অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবে সত্য। বিষয়টি এই শিমূল গাছকে নিয়ে। বিশাল না বলে বরং দৈত্যাকৃতির বললে মনে হয় সঠিক হবে। দৈত্যাকৃতির প্রকাণ্ড এক শিমুলগাছ। লোকে বলে ‘বেড় শিমুল’। কেন বেড়শিমূল বলে কেউ বলতে পারেনা। তবে অনুমান গাছের গোড়া বা শেকরের দিকের বেড় বা পরিধি বিশাল বলেই মনে হয় মানুষ ‘বেড়শিমূল’ শব্দটি দিয়ে গাছটির পরিচয় তুলে ধরে। গাছের বয়সও নিশ্চিত করে এলাকার কেউ বলতে পারে না। কেউ বলেন কয়েক’শ বছরের পুরনো। আবার অনেকেই হাজারবর্ষীও বলেন। নকলা উপজেলার এই শিমূল বৃক্ষটিকে, দু’হাজার আট কিংবা নয় সালে খ্যাতিমান, মননশীল, মেধাবী উপস্থাপক হানিফ সংকেত তার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
অন্তর্জালে বিভিন্ন তথ্য ঘাটাঘাটি করে যতদূর জানা গেছে অতিকায় সে বৃক্ষটি অবস্থিত আছে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা ইউনিয়নে। জায়গাটি একটি গ্রামীণ রাস্তার পাশে। ‘বুড়িমার আস্তানা’ বলেই গাছটির অবস্থানের পরিচিতি। গাছটির অবস্থান স্থলকে কেনো ডাকা হয় বুড়িমার আস্তানা বলে তারও কোন সদুত্তর কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তথ্যসূত্র ছাড়াই অনেকে বলেন, অজানা কালের কোন একসময়ে মনেহয় এখানে আশ্রয়হীনা কোনো বুড়ু মহিলা মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিলেন, সেই থেকেই মানুষ পরিচয় বের করেছে ‘বুড়িমার আস্তানা’ বলে। এসব তথ্য দিয়ে ‘দেশরূপান্তর’ নামক তরঙ্গপত্রে(ওয়েবসাইট) লিখেছেন রাণামিত্র। লিখেছেন ভ্রমণ লিখিয়ে এলিজা বিনতে এলাহি। তাদের লিখা ও অন্তর্জাল থেকেই এসমূহ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানাগেছে জমির মালিক একজন মোতাহার হোসেন। এই মোতাহের হোসেন উল্লিখিত দুই লেখক ও লেখিকাকে বলেছেন, তিনি তার বাবার আমল থেকে এখানে এই গাছ দেখে আসছেন। বিরাট শিমুলের বেড় বা প্রস্থই ৪২ গজ(১২৬ ফুট)! লম্বায় প্রায় ৮০ ফুট! এলিজা লিখেছেন- “কোনো একটি শাখা ধরে টানলেই পুরো গাছ নড়ে! এমন আরও একটি গাছ কাছেই ছিল, স্বাধীনতার আগে বিক্রির পর মালিকের কপালে দুর্ভোগ নামে। এরপর থেকে আর এই গাছের কোনো ক্ষতি কেউ করেন নি। এটেই তার বেঁচে থাকার কারণ। আশপাশের লোকরা একে ‘বুড়িমার আস্তানা’ ডাকেন।…”।
প্রবীণদের উদৃতি দিয়ে এলিজা লিখেছেন, ব্রিটিশরা গাছের উত্তরে নবাবের আমলে আস্তানা গেড়েছিল। প্রতি বৈশাখে গাছের বেদিতে, আশপাশের বিশাল ছায়াময় এলাকার নিচে বৈশাখী মেলা বসে।
এলিজা বিনতে এলাহি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার সহকারী অধ্যাপক ছিলেন ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯পর্যন্ত। এখন কি করছেন জানা যায়নি। তবে তিনি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। তিনি দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছুটে বেড়ান, প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন এবং লেখেন। গাছটিকে নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ভৌতিক, অতিভৌতিক, রহস্যময় নানা কাহিনীর কথা শুনা যায় যার ভিত্তি খুব দৃঢ় নয় বরং ব্যবসার স্বার্থে বানানো বলেই আমাদের মনে হয়েছে। কারণ, প্রতি বৈশাখে গাছের বেদিতে, আশপাশের বিশাল ছায়াময় এলাকার নিচে বৈশাখী মেলা বসে। কাহিনীগুলো বিশ্বাস হোক আর নাহোক বিশাল দৈত্যাকৃতির বৃক্ষটি যে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এটি নিখাঁদ সত্য।রএবং প্রতিবছর বোশেখের মেলা বসে গাছটিকে কেন্দ্র করে।
|