শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের চিরচেনা মধুময় স্মৃতি বিজড়িত সেই কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি ৫দশক পর অবশেষে চির বিদায় নিল। আজ দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় গাছটি আস্তে আস্তে হেলে পড়ে। এসময় বিদ্যালয়ে চলছিল অর্ধবার্ষিকী পরিক্ষা। এতে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেন।
বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের এই কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটির সাথে রয়েছে লাখো শিক্ষার্থীর মধুর স্মৃতি। রয়েছে অনেক শিক্ষাগুরুর বলা না বলা অনেক স্মৃতি।
দীর্ঘ ৫ দশকের অধিককালের স্মৃতি বহন করে অবশেষে পাশের বিদ্যালয় ভবনটির কোল ঘেঁষে নুয়ে পড়লো আমাদের আত্মজ কৃষ্ণচূড়া গাছটি। যে ভবনটির সাথে কৃষ্ণচূড়াটির সুখে দুঃখে সখ্যতা ছিল প্রায় অর্ধ শতাব্দীর, ভবনে যারা অবস্থান করতেন বা আসাযাওয়া করতেন, কারোরই নজর এড়ায়নি প্রিয় এই গাছটি। সুশীতল ছায়ায় ভবনের সকল কিছুকে আপন করে নিত মূহুর্তে।
জীবনের শেষ মূহুর্তে আঁচড়ে পরলো সেই ভবনেরই কোল ঘেঁষে। ভবনটিও আপনজনকেই যেন কোলে টেনে নিয়েছে। এই দৃশ্যের যখন সূত্রপাত হলো, সেসময় নিশ্চয়ই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনারও সূত্রপাত হতো। অথচ কোন অঘটনই ঘটেনি। কারণ কালের সাক্ষী বৃক্ষটি নুয়ে পড়ার জন্য নিরাপদ সময়টিই যেন বেছে নিয়েছে। জনমানুষ বা ভবন কোন কিছুরই সামন্যতম ক্ষতি হয় নি।
যাদের সংস্পর্শে এবং পরম আদরযত্নে লালিত হয়ে বেড়ে উঠেছিলো গাছটি তাদের অনেকেই আজ পৃথিবীতে নেই। পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের কর্মকান্ডের সাথে সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছটিও যেন দ্বায়িত্ব নিয়েছিলো শীতল ছায়া আর সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়ার। প্রাকৃতিক অনেক ঝড়ঝাপটা, মানবসৃষ্ট অনভিপ্রেত কিছু ঘটনাও ছিল বৃক্ষটি ঘিরে।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের অন্যতম শিক্ষাগুরু লেখক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, প্রশাসনিক ভবনের সামনের এই কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষগুলীর সাথে ছিল আমাদের আত্মিক সম্পর্ক। অনেক স্মৃতি রয়েছে এই কৃষ্ণচূড়ার সাথে। সত্যিই খারাপ লাগছে এই গাছটির উপড়ে পড়ার সংবাদটি শুনে।
ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী জানান, দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় গাছটি আস্তে আস্তে হেলে পড়ে। এসময় বিদ্যালয়ে চলছিল অর্ধবার্ষিকী পরিক্ষা। এতে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজল কলি বলেন, শুনে অবাক হয়ে গেলাম! কোন বৃষ্টি ছিলো না, ছিলো না কোন ঝড় তুফান। আজ সবাই পরীক্ষার ডিউটি দিচ্ছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম ৫ দশকের পুরোনো সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটি আস্তে করে ভূপাতিত হয়ে গেছে। মনে হলো দীর্ঘ দিনের স্বাক্ষী এই গাছটি নিজের ইচ্ছেই বিদায় নিলো। কারোর কোন ক্ষতি করেনি, কোন কিছুর ক্ষতিই হয়নি। সবাই একে একে এসে দেখলাম, সবারই মনটা কেমন যেন বিষাদে ভরে গেলো।