লন্ডন: এ কোন সমাজের ইংগিত বহন করছে! কোথায় গিয়ে দাড়াচ্ছে মানব সভ্যতা! ধর্ষকের থেকেও ভয়ানক, এ কোন রক্ষক! এটা ঠিক সমূলে কোন কিছুই মানব সমাজ থেকে উৎপাটন করা হয়তো সম্ভব নয়। থেকে থেকেই দু’একটি অঘটন ঘটেই যাবে। তবে কঠিন হাতে আমাদের এগুলোর মোকাবেলা করতে হবে। আয়নার সামনে দাড় করিয়ে কুকর্মের সমাজ বিরোধী কুৎসিত চেহারাটি মানুষকে দেখাতে পারলে দুষ্টচক্র আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সবকিছুই কেমন উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এমনই একটি খবর পেলাম আনন্দবাজারে।
ধর্ষকদের শাস্তি চাইতে থানায় গিয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরীটি। কিন্তু, সেখানে ধর্ষণের প্রমাণ দেখতে চাইলেন এক পুরুষ পুলিশকর্মী! শুধু দেখতে চেয়েই ক্ষান্ত হলেন না, ওই কিশোরীকে নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে বললেন। পুলিশের সেই হুকুম তামিল করতে না চাওয়ায়, বাবা-মায়ের সামনেই জোর করে তাকে পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়। এখানেও থামেনি পুলিশের ‘প্রমাণ’ নেওয়ার পালা। আদৌ ধর্ষণ করা হয়েছে কি না তা ‘পরীক্ষা’ করে দেখতে এর পর কিশোরীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেন ওই পুলিশকর্মী। আর সবটাই করা হয় থানার ভিতরে, অন্য কয়েক জন পুলিশ কর্মীর সামনে!
গোটা ঘটনাটির কথা জানিয়ে পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেন ওই কিশোরীর বাবা। এই অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। থানায় ওই দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা অবিলম্বে জানাতে সোমবার হরিয়ানা পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর পর মঙ্গলবার রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব রাম নিবাস জানান, ঘটনাটি সত্যিই মারাত্মক! ওই কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২০ নভেম্বর হরিয়ানার কৈথল থানায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী। তার বেশ কিছু দিন আগে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরে বেশ কিছু দিন তুমুল শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা, পাশাপাশি প্রকাশ্যে আসার লজ্জা নিয়েই নিজেকে সে গৃহবন্দি রেখেছিল। এ সব ধকল সামলে উঠতে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ওই কিশোরীর বাবা-মা তাকে নিয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন। একটাই দাবি ছিল, ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি চাই। কিন্তু, অভিযোগ জানাতে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের কল্পনাতেও ছিল না থানায় কোন অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে! প্রথমেই জুটেছিল পুলিশ কর্মীদের চরম অবহেলা এবং বাঁকা দৃষ্টি। তার পর ওই ভয়ানক অভিজ্ঞতা।
আপাতত আদালতের ভরসাতেই রয়েছে ওই পরিবার। ভক্ষকের পাশাপাশি তাঁদের দাবি, রক্ষকের শাস্তিও।