মুক্তকথা প্রবন্ধ।। ‘লণ্ডন’! বহু দেশের বহু মানুষের স্বপ্নের শহর। আর হবেই বা না কেনো। কি নেই এখানে। মানব চাহিদার সবকিছু এখানে ঝলমল করে বিপণিকেন্দ্রগুলিতে। কত দেশের কত নমুনার মানুষজন এখানে নিত্য সাজিয়ে বসে তাদের পসরা নিয়ে। প্রেমিকের অন্তরে প্রাণাধিক প্রেমিকার যে স্থান থাকে, মানুষের মনে লণ্ডনের স্থান অনেকটা তাই! তাকেও অনেক সময় ম্লান করে দিয়ে এগিয়ে যায় লণ্ডন!
শব্দটি কোথা থেকে আসলো সে নিয়ে কত যে খোঁজাখুঁজি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তার কোন হিসেব দেয়া এখানে সম্ভব নয়। সবার জানার মধ্যে যা পাওয়া গেছে তা হলো, খুব সংক্ষেপে বলা য়ায় যে খৃষ্টীয় প্রথম শতকে ‘লণ্ডন’ শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় লেটিন শব্দভঙ্গির নমুনায়। যা ওই সময়ে ব্যবহার হতে পাওয়া গেছে “লণ্ডিনিয়াম”(Londinium) এ উচ্চারণের নমুনায়। শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় ও মূল-ব্যূৎপত্তি বিষয়ক শাস্ত্র(Etymology) ঘেঁটে কোথায়ও এর বেশী কিছু পাওয়া যায় না। খৃষ্টীয় দিনপঞ্জিকার প্রথম শতকে এই “Londinium” ছিল টেমস নদীর তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি ব্যবসা কেন্দ্র। এই অঞ্চল তখন শাসন করতো রোমানরা।
(The name of London is derived from a word first attested, in Latinised form, as Londinium. By the first century CE, this was a commercial centre in Roman Britain. The etymology of the name is uncertain.)[তথ্য সূত্র ইন্টারনেট]
সেই একই “লণ্ডিনিয়াম” লণ্ডন হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। বদলে গেছে সব। সেই প্রাচীন লণ্ডিনিয়াম এখন আর নেই। ফাঁসী দিয়ে, চিতার আগুনে দাহ করে, বোমার আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে হত্যা করা হয়েছে। লণ্ডিনিয়াম মরে গিয়ে বদলে গিয়ে সন্তানের নতুন এক পরিচয়ে লণ্ডন নাম ধারণ করে টিকে আছে মানব সভ্যতার বদলে যাওয়ার বেদনা বিধুর স্মৃতি বুকে নিয়ে। এটি বিশ্বের প্রধানতম আর্থ-বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী শহরগুলির একটি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে টেমস নদীর উভয় তীর ঘিরে।
১৭শ শতক থেকে আজ পর্যন্ত লন্ডন ইউরোপের বৃহত্তম শহর। লন্ডনের চেহারা অংশত তার অতীত দ্বারা সংজ্ঞায়িত, কেননা শহরের প্রধান প্রধান ভবন ও স্থাপনাগুলি লোকালয়টির ২০০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে।
এখানে সংঘটিত হয়েছে ইতিহাসের বহু মর্মান্তিক ঘটনা। আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে লৌহ করাতে মানুষকে দ্বিখণ্ডিত করে শাস্তির লোমহর্ষক ঘটনা, ফাঁসী কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যাসহ দু’দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ভয়বহতার এক বুক হাহাকার নিয়ে আজো লণ্ডন চলছে নিজের রূপবৈচিত্রকে টিকিয়ে রেখে। এই চলার পথে কিন্তু লন্ডনের নব্য একটি চেহারাও ফুটে উঠেছে যা বহুজাতিক মিশ্রণের একটি ফল। নতুন এই লন্ডন সর্বশেষ আধুনিকতাকে সাথে নিয়ে চলছে শ্বাশ্বত কালের নাও বেয়ে। চলার পথের বাঁকে বাঁকে বদলাচ্ছে তার রূপমাধুর্য্য। এ চলার শেষ নেই। লিখেছেন- হারুনূর রশীদ, লণ্ডন সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০