মৌলভীবাজার সংবাদদাতা।। পর্যটন জেলা, চায়ের রাজধানীখ্যাত ও দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, কুশিয়ারা ও মনুনদী অধ্যুষিত, মৌলভীবাজার জেলা। সুদীর্ঘ অতীত থেকে নদী পথে যাতায়াতসহ ব্যবসা-বানিজ্য ছিল এ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বুনিয়াদ। নদীর সাথে ঘেষে থাকা এ জেলায় ব্যবসায়িক কারণে এই গত শতাব্দীতেও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সাথে নৌ পথে ছিল নিয়মিত যোগাযোগ। সুদূর ঢাকা থেকে নৌপথে ভৈরব-আজমীর হয়ে সওদাগরী বজরা এসে ভিড়তো মনুর মুখ থেকে মলইবাজার হয়ে বর্তমান ভারতের কৈলাশহর পর্যন্ত। অনাদি কালের নির্মম চক্রে মৌলভীবাজারের সে সুদিন হারিয়ে গেলেও আজো বেঁচে আছে কুমারী কুশিয়ারা, মনুনদীসহ আরো অনেক নদী। ভরাট হয়ে যাওয়ায় মনুনদী দিয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল।
সম্প্রতি মনুনদী খনন করতে প্রায় ২৩কোটি টাকা সরকার বরাদ্ধ দিলেও বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারনে খনন কার্যক্রম সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা জানিয়েছেন নদীর যেসব চড় কেটে খনন করার কথা সেগুলো বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়াতে খনন সম্ভব হচ্ছেনা। আগামী শুষ্ক মৌসুমে খনন কাজ শুরু হবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবতী শুক্রবার, ৫ই এপ্রিল মুক্তকথাকে জানান, মনুনদী খননে টেন্ডার হয়েছে। ৩টি প্যাকেজে ঢাকার ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। এখন শুধু চুক্তি ফর্মালিটি চলছে। তবে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়াতে চড় কাটতে সমস্যা হচ্ছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে খনন কাজ হবে। তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের নবেম্বর পর্যন্ত থাকা এ মেয়াদের কাজগুলি ঢাকার ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান করছে। দুটি প্যাকেজের মধ্যে সদর উপজেলার “শাখা ভরাট” এর ৮ কিলোমিটার যায়গার মধ্যে ৬ কিলোমিটার খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জুড়ী উপজেলায় প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে “মরা জুড়ী” খনন কাজ চলমান আছে। সবচেয়ে বড় প্যাকেজটি প্রক্রিয়াধিন।
এদিকে আগাম বন্যায় মনুনদী’র কেমন হাল হবে তা নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন মৌলভীবাজার শহরের মনুর গ্রাসে আক্রান্ত সাধারণ মানুষেরা। তারা বলেছেন, সিংহভাগ যায়গা ভরাট হয়ে যাওয়াতে নদীর প্রবল শ্রোতের শিকার হয় জেলা শহরের পশ্চিমবাজার, বড়হাটসহ আরো অনেক গ্রাম। নদীটি খনন করা না হলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এছাড়াও শহরের মানুষ বহু আতঙ্কে কেটেছেন গেল বছরটি। গেল বছর উজানের ঢলে মনুনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গভীর রাতে মৌলভীবাজার শহরের মনুনদী বাঁধের বাড়ইকোনায় ভেঙ্গে বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে। ভীষণ আতঙ্কে দিন-রাত কাটাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এছাড়াও বড়হাট, ধরকাপন ও মনুমুখ এলাকা প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষের গবাদি পশুসহ বহুমূল্যবান মালামাল বিনষ্ট হয়েছিল।