আসল নাম দেওয়ান হামজা চৌধুরী। হামজা নামেই ফুটবল জগতে সমধিক পরিচিত। এবারের ইংলিশ এফএ কাপ জিতে ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে মাঠ ঘুরলেন। মহা খুশীর ঈদের সময় গাজায় ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনীদের সাথে একাত্মতা জানানোর প্রতীক স্বরূপ এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন হামজা। তার এ প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন সারা বিশ্বে।
হামজা চৌধুরীর বাপ-দাদার ভিটে বাংলাদেশের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। তাঁর বাবা দেওয়ান গোলাম মোর্শেদ চৌধুরী এবং মা রাফিয়া চৌধুরী। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে তিনিই সবার বড়।
স্থির নিশ্চিত যে, আদি নিবাস হবিগঞ্জ বলেই হবিগঞ্জের বহু পত্র-পত্রিকা হামজা চৌধুরীকে নিয়ে খুব রসিয়ে লিখেছে। আর একজন বাংলাদেশী বলেই লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীকে নিয়ে গর্ব বাংলাদেশী ফুটবল সমর্থকদেরও কম ছিল না।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ বিজয়ী ছিল চেলসি। ক’দিন আগে ম্যানচেষ্টার সিটিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল তারা। এফএ কাপের চূড়ান্ত খেলায় তাই চেলসি ছিল প্রত্যাশিত বিজয়ী। কিন্তু চেলসির এ গর্বগৌরবকে ধুলিস্যাত করে এফএ কাপের শিরোপা জিতে নিলো লেস্টার সিটি। সবই কেমন যেনো কাকতালিয়ভাবে ঘটে গিয়েছিল চূড়ান্ত খেলার ওই দিনে।
ওয়েম্বলিতে শনিবার রাতে ২০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ইউরি তাইলিমানসের গোলে চেলসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এফএ কাপের শিরোপা জিতেছে লেস্টার সিটি। চূড়ান্ত খেলার শেষে যখন উইম্বলিতে চলছে লেস্টার সিটির ট্রফি উৎসব, ল্যাপ অব অনার দিয়ে, তখন সবার দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত হামজা চৌধুরী। ফিলিস্তিনী জনগনের উপর ইসরাইলের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে মূখর হয়ে উঠলেন তিনি। পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনী জনগনের উপর ইসরাইলের বর্বরতা, বোমারু বিমান দিয়ে জনবসতির উপর হামলা, ঈদ এর আনন্দ মাটি করে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ফিলিস্তিন জনগনের পাশে দাঁড়াতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ল্যাপ অব অনার দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে হামজা চৌধুরীর ছবি।
ফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন মাত্র ১০ মিনিটের জন্য। এ সময়ের মধ্যে চমকজাগানো কিছু দেখানোর বা করার সুযোগতো খুবই অল্প থাকে। তেমন কিছু করার সুযোগও পাননি। কিন্তু খেলা শেষে হামজাই সকলের আগ্রহের মানুষ হয়ে উঠেন। মানবতাবাদী মানুষের হৃদয়মন জয় করে নেন তিনি। হামজার এ ভূমিকায় প্রশংসার ফুল দেখিয়ে প্রথম আলো লিখেছে- অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজের অবস্থান থেকে প্রতিবাদী হয়ে বার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলি দখলদারীত্বকে—ফিলিস্তিনে তারা যা করছে, সেটি নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ। মানবিকতার অপমান। হামজার বক্তব্য খুবই পরিষ্কার, ‘আমি ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমার দোয়া ও হৃদয় রয়েছে তাদের সঙ্গে।’
কীভাবে তাঁর মাথায় এল ম্যাচ শেষে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনাটা— হামজা বলেছেন প্রথম আলোকে। ‘আমি খেলার শুরুতে গ্যালারিতে এক ব্যক্তির হাতে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা দেখি। তখনই আমার মাথায় পরিকল্পনা আসে খেলায় যদি আমরা জিতি, তাহলে সেটি ওড়াব। খেলা শেষে আমি স্টেডিয়ামের একজন নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে সেই পতাকা আনিয়ে নিই।’
এ ঘটনায় আপ্লুত ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাজ্যে দায়িত্ব পালনকারী ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত এরই মধ্যে হামজাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন গোটা ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। সে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এফএ কাপ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার জন্য হামজা চৌধুরী ও ওয়েসলে ফোফানাকে ফিলিস্তিন সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
|