আব্দুল ওয়াদুদ।। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর প্লাবনে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার প্রায় ২লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আরো প্রায় ৬ কোটি টাকার। মনুর পানি গত বৃহস্পতিবার কিছুটা বেড়ে গেলেও শুক্রবার পুনঃরায় কিছুটা কমেছে। কুশিয়ারা নদীতে পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানির এ নমুনার উঠা-নামার এই অন্তলীলায় মৌলভীবাজার শহরের মানুষ নতুন করে আবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফি বছরের এ বন্যা সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা হয় সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গের সাথে।
আলোচনা হয় জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দা সানজিদা শারমিনের সাথে। তিনি বলেন, মৌলভী বাজারে ১৯৮৪ সালের সেই ভয়াল বন্যার কথা শুনেছি আব্বা, প্রয়াত সমাজকল্যানমন্ত্রীর কাছ থেকে। এবারের বন্যার সময়ে আমি শশুর বাড়ির লক্ষীপুরে ছিলাম। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক মৌলভীবাজার আসি। মিডিয়া ও অন্যান্যদের কাছ থেকে শুনেছি যে ভারতের কৈলাশহরে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা নাই তাই মৌলভীবাজারবাসীর আতঙ্কিত হবার কিছু নাই। এর পরেই উজানের ঢলে মনু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গভীর রাতে বাঁধের বাড়ইকোনায় ভেঙ্গে ভয়ার্ত মানুষজনকে আতঙ্কিত করে বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে। এছাড়াও বড়হাট, ধরকাপন ও মনুমুখ এলাকা প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষের গবাদিপশুসহ মূল্যবান মালামাল খুয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের দুষারোপ করে তিনি বলেন, তাৎক্ষনিক বন্যার আগাম পূর্বাভাস দিলে শহরের বাসা-বাড়ির মানুষের এত বেশী ক্ষয়ক্ষতি হতোনা। আমার আব্বা পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় মানুষের জন্য কাজ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। পরবর্তীতে পৌরসভায় এসে কেউ তেমন একটা কাজ করছেননা। মনু নদী খনন ও বাঁধ নির্মানে যেসব প্রস্তাবনা লেখা হয়েছে তা ঢাকায় আলোচনা করে প্রয়োজনে সুন্দর একখানা প্রস্তাবনা পেশকরা দরকার।
তিনি স্থানীয় সংসদ সৈয়দা সায়রা মহসীন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও পৌরসভা মেয়র ফজলুর রহমান, এ তিনজনকে সমন্বিতভাবে এসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মনু নদী খননে টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জানিনা হয়েছে কি না, তবে টেন্ডার হলে এই ভরা বর্ষায় কাজ করা যাবেনা। খনন শীত মৌসুমে করতে হবে।
উল্লেখ্য, গেল ভয়াল বন্যায় বারইকোনা বাঁধ ভেঙ্গে বড়হাট এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে মোস্তফাপুর ইউনিয়নসহ শহরের বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। সম্প্রতি শহরের অদুরে বারইকোনায় মনু নদীর যে বাঁধ ভেঙ্গেছিল ওই বাঁধে আব্দুল হাই নামের একব্যক্তি টিনচালার ঘরে বাস করতো। সেই ভয়াল রাতে তার পুরো ঘর ভেঙ্গে তছনছ হয়। এসময় তার একটি গরু পানিতে হারিয়ে যায়, সাথে আরো নগদ টাকা ভেসে যায় ভয়াল শ্রোতধারায়।
বাংলাদেশ কমিউস্টি পার্টির সাবেক কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনু এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আবু জাফর বলেন, মনু নদীর স্বল্পম্যাদী সমস্যার সমাধান হলো দুই পাড়ে বাঁধ মজবুত করে স্থাপন। স্থায়ী সমাধানের কথা উল্যেখ করে তিনি বলেন, নদীটি যদি উৎসমুখ থেকে কুশিয়ারা হয়ে মেঘনা পর্যন্ত খনন করা হয় তবে বন্যা থেকে রক্ষা পাবে নদী পাড়ের মানুষ। নদী খননের টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সাময়ীক খননের টেন্ডার হতে পারে। পুরো নদী খনন ব্যয়বহুল এবং এটা নদী বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষন করবেন।
এদিকে মনু নদী খনন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করেছেন আপ্পান আলী নামে স্থানীয় এক আ’লীগ নেতা। তিনি বলেছেন, “মৌলভী বাজার শহরসহ মনুনদীর উভয় কিনারায় প্রতিরক্ষা বাঁধ যেমন নিরাপদ নয় তেমনি ব্যয়বহুলও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, মনু ব্যারেজ হতে গতিপরিবর্তন করে কাউয়াদিঘী হয়ে কুশিয়ারায় পানি নিয়ে যাবার জন্য নদী কাটা হলে ব্যয় যেমন কম হবে তেমনি ভবিষ্যত হবে নিরাপদ”।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শুক্রবার ৬ জলাই বলেন, মনু নদীতে বিপদসীমার নীচ ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩৮টি ভাঙ্গনকবলিত যায়গা আমরা চিহ্নিত করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরছের একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ, ঢাকা এর উপ-সহকারি ফরিদুল এরশাদ বলেছেন, মনু নদীর নাব্যতা দেখে দেখে খনন করতে মাস দেড়েক আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়েছে। মনুর যেখানে নাব্যতা সংকট ও ভরাট হয়েছে সেখানে ড্রেজিং করা হবে। তবে এখনতো বর্ষাকাল নদী শান্ত হলে খননের প্রক্রিয়া শুরু হবে।