কোটি ৯০লাখ বছরের পুরনো এবং সাপের নমুনাও অজানা কালের পুরনো।
“জার্নাল সায়েন্স এডভান্সেস”-এ গত ১৮ই জুলাই ২০১৮ এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। চীনের ভূবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের(China University of Geosciences) জাতীয় ভূবিদ্যা বিজ্ঞানী লিডা জিং মনে করেন, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার অবিষধর এশিয়ান পাইপ সাপ এবং “সানবিম” সাপসহ আধুনিক কালের কিছু সাপের সাথে প্রাপ্ত বাচ্চা সাপের জীবাশ্মের কিছুটা মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে একটি বাচ্চা সাপের জীবাশ্মের এমন সংরক্ষন সারা বিশ্বের কোথায়ও কেউ আগে দেখেননি। এবং এটি প্রায় ১০কোটি বছরের পুরনো। এমন মন্তব্য করেছেন, কেনাডার এডমন্টনের “আলবার্তা বিশ্ববিদ্যালয়”-এর সরিসৃপ জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ মাইকেল কল্ডওয়েল। কল্ডওয়েল আরো মন্তব্য করেন, প্রাগৈতিহাসিক কালের এ সাপগুলি আধুনিক কালের সাপের মত সরাসরি বাচ্চা প্রসব করতো না-কি ডিম দিয়ে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতো বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়। তবে লম্বা ও পাশের নমুনা ও বৃদ্ধিপর্ব থেকে মনে হয় প্রাপ্ত জীবাশ্মটি বাচ্চা সাপের। এ মূহুর্তে এও বলা সম্ভব নয় যে এই বাচ্চা সাপের জীবাশ্মটি ডিমের ভেতরে থাকা বাচ্চার জীবাশ্ম না-কি ডিম ফুটে বের হবার পর একফোটা ‘অম্বর’(তৈলস্ফটিক স্বচ্ছ পীতাভ রংয়ের) তাকে জীবাশ্মে সংরক্ষন করেছে।
ব্রহ্মদেশ বা আধুনিক মায়ানমারের খনি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অনেকটা অনুরূপ অপর এক টুকরো ‘জীবাশ্ম সংরক্ষিত অম্বর’। সেই জীবাশ্ম দেখতে মনে হয় যেনো সাপের ডোরাকাটা কালো চামড়া। তবে এ চামড়া বাচ্চা সাপের নয় বরং বয়স্ক সাপের কিংবা ওই সময়ের সাপজাতীয় কোন প্রাণীর।
গবেষকগন নিশ্চিত নন যে এ সংরক্ষিত চামড়া সাপের কি-না। তবে এর নমুনা, দিক-পাশ দেখে মনে হয় সাপেরই চামড়া। যদি সাপেরই চামড়া হয়ে থাকে, তাহলে এটাও হবে পীতাভ স্বচ্ছ তৈলস্ফটিকে সংরক্ষিত সর্প চামড়া যা পৃথিবীর প্রথম আবিষ্কার।
অত্যাধুনিক এক্সরে স্কেনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে এর সত্যতা নির্ণয় করা হয়েছে। সাংহাইয়ের “সিঙ্ক্রথর্ণ রেডিয়েশন ফেসিলিটি” তাদের এই ‘তিন ডায়মেন্সনে’র এক্সরে কাজ করতে সকল সহায়তা করেছে।
দুই ইঞ্চির চেয়েও কিছুটা কম লম্বা সাপের জীবাশ্মটি এতোই ছোট যে সাদা চোখে অনেককিছুই স্পষ্ট দেখা সম্ভব নয়। তবে এক্সরে স্কেন, গবেষকদের দলকে সুযোগ করে দিয়েছে ভাল করে প্রাণীটির নমুনা ও হাড়গুলির অবস্থান পরখ করার। পীতাভ রংয়ের এই “অম্বর” পাথরের ভেতরে অত্যাশ্চর্য্যজনকভাবে সংরক্ষিত সেই বাচ্চা সাপের ভেতরের হাড়-মাংস-চামড়া দেখতে গিয়ে গবেষকদের চোখ ধাঁদিয়ে দিয়েছে যে বিষয়টি তা’হল বাচ্চা সাপের মেরুদণ্ডের ৯৭টি হাড়। একটি বাচ্চা সাপের মেরুদণ্ড যদি ৯৭টি হাড়ের সমন্বয়ে হয়ে থাকে তা’হলে সাপটি কত লম্বা, তার একটা অনুমান পাওয়া যায়।
“জুরাসিকে”র পরবর্তী
ভূতাত্ত্বিক সময়ের নাম “ক্রেটাসিয়াস” সময়, যা ৭কোটি ৯০লাখ বছর ধরে পৃথিবীতে বিরাজিত ছিল। বাচ্চা সাপের জীবাশ্মের স্ক্যানের মাধ্যমে বিজ্ঞানী গবেষকগন অনুমান করেন যে দক্ষিণের এক সময়ের মহাদেশ “গন্ধওয়ানা” যা উপরের সেই “ক্রেটাসিয়াস” সময়ে বিরাজমান ছিল আর বাচ্চা সাপের জীবাশ্মটি সেই সময়ের। অর্থাৎ আজ থেকে ৭কোটি ৯০লাখ বছরের পুরনো এই জীবাশ্ম।
এই আবিষ্কার বর্তমান মায়ানমার সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। সে ধারণা হলো বর্তমানের মায়ানমার বা ব্রহ্মদেশ এক সময়ে দক্ষিণের মহাদেশ অষ্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও ইণ্ডিয়া থেকে এশিয়ার সাথে সংঘর্ষের আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। এ মন্তব্য, সরিসৃপ জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ মাইকেল কল্ডওয়েলের। ব্রহ্মদেশে এমন “এম্বার” ফসিলের আবিষ্কার থেকে বিজ্ঞানীদের আরও ধারণা, ওখানে অনুরূপ আরো অবশ্যই আছে। আরো খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে অনুসন্ধান তারা চালিয়ে যাবেন। ফের নতুন কোন আবিষ্কার, প্রাণী সৃষ্টির বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। তথ্যসূত্র- ন্যাশনেল জিওগ্রাফির ‘বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন’ পাতার ‘জন পিকরেল’এর লেখার অনুবাদ। যা প্রকাশিত হয়েছে ১৮ই জুলাই ২০১৮। অনুবাদক-হারুনূর রশীদ